রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী

আজ রবিবার হিজরি বর্ষের ১২ রবিউল আউয়াল, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। আল্লাহর প্রিয় হাবিব, নবী ও রসুল হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন। দিনটি মুসলিম বিশ্বে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে উদ্্যাপন করা হয়। মুসলিম জাহানের আশেকে রসুলের কাছে এটি পবিত্রতম দিন। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে, অর্থাৎ ১৪৪৯ বছর আগে এই দিনে মানবতার মুক্তিদূত ও আল্লাহর প্রিয় রসুল হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে আগমন করেন। তিনি ৬৩ বছর হায়াত লাভ করেছিলেন। ১১ হিজরি সনের আরেক রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ, সোমবার বিশ্বজগৎসমূহের রহমতের দূত ওফাত লাভ করেন। তাঁর জন্মগ্রহণের দিনটিও ছিল সোমবার। ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বাংলাদেশে আজ সরকারি ছুটি। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় দিনটি উদ্যাপনের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কোরআন তিলাওয়াত, হাদিস শরিফ পাঠ, নফল নামাজ, ইবাদত-বন্দেগি ও কবর জিয়ারত করে দিনটি পালন করবেন।

ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ইসলাঈ সংগঠনের নেতারাও। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে দেশব্যাপী মসজিদ, মাদ্রাসা, বিভিন্ন খানকাহ, দরবার শরিফসহ ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে জশ্নে জুলুস বা আনন্দ মিছিল, শান্তি মহাসমাবেশ, ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল, কোরআনখানি, ফাতিহা পাঠ, দোয়া মাহফিল ও তবারক বিতরণ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন গতকাল থেকে পক্ষকালব্যাপী নবীজির জীবন ও কর্মের ওপর সেমিনার, ওয়াজ, মিলাদ মাহফিলসহ ইসলামী ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী এবং মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলার আয়োজন করেছে।

ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ী, হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরবের মক্কা নগরীতে বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর দাদা আবদুল মুত্তালিব ছিলেন পবিত্র কাবাঘরের খাদেম। তাঁর বাবার নাম আবদুল্লাহ ও মা আমিনা। দুধমা হালিমা। ব্যক্তিগত সততার জন্য বাল্যকাল থেকেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) ‘আল-আমিন’ বা বিশ্বাসী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। সমাজ থেকে হিংসা-হানাহানি দূর করার জন্য কিশোরবেলায় তিনি ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ২৫ বছর বয়সে হজরত খাদিজা (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। এরপর স্রষ্টার সন্ধানে ১২ বছর হেরা গুহায় মোরাকাবা করেন। তাঁর একাগ্র সাধনায় আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে ৪০ বছর বয়সে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবুয়ত দান করেন। আল্লাহর একাত্মবাদ ও ইসলামের দাওয়াত দিতে গিয়ে প্রথম থেকেই কাফিরদের তীব্র বিরোধিতা ও নির্যাতনের শিকার হন তিনি। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে আল্লাহর প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনের প্রচারকাজ অব্যাহত রাখেন। এ সময় কাফিররা তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলে আল্লাহর নির্দেশে তিনি মাতুলালয় মদিনায় হিজরত করেন। মদিনায় গিয়ে তিনি সব ধর্মের মানুষের সঙ্গে মুসলমানদের শান্তি ও নিরাপদে বসবাসের জন্য ঐতিহাসিক ‘মদিনা সনদ’ প্রণয়ন করেন। এর পরও নবীজিকে মোকাবিলা করতে হয় বদর যুদ্ধ, ওহুদ যুদ্ধসহ ২৭টি প্রতিরোধযুদ্ধ। ষষ্ঠ হিজরিতে মদিনাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে হজ করতে গিয়ে মক্কাবাসীর বাধার কারণে হুদাইবিয়ার সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করে হজ না করেই তাঁকে ফিরে আসতে হয়। অষ্টম হিজরিতে (৬৩০ খ্রিস্টাব্দ) মক্কাবাসী হুদাইবিয়ার সন্ধি ভঙ্গ করলে নবীজি ১০ হাজার সাহাবি নিয়ে মক্কা অভিযান শুরু করেন। এ সময় তিনি ঘোষণা করেন, যারা কাবাঘরে আশ্রয় নেবে ও নিজ ঘরে থাকবে, তারা সাধারণ ক্ষমা পাবে। এরপর আর কেউ নবীজির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এভাবে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই প্রিয় হাবিব নবী ও রসুুলকে আল্লাহ রব্বুল আলামিন ঐতিহাসিক মক্কা বিজয় দান করেন। পূর্ণতা দেন আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠায় নবীজির ২৩ বছর নিরবচ্ছিন্ন সাধনার। অবশেষে দশম হিজরিতে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনের শেষতম হজ পালন করেন। এদিন ওহি নাজিল করে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘আজ থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের দীন তথা ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দেওয়া হলো। তোমাদের জন্য দীন হিসেবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে।’ বিদায় হজের খুতবায় মানবতার মুক্তিদূত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবজাতির জন্য শান্তি, কল্যাণ ও নিরাপত্তার দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

রাজধানীতে জশনে জুলুস ও শান্তি সমাবেশ : ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আজ সকাল ৯টায় শাহজাহানপুর রেলওয়ে ময়দান থেকে ধর্মীয় আনন্দ মিছিলের (জশনে জুলুস) আয়োজন করেছে আশেকানে মাইজভান্ডারী অ্যাসোসিয়েশন। মাইজভান্ডার দরবার শরিফের গদিনশিন পীর শাহসুফি মাওলানা সৈয়দ মুজিবুল বশর আলহাসানি আল মাইজভান্ডারীর নেতৃত্বে এ জুলুস বের হবে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতও জশনে জুলুস করবে। আশেকান গাউছিয়া মাইজভান্ডারিয়ার ঈদে জশনে জুলুস (র‌্যালি) হবে গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চ প্রাঙ্গণ থেকে, দাওয়াতে ইসলামীর মদিনা মারকাজ সায়েদাবাদ থেকে জুলুসে মিলাদ (র‌্যালি) বের করবে। আঞ্জুমানে আসাদিয়া নুরিয়া সেহরিয়া মিরপুরের শাহ আলী দরবারের দক্ষিণ গেট থেকে জশনে জুলুস বের করবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন : বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব চত্বরে গতকাল পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- প্রতিদিন ওয়াজ মাহফিল, সেমিনার, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি ও গ্রন্থ প্রদর্শনী, কিরাত, হামদ-নাত ও রচনা প্রতিযোগিতা, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর ইত্যাদি। এ ছাড়া বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে গতকাল মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলা শুরু হয়েছে। মেলায় কোরআন-হাদিসসহ বিভিন্ন ইসলামী বই বিশেষ কমিশনে পাওয়া যাচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্ট মাজার শরিফ জামে মসজিদ : হজরত শাহ খাজা শরফুদ্দিন চিশতি (রহ.)-এর দরবারে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে কোরআন তিলাওয়াত, হামদ ও নাতে রসুল এবং বাদ মাগরিব ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

আজিমপুর দায়রা শরিফ : প্রতিদিন বাদ মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে দরুদ, সালাম, ফাতিহাখানি ও মিলাদ মাহফিল।

আলোচনা সভা : জাতীয় প্রেস ক্লাব পবিত্র মিলাদুন্নবী উপলক্ষে নিজস্ব মিলনায়তনে বাদ আসর আলোচানা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করেছে।

সর্বশেষ খবর