বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

অলিকে নিয়ে বিব্রত বিএনপি

জামায়াত ও কল্যাণ পার্টিকে নিয়ে পৃথক মঞ্চ, চার প্রভাবশালী নেতাকে দলে টানছে বিএনপি

মাহমুদ আজহার

অলিকে নিয়ে বিব্রত বিএনপি

২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল এলডিপির কর্নেল (অব.) অলি আহমদকে নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে বিএনপি। জামায়াতে ইসলামী ও কল্যাণ পার্টির নেতাদের নিয়ে ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’ নামে পৃথক মঞ্চ তৈরি করে সভা-সমাবেশ করায় ক্ষুব্ধ দলটি। প্রায় পাঁচ মাস ধরে বিএনপির নেতারা অলি আহমদের সঙ্গে কথাবার্তাই বলেন না। দলের হাইকমান্ড থেকেও বার্তা দেওয়া হয়েছে, বিএনপি নেতারা যেন অলির কোনো অনুষ্ঠানে না যান এবং তার সঙ্গে কথাবার্তা না বলেন। এই সময়ের মধ্যে ২০-দলীয় জোটের তিন দফা বৈঠক হলেও অলি আহমদও তাতে অংশ নেননি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এরই মধ্যে কর্নেল অলির দলেও ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। আবদুল করীম আব্বাসীসহ দলের সাত নেতা নতুন এলডিপির ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যরা হলেন- আবদুল গনি, শাহাদাত হোসেন সেলিম, এম এ বাশার, সৈয়দ ইবরাহিম রনক, তৌহিদুল আনোয়ার ও কাজী মতিউর রজমান। তারা আবার বিএনপিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টাও চালাচ্ছেন। বিএনপি তাদের দলে নিলে এলডিপি বিলুপ্ত ঘোষণা করবেন তারা। অবশ্য বিএনপির হাইকমান্ড থেকে ইতিমধ্যে ‘সবুজ সংকেত’ও পেয়েছেন এলডিপির এসব নেতা। কর্নেল অলিকে চাপে রাখতে তার দল থেকে সাত নেতাকে বিএনপিতে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কর্নেল অলি আহমদের সঙ্গে আমাদের কোনো দূরত্ব নেই। তবে তিনি জাতীয় মুক্তি মঞ্চ নামে যেটা গঠন করেছেন তা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানতাম না।’

এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে তার কোনো দূরত্ব নেই। ২০-দলীয় জোটের সঙ্গেও কোনো দূরত্ব নেই। তবে দলকে শক্তিশালী করতে এলডিপি নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে। দল থেকে শাহাদাত হোসেন সেলিমকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, জুনে নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গঠনের পর থেকে বিএনপির সঙ্গে কর্নেল অলি আহমদের দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। ২০-দলীয় জোটকে না জানিয়ে এমনকি প্রধান শরিক দল বিএনপিকে কিছু না বলে নতুন মঞ্চ করায় ক্ষুব্ধ হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের সিনিয়র নেতারা। মুক্তিমঞ্চ ঘোষণার আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ একাধিক নেতা বিষয়টি সম্পর্কে জানতে ফোনে তাঁর সঙ্গে কথাও বলতে চান। এ ধরনের কিছু করার আগে ২০-দলীয় জোটে বিষয়টি তোলার অনুরোধ জানানো হয় বিএনপির পক্ষ থেকে। কিন্তু কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ ঘোষণা দেন কর্নেল অলি। জাতীয় মুক্তি মঞ্চ ঘোষণার পর ২০ দল ভাঙারও ষড়যন্ত্র হচ্ছে আশঙ্কায় অলি আহমদের সঙ্গে বিএনপি নেতারা আর কোনো যোগাযোগ করেননি।

বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, নির্বাচনের আগে বিভাগীয় শহরে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে কর্নেল অলিকে অংশ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু যোগ দেননি অলি আহমদ। নির্বাচনের পর তার কিছু বক্তব্য নিয়েও বিএনপি নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। এরপর থেকে অলি আহমদের সঙ্গে টানাপড়েন চলছেই।

জানা যায়, নতুন জোট গঠনের শুরু থেকেই সব কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে ২০-দলীয় জোটের দুই নিবন্ধিত শরিক দল বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)। সাম্প্রতিক সময়ে দু-একটি কর্মসূচি জামায়াতের প্রতিনিধিদেরও দেখা যায়। নতুন জোটকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে জাগপা ভেঙে দুই ভাগ হয়েছে। দলটির সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান জাতীয় মুক্তি মঞ্চকে সমর্থন দেওয়ার কারণে সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমানের সঙ্গে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। পরে এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটে। এখন জাগপার মূল অংশের সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান খান। আর অন্য অংশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান।

২০ দলের শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, জাতীয় মুক্তিমঞ্চে যোগ দেওয়ার জন্য আমাদেরও বলা হয়েছিল। আমরা যখন অবগত হয়েছি এই উদ্যোগের সঙ্গে বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, তখন আর আমরা সাড়া দেইনি। আমরা জোট করেছি বিএনপির সঙ্গে। বিএনপিকে বাইরে রেখে তো আমি খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন করতে পারি না।

কর্নেল অলির সঙ্গ ত্যাগ করে নতুনভাবে এলডিপিকে সাজানোর ঘোষণা দিয়ে শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, অলি আহমদের সঙ্গে তার মতের মিল ছিল না। তাই তাকে ত্যাগ করেছেন। এখন সারা দেশে এলডিপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তারা যদি চায়, বিএনপিতে যোগদান করে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করার, তাহলে তাই হবে।

সর্বশেষ খবর