শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

যেভাবে দস্যুমুক্ত সুন্দরবন

আত্মসমর্পণের এক বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক ও বাগেরহাট প্রতিনিধি

যেভাবে দস্যুমুক্ত সুন্দরবন

২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনের বনদস্যুরা তাদের অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে -ফাইল ফটো

সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত ঘোষণার এক বছর পূর্তি আজ। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন। সুন্দরবনে একসময়ের সক্রিয় আত্মসমর্পণ করা ৩২টি বাহিনীর মধ্যে সর্বশেষ ৫টি বাহিনীর ৭০ জন বনদস্যুর আত্মসমর্পণের মধ্যস্থতায় ছিল দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ  টোয়েন্টিফোর টেলিভিশন। গত বছর সর্বশেষ এই আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৪০ বছর পর গোটা সুন্দরবন বনদস্যুমুক্ত হয়। এসব বনদস্যু বাহিনী আত্মসমর্পণের পর এখন সুন্দরবনের বাতাসে নেই বারুদের গন্ধ। শোনা যায়না গুলির শব্দ। একসময়ে সুন্দরবন দাপিয়ে বেড়ানো দন্ডমুন্ডের কর্তা বনদস্যু বাহিনীগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম র‌্যাবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণে এগিয়ে আসে মাস্টার বাহিনী প্রধান মোস্তফা শেখ ওরফে কাদের মাস্টারসহ ৯ বনদস্যু। ২০১৫ সালের ৩১ মে তিনি বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের ফুয়েল জেটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে ৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দিয়ে তার দলসহ আত্মসমর্পণ করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে বনদস্যু মানজার বাহিনী, মজিদ বাহিনী, বড় ভাই বাহিনী, ভাই-ভাই বাহিনী, সুমন বাহিনী, দাদা ভাই বাহিনী, হান্নান বাহিনী, আমির বাহিনী, মুন্না বাহিনী, ছোট শামছু বাহিনী, মানজু বাহিনী, সূর্য বাহিনীসহ ২৬টি বাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পণ করেন। সর্বশেষ গত বছরের ১ নভেম্বর বাগেরহাট স্টেডিয়ামে সাত্তার বাহিনী, শরিফ বাহিনী, সিদ্দিক বাহিনী, আল-আমিন বাহিনী, আনারুল বাহিনী ও তৈয়ব বাহিনীর বনদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণকৃত ৩২টি বাহিনী প্রধানসহ সর্বমোট ৩২৮ বনদস্যু সদস্য আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। তারা র‌্যাবের হাতে তুলে দেন ৪৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩৩ হাজার ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গত বছরের ১ নভেম্বর সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণার পর ম্যানগ্রোভ এই বনে এখন বইছে শান্তির সুবাতাস। বনদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড বনের জীববৈচিত্র্য। বন্ধ হয়েছে জেলে-বনজীবীদের মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ ও দেশি-বিদেশি  চোরাকারবারিদের চাহিদামতো হরিণ, বাঘ-কুমির শিকার ও পাচার। এতে পৃথিবীর বৃহত্তম লবণাক্ত জলাভূমির রয়েল বেঙ্গল টাইগার-কুমির ও কিংকোবরাও হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার জানান, সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত ঘোষণার পর থেকে জেলে, মাওয়ালি, বাওয়ালি, বনজীবী, বন্যপ্রাণী এখন নিরাপদ। দর্শনার্থী-পর্যবেক্ষক, জাহাজ বণিকরা নির্বিঘ্নে নির্ভয়ে যাতায়াত করছে। এর ফলে সুন্দরবন কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক গতিশীলতার ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।

আজকের কর্মসূচি : এ দিনটি উদযাপন উপলক্ষে আজ সকালে বাগেরহাট জেলা স্টেডিয়ামে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে র‌্যাব। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, র‌্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকুসহ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। একই সঙ্গে র‌্যাবের দুঃসাহসিক ও বুদ্ধিদীপ্ত অভিযান নিয়ে নির্মিত ‘অপারেশন সুন্দরবন’ চলচ্চিত্রের শিল্পী ও কলাকুশলীরাও উপস্থিত থাকবেন।

সর্বশেষ খবর