মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
বিএসএমএমইউ ব্রিফিং

খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে মাহবুবুল হক। তিনি বলেন, ‘সাত মাস ধরে তিনি আমাদের এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ সময়ের মধ্যে তার স্বাস্থ্যের কোনো অবনতি ঘটেনি।’ অন্যদিকে মেডিকেল বোর্ড প্রধান প্রফেসর ডা. জিলন মিয়া সরকার জানিয়েছেন, বরং ‘তিনি (খালেদা) ইচ্ছা করলে এখন বাড়িতে কিংবা যেখান থেকে এসেছেন সেখানে (কারাগার) গিয়েও চিকিৎসা নিতে পারেন।’ গতকাল দুপুরে হাসপাতালের ডা. হাফিজুর রহমান মিল্টন হলে এক সংবাদ সম্মেলনে বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার  এই স্থিতিশীলতার তথ্য জানান বিএসএমএমইউ পরিচালক। তার চিকিৎসা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের কারণে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ সময় খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধানসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘আমরা যদি বলি, সার্বিকভাবে তার (খালেদা জিয়া) ভর্তির সময় থেকে শুরু করে গত সাত মাসে অবস্থার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশ উন্নতি হয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থিতিশীল রয়েছে, কিন্তু তার অবস্থার কোনোভাবেই কোনো অবনতি ঘটেনি। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত তার চিকিৎসা ভালো হচ্ছে।’ বিএসএমএমইউর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ডা. জিলন মিয়া সরকার বলেন, ‘আমি গত পরশুও পৌনে এক ঘণ্টা ম্যাডামকে দেখেছি এই বোর্ডের আরও দুজন সদস্যকে নিয়ে। প্রায়ই আমি তাকে দেখি। ম্যাডাম তার চিকিৎসায় খুশি, খুব ইম্প্রেসিভ। তিনি সব সময় হাসি-খুশি অবস্থায় কথা বলেন। আপনারা বলতে পারেন সন্তুষ্ট কি-না। অবশ্যই সন্তুষ্ট। ম্যাডাম নিজেও সন্তুষ্ট। এখন ইচ্ছা করলে তিনি বাড়িতে গিয়ে কিংবা যেখান থেকে এসেছেন সেখানে গিয়েও চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে মেডিকেল বোর্ডের এই প্রধান বলেন, ‘জীবন-মৃত্যু তো আল্লাহর হাতে। তবে বেগম খালেদা জিয়ার জীবনহানির আশঙ্কা আমরা কখনো করি না। আমরা তাকে দেখছি, তার চিকিৎসার বিষয়ে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করছি না। আমরা সব ইথিকস মেনে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে নিয়মিত তাকে দেখছি।’ তিনি বলেন, ‘২৮ বছর ধরে তার রিউমাটিজ আর্থ্রাইটিসের সমস্যা। এটা ইনকিউরেবল, কোনো দিন ভালো হবে না। চিকিৎসায় রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। স্বাভাবিকভাবে চলতে-ফিরতে পারবেন। মূল কথা, তার এই চিকিৎসায় তিনিও সন্তুষ্ট, আমরাও সন্তুষ্ট।’ মেডিকেল বোর্ড প্রধান বলেন, ‘প্রতিদিনই বেগম খালেদা জিয়ার ব্লাডপ্রেসার, গ্লুকোজ, ইনসুলিন ইত্যাদি দেখা হচ্ছে। কাজেই বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ঠিকভাবেই চলছে, পরিবারের অভিযোগ সঠিক নয়। একটি শক্তিশালী মেডিকেল বোর্ড গঠন করে প্রতিনিয়ত তার চিকিৎসা চলছে। তবে বেগম খালেদা জিয়ার অনুমতি ছাড়া কখনো চিকিৎসকরা তার সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। আমাদের হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী, ভিজিটিং সময় সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। কিন্তু তিনি সব সময় দেখা করার জন্য দুপুর ২টার পরে অনুমতি দেন।’ ডা. জিলন মিয়া সরকার বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া খুবই আন্তরিক। সব সময় আমাদের সঙ্গে হাসি-খুশি ভাবে কথা বলেন। তার স্বাস্থ্য বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে আমাদের বলেন।’ তিনি বলেন, তার বাতজনিত সমস্যাসহ (ব্যথা) ছোটখাটো আরও কিছু সমস্যা আছে। একই সঙ্গে তার ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন তো আছেই। তিনটি ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য বুধবার তাকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তিনি এই ভ্যাকসিনগুলো দিতে রাজি হচ্ছেন না। আশা করি তিনি ভ্যাকসিনগুলো দিতে রাজি হবেন।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য প্রফেসর শাহানাজ আক্তার বলেন, ‘আমাদের দেশেই আধুনিক চিকিৎসা সম্ভব। আমাদের এখানে বিশ্বমানের অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। তাই তার চিকিৎসার জন্য বাইরে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরাই তার সঠিক চিকিৎসা দিতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া ১ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন তিনি হাঁটতে পারতেন না। এখনো তিনি হাঁটতে পারেন না। তবে অন্যের সহযোগিতায় তিনি হাঁটতে পারেন। তার চিকিৎসার বিষয়ে আমরা প্রতিনিয়ত কাউন্সেলিং করে আসছি। কাউন্সেলিং ছাড়া কোনো রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। চিকিৎসার বিষয়ে রোগীর আন্তরিকতার প্রয়োজন রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর