শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

জরুরি ভিত্তিতে বিমানে আসছে পিয়াজ

মজুদদারি ঠেকাতে গোয়েন্দারা মাঠে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

জরুরি ভিত্তিতে বিমানে আসছে পিয়াজ

রাজধানীর শ্যামবাজারে পিয়াজের আড়তে অভিযান -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশে পিয়াজের সংকট কাটাতে জরুরি ভিত্তিতে তুরস্ক ও মিসর থেকে বিমানে পিয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর মাধ্যমে এ পিয়াজ আসছে। এ ছাড়া বেসরকারি                 খাতের এস আলম গ্রুপও মিসর থেকে বিমানে পিয়াজ আনার উদ্যোগ নিয়েছে। গতকাল বিকালে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, টিসিবির মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে পিয়াজ আমদানির জন্য তুরস্কের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তারা বাংলাদেশকে সরকারিভাবে পিয়াজ দিতে সম্মত হয়েছে। পিয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে উপসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে তুরস্কে পাঠানো হচ্ছে। বাণিজ্য সচিব আশা করেন, রবি-সোমবার থেকে বিমানে পিয়াজ আনা সম্ভব হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি আমদানিকারকরাও বিমানে পিয়াজ আনার উদ্যোগ নিয়েছেন এমন তথ্য জানিয়ে সচিব বলেন, আমদানিকারকদের সহায়তা দিতে এক সপ্তাহ ধরে আমাদের একজন উপসচিব মিসরে রয়েছেন। দ্রুত পিয়াজ আমদানির পাশাপাশি যে কোনো ধরনের মজুদদারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মনিটরিং টিমের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও মাঠে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ভারতে পিয়াজের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দেশটি গত ২৯ সেপ্টেম্বর পণ্যটি রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর পর থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে পিয়াজের দাম। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে গত কয়েকদিন পিয়াজ আমদানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বৃহস্পতিবার পণ্যটির দাম বেড়ে ২০০ টাকায় ওঠে। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে।

সূত্র জানান, পিয়াজের মূল্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ছুটির দিন সকালে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর প্রধানদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন। বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানান, সভায় দেশে পিয়াজের উৎপাদন, আমদানি ও মজুদ পরিস্থিতি ছাড়াও পণ্যটির অস্বাভাবিক মূল্য নিয়েও পর্যালোচনা হয়। এ সময় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভারতের বেঙ্গালুরুতে পিয়াজের ব্যাপক উৎপাদনের কারণে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা শর্তসাপেক্ষে প্রত্যাহার হলেও লাল জাতের বড় আকারের ওই পিয়াজ বেশি দামে জাহাজে করে ব্যবসায়ীরা আনতে আগ্রহী ছিলেন না। বাংলাদেশে মহারাষ্ট্রের নাসিক জাতের পিয়াজ আমদানি হলেও নির্বাচন-পরবর্তী সরকার গঠন না হওয়ায় ওই রাজ্যেও পিয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়নি। তার পরও দেশে পিয়াজের দাম ১০০ টাকার কাছাকাছি ছিল। তবে সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে টানা তিন থেকে চার দিন ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয় ভারত-বাংলাদেশে। এর ফলে যেমন পিয়াজের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমন গত কয়েকদিন বন্দরে পণ্যটির আমদানিও বন্ধ থাকে। এতে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও ঢাকার শ্যামবাজার পাইকারি মার্কেটে পিয়াজ সংকট দেখা দেয়। এর ফলেই দ্রুত বাড়তে থাকে দাম। এমনকি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাসহ অনেক রাজ্যে পিয়াজের খুচরা মূল্য ১০০ রুপিতে উঠে যায়। এ অবস্থায় ভারতও পিয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে বলে সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণে তুলে ধরা হয়। সূত্রগুলো জানান, পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর জানা যায়, দেশের যে তিনটি গ্রুপ মিসর ও তুরস্ক থেকে যেসব পিয়াজ আমদানি করছে, সেগুলো বাংলাদেশের দিকে সমুদ্রপথে রয়েছে। কিন্তু বাজারে পণ্যটির সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন দ্রুত আমদানির। তা করতে হলে আকাশপথে পিয়াজ আনতে হবে। এ ছাড়া কুষ্টিয়া, মেহেরপুর অঞ্চলে যে আগাম জাতের মুড়িকাটা পিয়াজ উৎপন্ন হয় সেগুলোও পুরোদমে বাজারে আসতে কয়েকদিন লাগবে। এ অবস্থায় বাণিজ্য সচিব টিসিবিকে দ্রুত পিয়াজ আমদানির নির্দেশ দেন। সংস্থাটিকে তিনি জানান, যত দিন পর্যন্ত পিয়াজের মূল্য স্বাভাবিক না হবে তত দিন সরকারিভাবে পিয়াজ আমদানি করবে টিসিবি। এজন্য একজন উপসচিবকে দ্রুত তুরস্কে যাওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি।

এ ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানায়, তারাও সংকট মোকাবিলায় আকাশপথে পিয়াজ আনবে। রবি অথবা সোমবার থেকে বিমানে পিয়াজ আনা হবে। অন্য কয়েকজন বেসরকারি আমদানিকারক জানান, তারা আফগানিস্তান, দুবাইসহ কয়েকটি মুসলিম দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন পিয়াজ আমদানির জন্য। এসব পিয়াজও আনা হবে বিমানে।

সর্বশেষ খবর