সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
অধ্যক্ষকে পুকুরে নিক্ষেপ

ব্যাপক বিক্ষোভ গ্রেফতার ৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে টেনে-হিঁচড়ে পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় আটক ২৬ জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এর আগে অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় নগরীর চন্দ্রিমা থানায় মামলা হয়েছে। সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৫০ জনকে আসামি করে বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন অধ্যক্ষ নিজে। পুকুরে ফেলার ঘটনা তদন্তে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। অন্যদিকে অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটিতে বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে বিক্ষোভ করেন। এ সময় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তারা। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আটক ২৬ ছাত্রের মধ্যে পাঁচজনকে অধ্যক্ষের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। নগরীর চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. গোলাম মোস্তফা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শনিবার রাত থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে পলিটেকনিকের ২৬ ছাত্রকে আটক করা হয়। এদের মধ্য থেকে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করে পাঁচজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গ্রেফতার আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। মিডটার্ম পরীক্ষায় ফেল এবং ক্লাসে অনুপস্থিত থাকা পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভকে ফাইনাল পরীক্ষায় সুযোগ দেওয়ার জন্য শনিবার দুপুরে নেতা-কর্মীরা অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহমেদের কার্যালয়ে গিয়ে তাকে চাপ দেন। এ নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে তাদের তর্ক-বিতর্ক হয়। এর জের ধরে দুপুরে ছাত্রলীগ নেতা সৌরভ এবং তার সহযোগীরা অধ্যক্ষকে টেনে-হিঁচড়ে ক্যাম্পাসের ভিতরের একটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেন। অধ্যক্ষ তখন মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে নিজ কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, অন্তত ১০ জন তরুণ অধ্যক্ষকে দ্রুতগতিতে পুকুরের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ অধ্যক্ষের হাত ধরে টানছিলেন আবার কেউ পেছন থেকে ধাক্কা দিচ্ছিলেন। মুহূর্তের মধ্যেই অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দিয়ে তারা পালিয়ে যান। পরে ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা গিয়ে অধ্যক্ষকে পুকুর থেকে টেনে তোলেন। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে চন্দ্রিমা থানায় ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন অধ্যক্ষ। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এতে সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়। তারা হলেনথ- প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটার বিভাগের অষ্টম পর্বের ছাত্র কামাল হোসেন সৌরভ, ইলেকট্রনিকসের পঞ্চম পর্বের মুরাদ, পাওয়ারের সাবেক ছাত্র শান্ত, ইলেকট্রিক্যালের সাবেক ছাত্র বনি, মেকাট্রনিকসের সাবেক ছাত্র হাসিবুল ইসলাম শান্ত, ইলেকট্রমেডিকেলের সাবেক ছাত্র সালমান টনি, একই বিভাগের সপ্তম পর্বের ছাত্র হাসিবুল এবং কম্পিউটারের সাবেক ছাত্র মারুফ। বাকি আসামিরা অজ্ঞাত। এদিকে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত এবং পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় নেতৃত্বদানকারী কামাল হোসেন সৌরভকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগ এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে পলিটেকনিকে ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। নগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ বলেন, ঘটনার সঙ্গে সৌরভের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কল্যাণ কুমার জয়ের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এদিকে গতকাল সকাল থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত হয়েছে শিক্ষক সমিতির বৈঠকে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি ওহিদুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা আর ক্লাসে ফিরবেন না।

ঘটনা তদন্তে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অধিদফতরের পরিচালক যুগ্ম-সচিব এস এম ফেরদৌস আলমকে। এর সদস্য সচিব রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিকের অধ্যক্ষ ওমর ফারুক এবং সদস্য কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক (কারিকুলাম) ড. নুরুল ইসলাম। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ সময় ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ, আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত দলের সদস্যরা। সন্ধ্যায় তদন্ত দল রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে প্রবেশের সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের নানা দাবি তদন্ত দলের কাছে তুলে ধরেন। পরে তদন্ত দলের সদস্যরা কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায়। এ সময় কলেজ অধ্যক্ষ তদন্ত দলের সদস্যদের কাছে সেদিনের ঘটনার বিবরণ দেন।

সর্বশেষ খবর