মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মহাসড়কগুলো যেন ময়লার ভাগাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহাসড়কগুলো যেন ময়লার ভাগাড়

সিটি করপোরেশনের গাড়ি থেকেই মহাসড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে তিন বছর ধরে ময়লা ফেলছে শ্রীপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ময়লা ছড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়। দিনের পর দিন এসব ময়লা থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। আশপাশের আবাসিক এলাকার লোকজনের জন্য দুর্গন্ধ এখন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে দেশের অধিকাংশ পৌর মেয়ররা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ল্যান্ডফিল্ডের ব্যবস্থা না করে মহাসড়ককে ভাগাড়ে পরিণত করেছেন।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে উঠে এসেছে মহাসড়কে ময়লা ফেলার এই চিত্র। সারা দেশেই সড়ক-মহাসড়কের পাশে বাসাবাড়ির আবর্জনা থেকে শুরু করে হাসপাতালের রক্তমাখা জীবাণুযুক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। সিরিঞ্জ, রক্তমাখা তুলা রাস্তায় পড়ে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হচ্ছে। বাতাসে দুর্গন্ধ আর জীবাণু এক হয়ে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বছরের পর বছর এভাবে খোলা জায়গায় ময়লা রেখে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার পরিদর্শক (কনজারভেন্সি ইন্সপেক্টর) জহির রায়হান বলেন, ‘শ্রীপুর পৌরসভার ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। আমরা কিছুদিন পর পর মহাসড়কের পাশ থেকে ময়লা পরিষ্কার করে থাকি।’ কুষ্টিয়ায় বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির প্লান্টের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে ময়লার স্তূপ। এর পাশেই আছে পৌর জামে মসজিদ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নাকে রুমাল চেপে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে হয় সবাইকে।

কুষ্টিয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খন্দকার মাজেদুল হক বলেন, ‘এখানকার ময়লার স্তূপ প্রতিদিন সকালে সরিয়ে ফেলা হয়। দুপুরের মধ্যেই দোকানদাররা আবার ময়লা ফেলেন। এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত অন্য কোথাও ময়লার ড্রাম স্থাপন করা হবে।’ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার তালতুলী এলাকায়, চান্দিনা উপজেলা পরিষদের রাস্তার প্রবেশমুখে ধানসিঁড়ি এলাকায়, বুড়িচং উপজেলার নিমসারে ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বালুজুরিতে মহাসড়কের পাশে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। চান্দিনা পৌরসভার প্রকৌশলী মো. শাহিনসার হোসেন বলেন, ‘চান্দিনা পৌরসভার আবর্জনা ফেলার একটি স্থান রয়েছে। তবে মহাসড়কের পাশে আবর্জনা ফেলার বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন পৌর সচিব।’ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নেই কোনো নীতিমালা। ইলেকট্রনিক বর্জ্যরে পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়লেও নেই কোনো ব্যবস্থাপনা। বাসাবাড়ির বর্জ্যরে সঙ্গেই ফেলে রাখা হয় এসব তেজস্ক্রিয় পদার্থ। বৃষ্টি, বাতাসে, পানিতে কিংবা ফসলি জমিতে গিয়ে পড়ছে এই তেজস্ক্রিয় উপাদান। হাসপাতালের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খোলা রাস্তায়। রোগ-জীবাণু হাসপাতালের গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে খোলা বাতাসে। কুকুর, বিড়াল, কাক ছড়াচ্ছে এসব বর্জ্য। অনেকেই এসব বর্জ্য থেকে কুড়াচ্ছে পলিথিন। এখান থেকে এসব জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে লোকালয়ে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে অতীতে কোনো পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু এভাবে খোলা জায়গায় হাসপাতালের বর্জ্য ফেলা ঝুঁকিপূর্ণ। এ সমস্যা সমাধানে আমরা নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। বেশ কিছু পৌরসভাকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ল্যান্ডফিল্ড তৈরির জন্য।’ তিনি বলেন, ‘আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গড়ে তুলতে দেশব্যাপী ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরি করা হবে। এখানে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এ জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আলোচনা হয়েছে। বেশ কিছু কোম্পানি এই প্রকল্পে আগ্রহ দেখিয়ে আবেদনও করেছে আমাদের কাছে।’

সর্বশেষ খবর