বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

পিয়াজের দাম এত বাড়বে ধারণা ছিল না : টিপু মুনশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পিয়াজের দাম বাড়তে বাড়তে যখন সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে, তখন বিদেশ সফর দুই দিন কাটছাঁট করে দেশে ফিরে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে নিজের দায় এড়ালেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। আর সেই দায় চাপালেন তিনি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর অন্য একটি দেশের ওপর। তিনি জানালেন, পিয়াজের দাম এত বেশি বেড়ে যাবে এটি তার ধারণাতেও ছিল না। কারণ ভারত তাকে কথা দিয়েছিল অক্টোবরেই রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে।

গতকাল বিকাল সাড়ে চারটায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এই জরুরি সংবাদ সম্মেলনে  তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন গতকালের পিয়াজের পাইকারি ও খুচরা মূল্য তুলে ধরেন। ব্যবসায়ী থেকে তার মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর গত ঈদে চামড়ার দাম নিয়ে বিপর্যয় দেখা দেয়। সাধারণ মানুষ চামড়ার মূল্য না পেয়ে মাটিতে পুঁতে রাখে- এমন পরিস্থিতি কেন হলো জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চামড়ার দাম থেকে তিনি শিক্ষা পেয়েছেন, এই অভিজ্ঞতা পরের বছর কাজে লাগাবেন।

এবার পিয়াজের দাম নাগালের বাইরে। রেকর্ড পরিমাণ দাম বেড়ে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় উঠেছে পণ্যটির দাম। চামড়ার দামের মতো পিয়াজের ক্ষেত্রেও মন্ত্রীর ‘অনভিজ্ঞতা’র কারণে পণ্যটির দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে কি-না? যদি তাই হয়, তবে পিয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে নিজের ‘ব্যর্থতা’ স্বীকার করেন কি-না? বাংলাদেশ প্রতিদিনের এমন প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে, এটি তাদের সিদ্ধান্ত। মিয়ানমার যে দাম বাড়িয়ে দেবে, তারপর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যে পিয়াজ আমদানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটি কে জানত। কখনো কখনো কোনো কোনো জিনিস আছে আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এর ওপর কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে তারা সুযোগ নিয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছি। ইতিমধ্যে প্রায় আড়াই হাজার ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে, কেউ কেউ জেলেও আছেন। পিয়াজের দাম বাড়ার পেছনে বাণিজ্যমন্ত্রী নিজের দায় এড়িয়ে বলেন, ভারত প্রথমে ১৩ সেপ্টেম্বর পণ্যটির রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে দেয়। ২৯ সেপ্টেম্বর তারা পুরোপুরি রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ৩ অক্টোবর আমি দিল্লিতে ছিলাম। ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললাম। তিনি আমাদের ব্যবসায়ীদের নিষেধাজ্ঞার আগে এলসি করা যে পিয়াজ ছিল সেগুলো ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানালেন। এ ছাড়া মহারাষ্ট্রে নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ার পর ২৪ অক্টোবরের মধ্যে পিয়াজের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিলেন আমাকে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও এটি জানেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো নির্বাচনের পর ভারত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি। তিনি বলেন, পিয়াজ আমদানি নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল। যদি ২৪ তারিখ ভারত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, তবে তারা অন্য দেশ থেকে আমদানি করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এরপর যখন আমরা দেখলাম ভারত নিষেধাজ্ঞা তুলছে না, তখন আমরা ব্যবসায়ীদের প্রচ  চাপ দিলাম। অন্য দেশ থেকে পিয়াজ আনতে বললাম। কিন্তু নতুন মার্কেট থেকে পণ্য আনতে সময় লাগে। আর এ সময়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ (ঘূর্ণিঝড় বুলবুল) দেখা দিল। মন্ত্রী বলেন, আমাদের ধারণা ছিল, মিসর থেকে পিয়াজ আনতে ২০ থেকে ২২ দিন সময় লাগবে। তবে পিয়াজের এলসি খোলার পর জাহাজ  পেতে সমস্যা দেখা দেয়। কারণ শুধু পিয়াজের জন্য জাহাজ ভাড়া করা যায় না। অন্য জাহাজে পিয়াজ তুলে দিতে হয়। পিয়াজের এই সংকটে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় কী করছিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাণিজ্য সংক্রান্ত দ্বি-পক্ষীয় আলোচনা করতে আমি অস্ট্রেলিয়ায় ছিলাম। ২১ নভেম্বর ঢাকায় আসার কথা ছিল। অথচ আমি দুই দিন আগেই এসেছি। বিমানের পিয়াজ কবে আসবে এবং কী পরিমাণ পিয়াজ বিমানে আনা হচ্ছে-এমন প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি জানান, তিনি বিমানে আনা পিয়াজের পরিমাণ জানেন না। তবে বিমানের ট্রানজিট জটিলতার কারণে পিয়াজ আসতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। যে পিয়াজ গতকাল আসার কথা ছিল সেটি বুধবার রাত থেকে আসতে শুরু করবে বলে জানান তিনি। সড়ক আইন নিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এটি আমদানিকৃত পিয়াজ সরবরাহে কোনো ধরনের বাধা তৈরি করবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলেছি। আর সব সলিউশন আমার হাতে নেই। পিয়াজ নিয়ে খুব বিপদে আছেন-এমন মন্তব্য করে সাংবাদিকদের কাছে ইতিবাচক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, অপপ্রচারের কারণেও অনেক ক্ষেত্রে পণ্যের দাম বাড়ে। লবণ নিয়ে যেটি হচ্ছে সেটি সম্পূর্ণ অবাস্তব। আমি অনুসন্ধান করেছি, লবণের কোনো সংকট নেই। সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিকটন মজুদ আছে। এক্ষেত্রে আপনাদের সবাইকে ‘পজেটিভ’ হতে হবে। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সাহায্য চান।

পিয়াজ নিয়ে আজ মধ্যরাতে ঢাকায় নামবে প্রথম ফ্লাইট : মিসর থেকে আমদানি করা পিয়াজ সৌদি এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে ঢাকার পথে রয়েছে। পিয়াজবাহী প্রথম সৌদি এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ এসভি ৩৮০২ মিসরের কায়রো থেকে জেদ্দা হয়ে ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবে ২০ নভেম্বর গভীর রাতে। বিমানে আনা এসব পিয়াজ সরকার টিসিবির মাধ্যমে কেজিপ্রতি ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করবে বলে জানান মন্ত্রী। তবে প্রথম ফ্লাইটে কী পরিমাণ পিয়াজ আনা হচ্ছে তা জানাতে পারেননি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। গতকাল বিকালে সচিবালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী বিমানে আসা পিয়াজের সর্বশেষ অবস্থা সাংবাদিকদের জানান। এ সময় মন্ত্রী বলেন, বিমানযোগে মোট ৫০ হাজার মেট্রিক টন পিয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২০ নভেম্বর থেকে প্যাসেঞ্জার ও কার্গো ফ্লাইটে পিয়াজ অব্যাহতভাবে ঢাকায় আসবে। সরকারি-বেসরকারিভাবে আনা এসব পিয়াজ ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হবে। টিপু মুনশি বলেন, টিসিবির ট্রাক সেল ও নিয়োজিত ডিলারের মাধ্যমে সারা দেশে এ পিয়াজ বিক্রি করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন জানান, আজ (বুধবার) বিমানের প্রথম ফ্লাইট অবতরণের পর তুরস্ক থেকে একটি চার্টার্ড বিমান পিয়াজ নিয়ে ২১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকায় পৌঁছাবে। ২২ ও ২৫ নভেম্বর আরও দুটি ফ্লাইট আসার কথা রয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে বিমানে পিয়াজ আসতেই থাকবে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর