অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে তথ্য জানতে প্রয়োজনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও চিঠি পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত। তিনি বলেন, ক্যাসিনোতে জড়িতদের বিষয়ে তথ্য জানতে ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রেও চিঠি দেবে দুদক। গতকাল দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের আলোচ্যসূচি ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানাতে দুদক সচিব সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। দুদক সচিব বলেন, এফবিআইয়ের সঙ্গে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা ক্ষেত্রে চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ক্যাসিনোর শহর লাসভেগাসে খেলতে যাওয়া বাংলাদেশের ক্যাসিনোবাজদের সম্পর্কে তথ্য জানতে প্রয়োজনে চিঠি পাঠানো হবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা দুর্নীতিবাজদের তথ্য জানতে পারস্পরিক আইনগত সহায়তার অনুরোধ পাঠানো হতে পারে। এর আগে বুধবার সিঙ্গাপুরের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা করাপ্ট প্র্যাকটিসেস ব্যুরোর পরিচালকের কাছে এক চিঠিতে সেখানকার ক্যাসিনোগুলোতে জুয়া খেলতে যাওয়া বাংলাদেশিদের তথ্য চায় কমিশন।
জি কে শামীম ও খালেদ মাহমুদকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ : অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় টেন্ডার কিং এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম এবং যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম গতকাল তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। কমিশনের জনসংযোগ বিভাগ জানায়, গতকাল জি কে শামীমকে তৃতীয় দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের কর্মকর্তারা। আর দ্বিতীয় দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হন খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে দুদকের সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত সাংবাদিকদের বলেন, খালেদ ও শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে অতিরিক্ত অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া গেলে মামলাটিকে দ্রুত ফলাফলের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। নতুন আরও কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা প্রয়োজন মনে করলে যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন।
এর আগে রবিবার শামীমকে এবং সোমবার খালেদকে প্রথম দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করে কমিশন। ২৭ অক্টোবর দুদকের আবেদনে শামীম ও খালেদকে সাত দিন করে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় আদালত। এর আগে ২১ অক্টোবর দুদক খালেদ ও শামীমের বিরুদ্ধে মামলা দুটি দায়ের করে। জি কে শামীমের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন। অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ২৯৭ কোটি আট লাখ টাকার সম্পদ অর্জন ও ভোগদখল করার অভিযোগ আনা হয় সেখানে। আর খালেদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মামলাটি করেন দুদকের আরেক উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম। এই মামলায় খালেদের বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি ৫৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। দুদকের অনুসন্ধানে তাদের বিপুল সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। ঢাকার ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা চালানোর অভিযোগে ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূ্ইঁয়াকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। অন্যদিকে জি কে শামীম ২০ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন। যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পরিচয় দিয়ে শামীম টেন্ডার জগতের নিয়ন্ত্রণ করতেন।