বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

নেতৃত্বের লড়াই স্বেচ্ছাসেবক লীগে

পদ প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ, আলোচনায় এক ডজন সাবেক ছাত্রনেতা, লবিং তদবির কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসা-বাড়িতেও

রফিকুল ইসলাম রনি

নেতৃত্বের লড়াই স্বেচ্ছাসেবক লীগে

সাত বছর পর হতে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন ঘিরে পদ প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপও শুরু হয়ে গেছে। পছন্দের পদ পেতে তদবির-দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন পদ প্রত্যাশী নেতারা। সংগঠনের শীর্ষ পদে আসতে আলোচনায় রয়েছেন এক ডজন সাবেক ছাত্রনেতা। ছাত্রলীগ করে আসা সাবেক নেতারাই সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিনই দলটির বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমন্ডির সভানেত্রীর কার্যালয় নেতা-কর্মীদের পদচারণায় মুখর থাকে। লবিং, তদবির চলছে কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসা-বাড়িতেও। কিন্তু সংগঠনটির শীর্ষ দুই নেতৃত্বে কারা আসছেন সেটি কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যে নতুন মুখ আসবে এটি মোটামুটি নিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে খুলে যেতে পারে সাবেক ছাত্রনেতাদের কপাল। বিভিন্ন সময় নানা কারণে যারা দুর্নাম কুড়িয়েছেন, এমন নেতারা এবার বাদ পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। আগামী ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে। এর আগে ১১ ও ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ দুই শাখা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন। সর্বশেষ ২০১২ সালে মোল্লা মো. আবু কাওসারকে সভাপতি এবং পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি হয়েছিল। সম্প্রতি ক্যাসিনোকান্ডে  মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ভিন্ন অভিযোগে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সহ-সভাপতি নির্মল চন্দ্র গুহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাহউল সাচ্চুকে। সূত্র মতে, সংগঠনটির তৃতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি আছে এমন সৎ ও দলের দুঃসময়ে মাঠে থাকা নেতাদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হবে। নেতাদের নানা অপকর্মে ভাবমূর্তির সংকটে পড়া সংগঠনকে সঠিক ধারায় ফিরিয়ে সত্যিকার অর্থেই ‘স্বেচ্ছাসেবক’ লীগ গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা বলছেন, ক্লিন ইমেজের নেতৃত্বের হাতেই স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভার তুলে দেওয়া হবে। এ জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নিচ্ছেন। দলের দুঃসময়ে কারা মাঠে ছিলেন কাদের ক্লিন ইমেজ আছে সেসব বিষয় মাথায় রেখে নেতৃত্ব সাজাতে চান তিনি। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম সভাপতি। নেতৃত্ব নির্বাচনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে তার বিশেষ প্রভাব রয়েছে। সংগঠনের নেতৃত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যারা সৎ, যাদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে, যারা সাহসী ও দুঃসময়ে সংগঠনের জন্য কাজ করেছে, তাদের খুঁজে বের করে নেতা নির্বাচিত করা হবে।’ কেন্দ্রীয় ও ঢাকার দুই শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে লড়াইয়ে অন্তত এক ডজনেরও বেশি নেতা রয়েছেন বলে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় এগিয়ে আছেন সম্মেলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্মল রঞ্জন গুহ ও গাজী মেসবাহউল হক সাচ্চু। এ ছাড়াও সভাপতি পদে সংগঠনের সহ-সভাপতি সাবেক ডাকসু সদস্য ওয়ান-ইলেভেনের কারা নির্যাতিত ম. আবদুর রাজ্জাক, আফজালুর রহমান বাবু, তানভির শাকিল জয়, সৈয়দ নুরুল ইসলাম, ১/১১ সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও বর্তমান স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সোহেল রানা টিপু, খায়রুল হাসান জুয়েলের নাম শোনা যাচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন সহ-সভাপতি মতিউর রহমান মতি, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ শাকিব বাদশা, এ কে এম আজিম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লিটন, দফতর সম্পাদক সালে মোহাম্মদ টুটুল, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক নাফিউল করিম নাফা, পল্লী  উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক আবুল ফজল রাজুসহ একডজন নেতা। এ ছাড়াও ছাত্রলীগের সাবেক বেশ কয়েকজন নেতা স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ পদে আসতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। দক্ষিণে শীর্ষ পদে আলোচনায় আছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি কামরুল হাসান রিপন, মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হাওলাদার, মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাবেক ছাত্রনেতা ও কাউন্সিলর আনিসুর রহমান, শেখ মো. আনিসুজ্জামান রানা, ছাত্রলীগ দক্ষিণের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদসহ ডজনখানেক নেতা। ঢাকা মহানগর উত্তর সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির পদে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল, সহ-সভাপতি গোলাম রাব্বানী, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন সরদার, মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. ইসহাক মিয়াসহ অন্তত ডজনখানেক নেতা। গতকাল ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্ধিত সভায় ২৭টি থানার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বর্তমান নেতৃত্বকে পুনরায় রাখার পক্ষে মত দেন বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর