মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুদকের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না : তোফায়েল

সংস্থার চেয়ারম্যানকে সংসদীয় কমিটির তলবে বিস্মিত হয়েছি

রফিকুল ইসলাম রনি ও আরাফাত মুন্না

দুদকের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না : তোফায়েল

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মতো স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের ওপর কারও হস্তক্ষেপ ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির  সভাপতি তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। এটি শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে দায়বদ্ধ। এ ছাড়া অন্য কারও কাছে তাদের দায় নেই। তারা যে কারও বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারে। তিনি বলেন, সম্প্রতি সংস্থাটি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগসহ অনেক সংগঠনের নেতার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, ব্যাংক হিসাব তলব করেছে। তাই দুদককে নিরপেক্ষভাবেই চলতে দেওয়া উচিত। গতকাল বনানীতে তার নিজ বাসভবনে বেসিক ব্যাংক ইস্যুতে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে তলবের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমি যখন মিডিয়ার মাধ্যমে খবরটা জানতে পেরেছি, নিজেও অবাক হয়েছি, বিস্মিত হয়েছি। আমাদের সবার মনে রাখা দরকার দুদক একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সংস্থা। এভাবে তার প্রধানকে (চেয়ারম্যান) তলব করা যায় না। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান দুদক চেয়ারম্যান একজন বিজ্ঞ মানুষ। প্রশাসনিক উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা হওয়ার পাশাপাশি তিনি এডিবির অল্টারনেটিভ ডিরেক্টর ছিলেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। সেখান থেকে তাকে দুদকের চেয়ারম্যান করা হয়েছে। তার তলব চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে বাধা আখ্যায়িত করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, এমন এক সময় দুদক চেয়ারম্যানকে ডাকা হয়েছে, যখন প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে বড় ভূমিকা পালন করছে দুদক। এতে চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ক্ষতি হতে পারে। এই মুহূর্তে আইন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিতে তাকে ডাকা ঠিক হয়নি। তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমাদের বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক খুবই বিজ্ঞ একজন আইনজীবী। সংবিধান বিষয়েও তার খুব ভালো জ্ঞান। আমি এ বিষয়টা নিয়ে তার সঙ্গেও কথা বলেছি। আইনমন্ত্রী আমাকে জানিয়েছেন, তিনি যখন দুদকের প্রধান আইনজীবী ছিলেন, তখনো একবার সংস্থাটির তৎকালীন চেয়ারম্যান গোলাম রহমানকে সংসদীয় কমিটিতে ডাকা হয়েছিল, ওই সময় দুদক চেয়ারম্যানকে ওই তলবে সাড়া না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন আনিসুল হক। তিনি বলেছিলেন, এভাবে ডাকার কোনো এখতিয়ার কমিটির নেই। দুদক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও তদন্ত করতে পারে উল্লেখ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, দুদক এমন একটি সংস্থা, যারা সব সময় ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করবে। পৃথিবীর অনেক দেশে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ আসে। বিচার হয়। অনেকে জেলেও আছেন। তেমনভাবে দুদকও যে কোনো ব্যক্তির দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারে। কালো টাকা সাদা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বলি তিনি কালো টাকা সাদা করেছেন। আমাদের মধ্যেও অনেকে আছেন, যারা কালো টাকা সাদা করেছেন। এনবিআরকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ট্যাক্স দিলেই কালো টাকা সাদা হয়ে যায়। দুদক কিন্তু সেই টাকার উৎস সম্পর্কেও তদন্ত করতে পারে। তাই একটি নিরপেক্ষ সংস্থাকে তার মতো করেই কাজ করতে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রশ্ন উঠেছে বেসিক ব্যাংক নিয়ে। উচ্চ আদালত থেকে একটি অবজারভেশন রয়েছে, ঋণ কেলেঙ্কারির বিষয়ে তদন্ত করার। সেই তদন্ত চলমান আছে। আমি বেসিক ব্যাংকসহ দেশের কোনো ব্যাংক থেকে ঋন নিইনি। তাই আমি এ বিষয়ে কথা বলতে পারি। তিনি বলেন, দুদক থেকে বার বার বলা হয়েছে একটি বিষয়ে তদন্ত চলছে, ওই তদন্তে যদি বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অভিযুক্ত হন, তখনই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি মনে করি, দুদককে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে চলতে দেওয়া উচিত। বর্তমান কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তার সঙ্গে রয়েছেন ড. মো. মোজাম্মেল হক খান। তারা দুজনই উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন। একটা সুন্দর কমিশন গঠন করা হয়েছে। তারা শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে দায়বদ্ধ। এখন অনেকেই বলেন, তিনি যদি (দুদক চেয়ারম্যান) বেসিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারেন, তার পদত্যাগ করা উচিত। তার সরে দাঁড়ানো উচিত। এভাবে কথা বলা আমাদের কারও পক্ষেই শোভনীয় নয়। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমি নিজেও একটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি (বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত)। আমি রুলস অব প্রসিডিউর ফলো করি। আমারও একটা লিমিট আছে। আমি ইচ্ছা করলেই মন্ত্রণালয়ের সব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারি না। স্থায়ী কমিটিতে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নেই, সেটা পরামর্শমূলক। মন্ত্রণালয় সেই পরামর্শ রাখতেও পারে, না-ও রাখতে পারে। দেশ এগোচ্ছে, মানুষেরও উন্নতি হচ্ছে উল্লেখ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশেরও যেমন উন্নয়ন হচ্ছে, দেশের মানুষেরও উন্নতি হচ্ছে। আমি গ্রামের ছেলে। গ্রাম থেকে এসে রাজনীতি করেছি, জাতির জনকের সংস্পর্শ পেয়েছি। আমি কখনো ভেবেছিলাম, বনানীতে আমার একটা বাড়ি হবে? বঙ্গবন্ধু জায়গা দিয়ে গেছেন, আমরা বাড়িঘর করেছি। সেই হিসেবে আমাদের সবারই উন্নতি হয়েছে, সেই উন্নতিটা ন্যায়ভাবে হতে হবে। বাড়ি করার টাকা কোথায় পেলাম। তার হিসাব থাকতে হবে। তিনি বলেন, ১/১১ এর সময় আমার স্ত্রীর নামে মামলা হয়েছে, আমার নামে মামলা হয়েছে। আমার একমাত্র কন্যার নামে মামলা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, আমার আয়ের থেকে ব্যয় বেশি। তবে সেই অভিযোগ টেকেনি। সেই ’৮২ সালে আমার বাড়ি করা। যদি ’৮২ সালের মূল্যের সঙ্গে ২০০৭ সালের মূল্য এক করেন, সেটা কি মিলবে। তাই সবারই চিন্তা করতে হবে, কোথায় ছিলাম, আর কোথায় আছি। দুদক চেয়ারম্যানকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে ডাকার বিষয়টি ভালো লাগেনি উল্লেখ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি খোঁজ নিয়েছি। সেদিন আইনমন্ত্রী মিটিংয়ে ছিলেন না। আমার মনে হয়, তিনি সেদিন মিটিংয়ে থাকলে এমন সিদ্ধান্ত নিতেন না। সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। দুদক চেয়ারম্যানকে তলব করা তাদের ঠিক হয়নি, এটা তারা উপলব্ধি করবেন বলে আমি আশা করি।

সর্বশেষ খবর