মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের স্থায়ী নিবাস ব্যাংকক

দুই মামলা দায়ের

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের স্থায়ী নিবাস ব্যাংকক

রাজধানীর গুলশানে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসায় বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। গতকাল বিকালে গুলশান থানায় মামলা দুটি দায়ের করেন অধিদফতরের পরিদর্শক এস এস শামসুল কবির এবং এসআই আতাউর রহমান। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো উত্তরের সহকারী পরিচালক খোরশিদ আলম জানান, দুই মামলায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ভাতিজা ওমর মোহাম্মদ ভাই এবং দুই কেয়ারটেকার নবীন ও পারভেজকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ওমর মোহাম্মদ ভাই পলাতক রয়েছেন। বাকি দুজনকে ঘটনার দিনই গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, আজিজ মোহাম্মদ ভাই দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে রয়েছেন। তাই তাকে মামলার এজাহারে আসামি করা হয়নি। তবে তদন্তে ও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে তার নাম আসলে তাকেও আইনের আওতায় নেওয়া হবে। জানা গেছে, বাংলাদেশের এক সময়ের আলোচিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই এখন ব্যাংককে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। সঙ্গে আছেন স্ত্রী নওরীন ও সন্তানেরা। সেখানে তিনি পর্যটন শিল্পের ব্যবসা করছেন। ইন্দোনেশিয়ার বালি, সিঙ্গাপুর, দুবাই ও থাইল্যান্ডে রয়েছে তার বিশাল রিসোর্ট। ব্যবসার প্রয়োজনে এসব দেশে ঘন ঘন যাতায়াত করেন তিনি। থাইল্যান্ডে বসবাস করলেও ইন্দোনেশিয়া, দুবাই, সিঙ্গাপুরেও তার বাড়ি রয়েছে। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, থাইল্যান্ডে গিয়ে তিনি প্রথমে ওঠেন পাতায়ার একটি রিসোর্টে। সেখান  থেকেই তিনি দেশের খবর রাখতেন। দেশে অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিউটিউক্যাল, এমবি ফিল্ম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই। এসব ব্যবসা তার স্ত্রী, শ্যালক দেখাশোনা করেন। ওয়ান-ইলেভেনের আগের দিন ২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি দেশ ছাড়েন রহস্যময় এ ব্যবসায়ী। দীর্ঘ প্রায় ১৩ বছর দেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন থাকলেও বিতর্ক তার পিছু ছাড়ছে না। দেশ ছাড়ার পর তিনি আলোচনায় আসেন তার ভাগ্নে আমিন হুদা গ্রেফতারের পর। ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর রাজধানীর গুলশানে তার ভাগ্নে আমিন হুদা গ্রেফতার হন। র‌্যাব তার দেওয়া তথ্য মতে একটি ইয়াবা তৈরির কারখানার সন্ধ্যান পায়। এই মামলায় ৭৯ বছরের সাজা হয় আমিন হুদার। আমিন হুদা গ্রেফতারের সময় সামনে চলে আসে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের নাম। এবার বাসায় মদ উদ্ধারের ঘটনায় সামনে চলে আসে তার নাম। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বলছে, এসব বিদেশি মদ আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ভাতিজা ওমর মোহাম্মদ ভাইয়ের। একবার ভাগ্নে আমিন হুদা, আরেকবার ভাতিজা ওমর মোহাম্মদের কারণে তার নাম সামনে চলে আসে। গত রবিবার রাতে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের গুলশান-২-এর ৫৭ নম্বর রোডের ১১/এ ও ও ১১/বি নম্বর বাসায় অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। অভিযানে মিনি বারের সন্ধান পায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এ সময় এখান থেকে ৩৯০ বোতল ছোট-বড় মদের বোতল, ২০০ গ্রাম গাঁজা, এক কেজি সিসার সরঞ্জাম, ১৬ হাজার পিস ক্যাসিনো খেলার কয়েনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। তবে এই ভবনে থাকা আজিজ মোহাম্মদের ভাতিজা ওমর অভিযানের আগেই পালিয়ে যান। ওই ভবনে থাকা আজিজের ছোট ভাই রাজা মোহাম্ম?দ ভাইয়ের বাসা থে?কে আট বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। পরে ভবনের কেয়ারটেকার নবীন ও পারভেজকে আটক করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, পরিবার নিয়ে ব্যাংককে থাকলেও ইন্দোনেশিয়ার বালি, সিঙ্গাপুর, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ান আজিজ ভাই। নানা জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন দেশে না ফেরা ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের জীবন যাপনে আসেনি কোনো পরিবর্তন। পরিবার-পরিজন নিয়ে উচ্ছলতার সঙ্গেই কাটছে তার প্রবাসজীবন। আজিজ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা থেকে মাঝে মধ্যেই অনেক নামি-দামি মডেল ও তারকা পাড়ি জমান ব্যাংককে। আড্ডা দেন আজিজ ভাইয়ের সঙ্গে। আড্ডায় উঠে আসে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, চলচ্চিত্র জগৎসহ সবকিছুই। জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহের মৃত্যুতে আলোচনায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের নাম আসলেও মামলার আসামি হয়েছিলেন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী খুনে। তাকে অন্যতম আসামি করা হয়। সোহেল চৌধুরী খুন হন বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবে। গত রবিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত এ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে ভুলক্রমে লেখা হয় ঢাকা ক্লাবে। ‘ঢাকার একটি ক্লাবে’র স্থলে প্রকাশিত হয় ঢাকা ক্লাবে। প্রকৃতপক্ষে খুনের ঘটনাটি ঘটে বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে। 

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী খুন : ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাত ২টায় সিনেমার মতোই বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের গেটে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছিলেন ওই সময়ের রুপালি পর্দার সুদর্শন নায়ক সোহেল চৌধুরী। তার বুক ঝাঁঝরা হয় এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে। তাকে বাঁচানো যায়নি। সোহেল চৌধুরী খুনের খবর পরদিন সকালে রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়। শত শত মানুষ তাকে দেখতে ছুটে যান গুলশান থানা থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ পর্যন্ত। আলোচনায় আসে সেই সময়ের উচ্চবিত্তদের আনন্দ ক্লাব ‘ক্লাব ট্রাম্পস’। আলোচনায় আসেন আলোচিত-সমালোচিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই। সোহেল চৌধুরী হত্যাকান্ডে এই আলোচিত ব্যবসায়ীকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতারও করে। এ ছাড়াও এ হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের দুর্ধর্ষ সব সন্ত্রাসী। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের মতে, একটি ঘটনায় একসঙ্গে বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর অংশ নেওয়া ছিল বিরল ঘটনা। সোহেল চৌধুরী খুনের ঘটনা ছাড়া অন্য কোনো ঘটনায় এদের একসঙ্গে অপারেশন করতে দেখা যায়নি। তৎকালীন সময়ে ওই খুনের ঘটনাটি ছিল সবচেয়ে ব্যয়বহুল খুন। সোহেল চৌধুরী খুনের ঘটনাটি ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি। এ সময় গুলিতে সোহেল চৌধুরীর বন্ধু আবুল কালাম আজাদ (৩৫) এবং ট্রাম্পস ক্লাবের কর্মচারী নীরব (২৫) ও দাইয়ান (৩৫) আহত হন। গুলির ঘটনার পর পরই স্থানীয়রা আদনান সিদ্দিকী নামের এক সন্ত্রাসীকে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। অন্যরা পালিয়ে যায়। গুলির শব্দে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

দুই কেয়ারটেকার কারাগারে : আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের গুলশানের দুই বাসার কেয়ারকেটার নবীন ও পারভেজকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম হাবিবুর রহমান তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মহানগর আদালতের প্রসিকিউটর নাজমুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গুলশান থানায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ভাতিজা ওমর মোহাম্মদ ভাইসহ তার দুই বাসার কেয়ারটেকারকে আসামি করে দুটি মামলা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। মামলা নম্বর- ৩৪ ও ৩৫।

সর্বশেষ খবর