সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সাংবিধানিক অনেক নির্দেশনা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি

সংবিধান দিবস আজ

আরাফাত মুন্না

আজ ৪ নভেম্বর। সংবিধান প্রণয়ন দিবস। ১৯৭২ সালের এই দিনে প্রণীত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান। আর একই বছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয় এটি। গত ৪৭ বছরে নানা প্রেক্ষাপটে সংবিধান সংশোধন হয়েছে ১৬ বার। সংবিধানের চার মূলনীতির ওপরও আঘাত এসেছে বারবার। এদিকে সংবিধানে উল্লেখ থাকা সুনির্দিষ্ট অনেক আইন প্রণয়নের নির্দেশনা এখনো বাস্তবরূপ নেয়নি। আইন করার নির্দেশনা থাকলেও উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ, নির্বাচন কমিশন গঠন, ন্যায়পাল নিয়োগ চলছে নীতিমালা দিয়েই।

আইনজ্ঞরা বলছেন, স্বাধীনতার পর থেকে সব সরকারের আমলেই সংবিধানে উল্লিখিত কিছু কিছু আইনের শূন্যতা দূর করতে নানা ধরনের দাবি ওঠে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা খর্ব হওয়ার শঙ্কায় কোনো সরকারই আইনগুলো প্রণয়ন করছে না। তা ছাড়া জনগণও সংবিধানের প্রকৃত উদ্দেশ্য আত্মস্থ করতে পারেনি। এ সংকট নিরসনে সংবিধান সংশোধনে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা যেতে পারে বলে মনে করেন অনেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের ১(গ) অনুচ্ছেদে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের জন্য যোগ্যতর ব্যক্তি বাছাইয়ে আইন প্রণয়নের কথা বলা আছে। এ প্রেক্ষাপটে দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২০১২ সালের ৩ জুলাই সংসদ ও ২০১৪ সালের ১৯ আগস্ট আইন কমিশন থেকেও বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে আইন প্রণয়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের একাধিক রায়েও বিচারপতি নিয়োগে আইন প্রণয়নের জন্য কয়েক দফা নির্দেশনা রয়েছে। এরপরও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

অন্যদিকে সংবিধানের ৪৪(২) অনুচ্ছেদে বর্ণিত নিম্ন আদালতকে সংবিধান ও মৌলিক অধিকার প্রশ্নে শুনানির এখতিয়ার প্রদান, ৭৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ন্যায়পাল নিয়োগ, ১১৮(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগসহ বেশ কিছু আলোচিত বিষয়ে আইন প্রণয়নের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়গুলো নিয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ এখনো দেখা যায়নি। তবে কেউ কেউ বলেন, সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগ, নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে আইন না হলেও যে ভাবে নিয়োগ হচ্ছে, সেটা আইনের চেয়েও শক্তিশালী। জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংবিধানে এখন যেটা আছে তা অনেকাংশেই ঠিক আছে। কিছুটা বৈপরীত্যও রয়েছে। বিশেষ করে একই সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের সন্নিবেশ যে যৌক্তিক নয়, তা উচ্চ আদালতের রায়েও উঠে এসেছে। কিন্তু এটা এখনো সংবিধানে বহাল রয়েছে। তিনি বলেন, সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সংবিধানের চার মূল নীতির ওপর আঘাত হেনেছিলেন। নানভাবে সংবিধানকে কাটা ছেঁড়া করেছেন। তাদের কারণেই এখনো নানা ধরনের শূন্যতা রয়ে গেছে সংবিধানে। এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ প্রয়োজন। সংবিধানে উল্লিখিত আইনগুলো না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এগুলোর প্রয়োজনীয়তা ছিল বলেই সংবিধানে উল্লেখ আছে। তবে এর মধ্যে অনেক বিষয়ে এখন আইনের চেয়েও শক্তিশালী নীতিমালা হয়ে গেছে। তাই ওইসব আইন হওয়া এখন ততটা প্রয়োজনীয় না। বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাহাত্তরের মূল সংবিধান ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ ও সুন্দর সংবিধান। মূল সংবিধানে অনেক মূল্যবান দিকনির্দেশনা রয়েছে। যার মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের কথাও বলা আছে। যেমন উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ, নির্বাচন কমিশন গঠন, ন্যায়পাল নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে আইন প্রণয়নের কথা মূল সংবিধানেই বলা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য প্রতিটি সরকারই সেই নির্দেশনাগুলো উপেক্ষা করে গেছে। মুখে আইনের শাসনের কথা যতই বলা হোক না কেন, কাজে তার প্রতিফলন খুবই অল্প।

সর্বশেষ খবর