শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বড় চ্যালেঞ্জ মামলাজট

বিচার বিভাগ পৃথককরণের এক যুগ, বিচারাধীন মামলা বেড়েছে আড়াই গুণ

আরাফাত মুন্না

বড় চ্যালেঞ্জ মামলাজট

আজ ১ নভেম্বর, এক যুগপূর্ণ হচ্ছে বিচার বিভাগ পৃথককরণের। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী ২০০৭ সালের এই দিনে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা হয় বিচার বিভাগকে। ওই রায়ে বিচার বিভাগ পৃথককরণের লক্ষ্য পূরণে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ১২ দফা নির্দেশনা দিলেও তা এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। পৃথককরণের সময় দেশে সাড়ে ১৫ লাখ মামলার জট থাকলেও বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩৬ লাখে। এই পাহাড়সম মামলার জটকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিচার বিভাগ পৃথককরণ সংক্রান্ত মাসদার হোসেন মামলার রায়ে পৃথক সচিবালয়সহ সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া নির্দেশনাগুলো পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন জরুরি।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও মামলা জটকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মামলার দ্রুত বিচার ও নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অন্যতম একটি প্রতিবন্ধকতা হলো এজলাস সংকট। এজলাস স্বল্পতা দূর করে সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা ব্যবহারের মাধ্যমে বিচারকাজে গতিশীলতা আনতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া সরকার মামলা ব্যবস্থাপনার দিকেও বিশেষ নজর দিয়েছে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথককরণের সময় দেশের সব আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৭০ হাজার। বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৬ লাখেরও বেশি রয়েছে। সর্বশেষ গত ৩০ জুন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, দেশের উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ ও হাই কোর্ট বিভাগ এবং অধস্তন আদালতে সর্বমোট বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ২৬৩টি (গত কাল পর্যন্ত মোট বিচারাধীন মামলা সংখ্যা ৩৬ লাখের বেশি)। এর মধ্যে আপিল বিভাগে ২১ হাজার ৪১০টি, হাই কোর্ট বিভাগে ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬২টি মামলা বিচারাধীন। অধস্তন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ২৯১টি মামলা। সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আপিল বিভাগে ১৪ হাজার ৩৩৮টি দেওয়ানি, ৬ হাজার ৯০৭টি ফৌজদারি এবং অন্যান্য ১৬৫টি মামলা রয়েছে। হাই কোর্ট বিভাগে দেওয়ানি মামলা রয়েছে ৯৬ হাজার ৪৫০টি, ফৌজদারি ২ লাখ ৯৭ হাজার ৫০৯টি এবং রিট ও অন্যান্য ৯৪ হাজার ৬০৩টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া অধস্তন আদালতে ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৯০৫টি দেওয়ানি এবং ২০ লাখ ৫৯ হাজার ৫৯০টি ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এক যুগ আগে যে বিষয়টি নিয়ে বিচার বিভাগ পৃথক হয়েছিল, সেই একই সমস্যা এখনো রয়েগেছে। মামলাজট যেন কমানোই যাচ্ছে না। তিনি বলেন, মামলাজট কমাতে হলে সবার আগে আপস যোগ্য বিরোধগুলো বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে। ফৌজদারি মামলায় সাক্ষী শুরু হলে মুলতবি ছাড়া শুনানি করতে হবে। এ ছাড়া বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় গঠনও জরুরি বলে মনে করেন তিনি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার বিচার বিভাগে তার আধিপত্য ধরে রাখার ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। এ জন্য যে উদ্দেশ্যে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা হয়েছিল, তার সুফল মিলছে না।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমানে মামলাজট একটা বড় সমস্যা। মামলাজট কমাতে হলে আরও বেশি সংখ্যক বিচারক নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি এজলাস বাড়াতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর