বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাজার মনিটরিং করবে কে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

পিয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই লবণ সংকটের গুজবে সরগরম দেশ। গতকাল লবণ নিয়ে গুজব ঠেকাতে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। অভিযোগ উঠেছে সিন্ডিকেটে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়াচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এবং সিটি করপোরেশনের শক্তিশালী বাজার মনিটরিং কার্যক্রম না থাকায় অধরা থাকছে এই চক্র। সিটি করপোরেশনগুলোতে বাজার মনিটরিংয়ে নেই কোনো স্বতন্ত্র টিম। মাঝে মাঝে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে চালানো হয় ঝটিকা অভিযান। এই এক দিনের অভিযানে নিয়ন্ত্রণে আসে না সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বাজার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি সমন্বিত টিম বাজার তদারকি করে। এ টিমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রতিনিধি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থাকেন। ঢাকার দুই সিটিতে দুটি টিম অভিযান পরিচালনা করে। এ ছাড়া জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের তিন থেকে চারটি টিম প্রতিদিন বাজার অভিযান পরিচালনা করছে। কিন্তু সারা দেশের বাজার মনিটরিং পরিস্থিতি খুবই নাজুক। পুরো জেলায় ভোক্তা অধিকারের মাত্র একজন কর্মকর্তা দিয়ে চলছে বাজার মনিটরিং, অভিযান পরিচালনা সবকিছুই। তাই লেজেগোবরে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দেশজুড়ে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বাজারে আমাদের মনিটরিং টিম কাজ করে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং বাজার মালিক সমিতির সভাপতি এই মনিটরিংয়ের তদারকি করেন। প্রতিদিন দাম নির্ধারণ করে তালিকা টানিয়ে দেওয়া হয়। কেউ না মানলে তখন তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সিটি করপোরেশনের আওতাধীন অন্য বাজারগুলোর মনিটরিং পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকার ভিতরে ৪৩টি বাজার আছে। কিন্তু এগুলো মনিটরিংয়ের জন্য সুপারভাইজার পদ আছে ছয়টি। এই সবগুলো পদই শূন্য। তাই এসব বাজারের সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে চাইলেও সিটি করপোরেশনের পক্ষে সম্ভব না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিমে আমাদের একজন প্রতিনিধি দেওয়া হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী সরদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ডিএসসিসি এলাকায় মোট ২৯টি বাজার রয়েছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের আওতায় কাঁচাবাজার রয়েছে ১৩টি। এগুলোর মনিটরিংয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টিমে আমাদের একজন প্রতিনিধি কাজ করেন। এ ছাড়া রোজার সময় আমাদের ১৪টি টিম মনিটরিং করে। এ ছাড়া মনিটরিংয়ের বাড়তি কোনো ব্যবস্থা নেই। জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে মনিটরিং কার্যক্রম। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, লোকবল সংকটের কারণে অধিদফতরের কাজ চলছে খুঁড়িয়ে। প্রতি জেলায় মাত্র একজন সহকারী পরিচালক ও একজন কম্পিউটার অপারেটর দিয়ে চলছে কার্যক্রম। এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক (উপসচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, লোকবল সংকট থাকলেও বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির আওতায় আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার কোনো সুযোগ নেই। তবে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে যেন পণ্য বিক্রি না হয় সে বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মানুষের ক্ষমতার মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম ঠিক রাখাটা সরকারের দায়িত্ব। অনেক সময় দেখা যায়, মজুদদারি, সরবরাহ ব্যাহত করা, চাঁদাবাজি এমন নানা অপকর্মের কারণে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং দুষ্কৃতকারীদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে। এ জন্য মোবাইল কোর্টের পাশাপাশি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষকে নিজ নিজ দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর