বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাজধানী সুপার মার্কেটে ভয়াবহ আগুন

অর্ধশত দোকান ভস্মীভূত

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানী সুপার মার্কেটে ভয়াবহ আগুন

টিকাটুলির রাজধানী সুপার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বিকাল সোয়া ৫টার দিকে মার্কেটের দোতলার পশ্চিম দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মার্কেটটি টিনশেডের হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। তিন ঘণ্টার চেষ্টায় রাত সোয়া ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে মার্কেটের অর্ধশত দোকান পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে।

আগুন নেভানোর সময় ধোঁয়ায় মমিন নামে এক নিরাপত্তাকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্র্মীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। আগুন লাগার পর অভিসার সিনেমাহল-সংলগ্ন রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। উৎসুক মানুষের প্রচন্ড  ভিড় থাকায় ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ সদস্যরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে উৎসুক জনতার ভিড় সামলানোর চেষ্টা করেন। রাজধানী সুপার মার্কেটের পশ্চিম পাশের দোতলার একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো মার্কেটে। আগুনের ধোঁয়ায় পুরো টিকাটুলি এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। বহুদূর থেকেও আগুন ও ধোঁয়া দেখা গেছে। রাজধানী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী আবু বকর জানান, মার্কেটের দোতলার পশ্চিম পাশে আগুন লাগার খবর পেয়ে আমরা বাইরে বেরিয়ে আসি। সেখানে বেডশিট, কাপড়, কসমেটিক্স, টেইলার্স ও সোনার দোকান ছিল। অল্প সময়ের মধ্যে আগুন পুরো দোতলায় ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে অন্তত ১৮০টি দোকান ছিল। এর মধ্যে ৩০-৩৫টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অবরোধ থাকায় রাস্তা ফাঁকা ছিল। ফলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভাতে পেরেছেন। এর ব্যত্যয় হলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যেত। আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। ১৯৯৫ সালে চালু হওয়া দোতলা টিনশেড এই মার্কেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ১ হাজার ৭৮৮টি দোকান রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, বিকাল সোয়া ৫টার দিকে টিনশেড ওই মার্কেটে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট পাঠানো হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে আরও ইউনিট চাওয়া হলে যথাক্রমে ৬, ২ ও ৩টি ইউনিট পাঠানো হয়। আগুন নেভাতে মোট ২৫টি ইউনিট কাজ করে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন। এ ছাড়াও পুলিশ, র‌্যাব, আনসার সদস্যরা ও স্বেচ্ছাসেবীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে সহযোগিতা করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী শাহ পরান দোকানের মালিক শাহ পরান জানান, নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটের দোতলায় তার দোকান। তার দোকানের সামনে প্রবেশ গেটের কলাপসিবল গেটে ঝালাইয়ের কাজ চলছিল।

তার দোকানের পাশেই একটি ফোম বিক্রির দোকান। ঝালাইয়ের কাজ করার সময় ওয়েল্ডিং থেকে আগুনের ফুলকি দোকানের সামনে রাখা ফোমে পড়ে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তের মধ্যে ফোমের মধ্যে কালো ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। তখন সবাই আগুন আতঙ্কে চারদিক দিগি¦দিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। ক্রেতারাও আত্মরক্ষার্থে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকেন।

আল মাহের জুয়েলার্সের মালিক আবু তাহের জানান, নিচতলায় তার দোকানসহ মোট ৪৩টি গহনার দোকান আছে। আগুন লাগার পর প্রাণ নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় শাটার নামানো হলেও অনেকে তালা মারতে পারেনি। তাহেরের ধারণা মার্কেটের দোতলায় মাঝ বরাবর আগুনের সূত্রপাত হয়। সেখানে পোশাক, টেইলার্স, ফোম, কসমেটিকস, খেলনা ও খাবারের দোকান ছিল।

ওয়ারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, যখন আগুন লাগে তখন সব দোকান খোলা ছিল। বিকালে মার্কেটের পূর্ব দিক থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। এরপর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ব্যবসায়ী ও অন্যরা মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসেন। মার্কেটের নিচতলার দোকানগুলোয় তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন জানান, আগুন লাগার কারণ উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে।

জানা গেছে, এই মার্কেট-সংলগ্ন র‌্যাব-৩ এর সদর দফতর, ডিএসসিসির ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস ও চারতলা বিশিষ্ট মার্কেটের মসজিদ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর