রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআই

ঋণের উচ্চসুদে লোকসানে ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়লেও ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। এই তথ্য দিয়ে ডিসিসিআই বলেছে, ঋণের উচ্চসুদে লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ব্যবসা হচ্ছে কিন্তু লাভ হচ্ছে না। সুদহার বেশির কারণ খেলাপি ঋণ। এটা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। খেলাপি ঋণ অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি শনাক্ত করা দরকার। ডিসিসিআইর মতে, সুশাসনের অভাব পুঁজিবাজারের সম্ভাবনাকে সীমিত করে রেখেছে। কৃষি খাতে উৎপাদিত পণ্যের বড় অংশ পচে যাচ্ছে অথবা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ২৬ দশমিক ১ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত বেকার নিয়েও উদ্বিগ্ন ডিসিসিআই।

গতকাল রাজধানীর মতিঝিলের চেম্বার ভবনে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-ডিসিসিআই আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ চিত্র’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি ওসামা তাসীর। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এক দশক ধরে ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, দারিদ্র্যের হার ক্রমাগত হ্রাসের মধ্য দিয়ে উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি খাতের প্রতিবন্ধকতা কমানোর সুপারিশ দিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বেশির ভাগ ব্যাংক এখনো ১১ থেকে ১৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে। যদিও সরকার এক অঙ্কের সুদহারে ঋণ প্রদানের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে। এক অঙ্কের সুদহার বাস্তবায়নের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো এবং সুশাসন জরুরি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে একটি পদ্ধতি হাতে নেওয়া যেতে পারে, যার মাধ্যমে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি এবং অনিচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি শনাক্ত করা যেতে পারে। এতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা সহজ হবে।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে বন্ড মার্কেটের অনুপস্থিতি, ভালো প্রতিষ্ঠান এবং সুশাসনের অভাবে সম্ভাবনা সীমিত হয়ে আছে। দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজারে বন্ড মার্কেট স্থাপন এবং স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল হিসেবে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হোক। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর উচিত গ্রিন-ফিল্ড প্রকল্পগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে মূলধন সংগ্রহ করার সুযোগ দেওয়া। তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত সব প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর কমানো জরুরি। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, মুদ্রানীতিতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের সঞ্চয় জাতীয় সঞ্চয়পত্রের দিকে ধাবিত হওয়ার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ সংকুচিত হয়েছে। এ জন্য খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। আর বাজেট ঘাটতি মেটাতে জাতীয় সঞ্চয়পত্র এবং ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের ফলে সরকারের ওপর ক্রমাগত ঋণের বোঝা বাড়ছে। সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকিং খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো প্রয়োজন। সংবাদ সম্মেলনে বন্দর পরিস্থিতি উন্নয়নের দাবি জানিয়ে ডিসিসিআই বলেছে, প্রধান প্রধান সমুদ্র বন্দরগুলোতে কনটেইনার ব্যবস্থাপনার উন্নতি সাধন সত্ত্বেও বন্দরের স্বল্প গভীরতা, পলি, যন্ত্রপাতির অপর্যাপ্ততা, পশ্চাদভূমির সঙ্গে যোগাযোগ বন্দরের অবকাঠামোর অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। দীর্ঘ পণ্য খালাস প্রক্রিয়া, সমন্বয়ের অভাব, পণ্য পরিদর্শনে ভোগান্তি, দালিলিক কার্যক্রম এবং অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে লিড টাইমকে ডিসিসিআই বাড়িয়ে দেয়। বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বন্দর সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নে ‘জাতীয় সমুদ্র ও বন্দর কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি একক বন্দর উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা স্থাপন করা হোক।

সর্বশেষ খবর