মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
মন্ত্রিসভা বৈঠক

স্কুলছাত্র আবরারের মৃত্যুতে আইনানুগ ব্যবস্থার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নিজামুল হক বিপুল

রাজধানীর রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা। ওই প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার রাহাতের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর পোস্টমর্টেম না হওয়া এবং থানায় কোনো মামলা না হওয়ায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা। দ্রুত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ নিতেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া ভারতে টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভারতকে সাত উইকেটে পরাজিত করায় প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানান। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সিনিয়র মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৈনিক প্রথম আলোর নাম উল্লেখ করে বলেন, তারা এত নীতি কথা বলে, মানবিকতার ছবক দেয়, অথচ তারাই সবচেয়ে অমানবিক ও নিষ্ঠুর কাজটি করেছে। তাদের একটি অনুষ্ঠানে নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার রাহাত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়, অথচ তারা সেটি গোপন রেখে পুরো অনুষ্ঠান চালিয়ে যায়। তিনি বলেন, মানবিকতা আর নৈতিকতার ছবক দেন, তারা এত অমানবিক ও নিষ্ঠুর হতে পারেন। সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান- এ নিয়ে পুলিশ কী করেছে। এখন পর্যন্ত কোনো আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে দ্রুত প্রোপারলি ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। পুলিশও তাকে কিছুই জানায়নি। আজই তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা  নেবেন। সূত্র জানায়, ময়নাতদন্ত ছাড়া কীভাবে লাশ দেওয়া হলো তাও খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় আইনমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনায় মামলা হওয়া উচিত। অন্য মন্ত্রীরাও পুরো ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে এতগুলো হাসপাতাল থাকতে কেন আবরারকে মহাখালীতে নেওয়া হলো- সেই প্রশ্নও তুলেছেন একাধিক মন্ত্রী। এদিকে গতকালের বৈঠকে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) মন্ত্রিসভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৫৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অন্যদিকে সরকারের পুরো সময়ে মন্ত্রিসভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৭৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে বিকালে সচিবালয়ে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এসব তথ্য তুলে ধরেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চারটি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৫৩টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৩১টি। ২২টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৫৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। তিনি জানান, এই সময়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে পাঁচটি নীতি বা কৌশল, দুটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুমোদিত হয়েছে। আর সংসদে আইন পাস হয়েছে পাঁচটি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২১ জানুয়ারি  থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রিসভার মোট ১৬টি বৈঠক হয়। এসব বৈঠকে ১১৬টি সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়। এ ছাড়াও মন্ত্রিসভা বৈঠকে জাতীয় সম্পদ উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার নীতিমালা-২০১৯ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

আবরারের কুলখানি : নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, স্কুলছাত্র নাঈমুল আবরার রাহাতের কুলখানি গতকাল তার বাড়ি সোনাইমুড়ী উপজেলার ধন্যপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এখনো আহাজারি করছেন তা মা-বাবা, বোন ও স্বজনরা। তারা ‘আবরার হত্যা’র বিচার দাবি করেন। তারা বলেন, কিশোর আলোর বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানের আয়োজকরা অবহেলা করে দূরবর্তী হাসপাতালে নেওয়ায় আবরারকে বাঁচানো যায়নি। কাছের কোনো হাসপাতালে নিলে হয়তো সে বেঁচে যেত। আবরারের বাবা মজিবর রহমানের কোনো বসতঘর নেই। তিনি তার ভাইয়ের ঘরে পরিবার নিয়ে বাস করেন। মজিবর রহমান তার স্ত্রী জাহানারা বেগম, মেয়ে তানিয়া আক্তার এবং অন্যান্য আত্মীয়রা প্রশ্ন করেন, একটা ছেলের লাশ পাশে রেখে ওরা কীভাবে আনন্দ অনুষ্ঠান চালিয়ে যেতে পারল। আবরার যে স্কুলের ছাত্র তার প্রাক্তন শিক্ষার্থী ওবায়েদ আহমেদ ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে সংশ্লিষ্টদের কাছে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন। ওবায়েদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফাইজুল্লা ফয়েজ ডাকযোগে ওই নোটিস পাঠান।

সর্বশেষ খবর