মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত, মামলা জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল ঢাকার আট স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় ৮৮টি মামলা ও ১ লাখ ২১ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তবে ট্রাফিক বিভাগ কোনো মামলা করেনি; গাড়িচালকদের সতর্ক ও সচেতনতা সৃষ্টির মধ্যেই রয়েছে। নতুন এ আইনে শাস্তির ভয়ে রাস্তায় গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক চালক। এজন্য প্রায় প্রতিটি সড়কে কমে যায় যানবাহনের সংখ্যা। আর চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের। গতকাল সকাল থেকে যাত্রাবাড়ী, মৎস্য ভবন, কাকরাইল, শাহবাগ, ফার্মগেট, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, শনিরআখড়া, আসাদ গেট, কাকলি, গুলিস্তান ও ঢাকা মেডিকেল এলাকায় দেখা যায় গাড়ির জন্য শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। অথচ গণপরিবহনের সংকট। মাঝে মাঝে দু-একটি বাস এলেও অনেকটা লড়াই করে উঠতে হয়েছে যাত্রীদের। কেউ কেউ বাসে উঠতে না পেরে হেঁটে, কেউ রিকশায় গিয়েছেন গন্তব্যে।

তবে সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের পর ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহন, পথচারী পারাপারের চিত্র তেমন বদলায়নি। পথচারীরা আগের মতোই যত্রতত্র রাস্তা পার হচ্ছেন। বেশির ভাগ মানুষই জেব্রা ক্রসিং আর ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছেন না। চলছে আগের মতোই যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানো। কোনো বাসেই নেই সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা। থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

নতুন আইন প্রয়োগ ও গাড়ির কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা তা যাচাইয়ে মানিক মিয়া এভিনিউ, সায়েদাবাদ, ইকুরিয়া, কাকলি, মিরপুর, উত্তরাসহ আট স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয় বলে জানিয়েছেন বিআরটিএর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) এ কে এম মাসুদুর রহমান। অভিযানে মানিক মিয়া এভিনিউতে বাসের ভিতরে ভাড়ার তালিকা না রাখা, হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার ও নারীদের জন্য আসন বরাদ্দ না রাখায় জরিমানা করা হয়। কাকলি বাসস্ট্যান্ডের পাশে বেলা ১টা পর্যন্ত সাতটি মামলা ও ৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে হঠাৎ বাস সংকটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েন তেজগাঁও শিল্পঞ্চল এলাকার ইয়াসিন আলী। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, বাস না থাকায় সময়মতো অফিসে যেতে পারছি না। সকাল থেকে তিব্বত, নাবিস্কো ও মহাখালী থেকে উত্তরা ও গাজীপুরগামী বাসের তীব্র সংকট দেখা দেয়। এ বিষয়ে সাইনবোর্ড থেকে সাভারের ‘ঠিকানা এক্সপ্রেস’ বাসের সুপারভাইজার সাইফুদ্দীন বলেন, রুট পারমিট ও ড্রাইভারের লাইসেন্স না থাকায় তাদের ৩০টি বাস রাস্তায় নামেনি। এ ছাড়া শ্রাবণ, কোমলসহ যেসব বাস চলত তার বেশির ভাগের কাগজপত্র ও লাইসেন্স না থাকায় চলেনি। গুলিস্তানে প্রভাতী-বনশ্রী পরিবহনের বাসচালক লোকমান মিয়া বলেন, ‘শুনছি জায়গায় জায়গায় মোবাইল কোর্ট বসছে। তাই ভয়ে গাড়ি বাইর করছি না। কারণ যে পরিমাণে এখন জরিমানা, তাতে সব চালান শেষ হইয়া যাইব।’

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মাহমুদুল হাসান জানান, ‘এখনো সড়ক আইন কার্যকরের নির্দেশনা আসেনি। গাড়িচালকদের সতর্ক করছি। সচেতনতা সৃষ্টি করে যাচ্ছি। মামলা দেওয়া বন্ধ আছে। কিন্তু বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে নতুন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।’ এ অভিযানের কারণে আতঙ্কে রাস্তায় কম গাড়ি দেখা গেছে। তাদের কাছে আপডেট পোজ মেশিন কিংবা জরিমানার কাগজপত্রও না পৌঁছানোয় তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।

গত ১ নভেম্বর নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করে সরকার। তবে নতুন আইনে মামলা ও শাস্তি দেওয়ার কার্যক্রম মৌখিকভাবে দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে।

সর্বশেষ খবর