বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
একনেকে ছয় প্রকল্প অনুমোদন

নতুন ঠিকাদারদের সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন ঠিকাদারদের কাজের সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইনটা এমন যে, বড় বড় ঠিকাদার ছাড়া নতুন, ছোট ঠিকাদাররা সুযোগ বেশি পায় না। এটাকে একটু সহজ করুন, যাতে করে আরও কেউ ঢুকতে পারে এবং প্রতিযোগিতা হয়।’ তিনি বলেন, সবাই যেন উন্নয়ন কাজে অংশ নিতে পারে, তবে মান ঠিক রেখে। কাজ জানে না এমন কাউকে কাজ দেওয়া যাবে না। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সুরক্ষাসহ ছয়টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার খরচ করবে ৪ হাজার ৪৩৯ কোটি ৮৬ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাসহ প্রকল্পের তথ্য সাংবাদিকদের জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। মন্ত্রী জানান, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ হবে। এর পরই উৎপাদনে যাবে ইউনিটটি। সেখান থেকে উৎপাদিত হবে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ফলে বিভিন্ন নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা (পিপিএস) নির্মাণ’ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। উৎপাদিত এ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মোট ৬৬৯ কিলোমিটার লাইনের মধ্যে ৬০ কিলোমিটার হবে ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন। রূপপুর পারমাণবিক সুরক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে এবং নিরাপদ ও সুরক্ষিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে।

জানা যায়, প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। এর পুরো ব্যয় সরকারি তহবিল থেকে মেটানো হবে। চলতি সময় থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মেয়াদে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করা হবে। একনেক সভায় ৩৬৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ের ‘যশোর-মণিরামপুর-কেশবপুর-চুকনগর আঞ্চলিক মহাসড়ক’ প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ‘ফেনী-সোনাগাজী-মহুরী প্রকল্প সড়কে এবং বক্তারমুন্সী-কাজিরহাট-দাগনভূঞা সড়কে সেতু নির্মাণ প্রকল্প’-এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।  আর ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘আগারগাঁও শেরেবাংলানগরে পর্যটন ভবন’ ও ৩৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কক্সবাজার জেলার একতাবাজার হতে বানৌজ শেখ হাসিনা ঘাঁটি পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প’-এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯ কোটি টাকা।

নতুন ঠিকাদারদের সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ : প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন সহজ করার কাজ চলছে। এটা হয়ে গেলে নতুন নতুন প্রতিযোগিতা হবে এবং নতুন ঠিকাদাররা ঢোকার সুযোগ পাবে। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে এম এ মান্নান বলেন, ‘আগ্রহ নিয়ে প্রায়ই প্রকল্প পাস করা হয়, দালানকোঠা নির্মাণ করা হয়। তারপর আর বাকি কাজ হয় না। হয় জনবল নাই, নয় যন্ত্রবল নাই। যে আগ্রহ নিয়ে আপনারা (সংশ্লিষ্টরা) প্রকল্পের কাজ শেষ করেন, একই আগ্রহ নিয়ে আপনারা দয়া করে বাকি কাজগুলো করবেন, যাতে জনগণ যে সেবা পাওয়ার কথা, সেখান থেকে সেটি তারা পান।’ পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, নতুন সড়ক নির্মাণের চেয়ে সড়ক মেরামত ও মানোন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে সাবধানতার সঙ্গে সড়ক করতে হবে। কারণ প্রচুর সড়ক হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, নতুন সড়ক নেওয়ার আগে আমাদের চিন্তা করতে হবে। যেসব সড়ক আমাদের আছে, বিশেষ করে আন্তঃজেলা সড়ক, এগুলোকে আমরা বিশ্বমানের না হলেও আঞ্চলিক মানের করতে চাই। চার লেন করতে চাই, পুরু করতে চাই, যাতে সামান্য বৃষ্টিতে না ভেঙে যায়। এ জন্য এখন থেকে আমাদের মনোযোগ থাকবে সড়কের উন্নয়ন ও মেইনটেন্যান্সের দিকে।

নতুন সড়ক নেব না তা বলছি না। খুব সাবধানতার সঙ্গে নেওয়া হবে। আর বর্তমান যেগুলো আছে, সেগুলোকে আমরা উন্নত করব। এটা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত।’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামেগঞ্জে আমরা অসংখ্য সেতু বানাচ্ছি। কিন্তু অহেতুক যেন না বানাই। এতে পানি চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। নদীগুলো এমনি ভরে যাচ্ছে। সেতু নির্মাণ করলে পানিপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। পলি পড়ে আরও ভরে যায়। আপনারা সাবধানে সেতু বানাবেন। অহেতুক বানাবেন না।’ যেখানে নদ-নদী সোজা-সরল করার প্রয়োজন, সেগুলো তেমন করার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

খুলনা-যশোর সড়কের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘খুলনা-যশোর সড়কটা তার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে খুবই বিরক্তিকর একটা সড়ক। দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কের কাজ ফেলে রাখা হয়েছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, এটার সঙ্গে যারা জড়িত, সবাই এর কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করবেন। মানুষের অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে।’

পিয়াজযন্ত্রণা সত্ত্বেও সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমেছে : সারা দেশে পিয়াজযন্ত্রণার মধ্যেই বাজারের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমেছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেওয়া অক্টোবরের ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যের বরাতে তিনি এ কথা জানান। বিবিএসের দাবি, সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে মাছ, শাক-সবজি ও ফলজাতীয় পণ্যের মূল্য কমেছে। গতকাল একনেক সভা শেষে এ তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, পিয়াজযন্ত্রণা (মূল্য বাড়া) সত্ত্বেও সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমেছে। পিয়াজের দাম বেড়েছে। তবে সবজি, মাছ ও ফলমূলসহ অন্যান্য পণ্যের দাম কমেছে।

সর্বশেষ খবর