বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

তিন ধরনের ঘাটতির ভিতরে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

তিন ধরনের ঘাটতির ভিতরে বাংলাদেশ

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বাংলাদেশ তিন ধরনের ঘাটতির ভিতরে রয়েছে। এগুলো হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ও জাতীয় সঞ্চয়। এর সঙ্গে বিনিয়োগের ঘাটতি আছে। যে পরিমাণ সরকারি ব্যয় করা হয়, তা পুরোপুরি নিজস্ব কর আহরণের মাধ্যমে পূরণ হয় না। ফলে আর্থিক ঘাটতি হয়। আবার বৈদেশিক লেনদেন করার ক্ষেত্রেও ঘাটতি রয়েছে। এটা যেমন চলতি হিসাবে আছে, তেমনি সামগ্রিক লেনদেনের ঘাটতিও আছে। এই তিন ধরনের ঘাটতি পূরণে সরকারকে বৈদেশিক ঋণ নিতে হয়। গতকাল পুরানা পল্টনে ইআরএফ সেমিনার হলে আয়োজিত ‘ইউএনসিটিএডি এলডিসি রিপোর্ট-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের ‘বৈদেশিক উন্নয়ন সাহায্যে বর্তমান ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মূল প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডির জেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। এতে আরও বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, বিকাশমান অর্থনীতির চরিত্র হিসেবে ভবিষ্যতেও এই ঋণের চাহিদা থাকবে। এটা নেতিবাচক দেখার কোনো প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ কোনো দিন বৈদেশিক দায়দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। গত তিন বছরে বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে। আবার যে পরিমাণ টাকা ঋণ পাচ্ছি তা ব্যবহার করতে পারছি না। দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) সাড়ে ৩৭ শতাংশ বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। তাই উন্নয়ন কর্মসূচি এখনো বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, সাশ্রয়ীভাবে বৈদেশিক ঋণ ব্যবহারে বাংলাদেশের নীতিগত অবস্থান বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে। একদিকে সাশ্রয়ীভাবে ঋণ নিতে হবে, অন্যদিকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ঋণের যৌক্তিকতা, ব্যবহার ও দায়দেনার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে হবে। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা চাই। দেশে কর না বাড়লে বিদেশিরা টাকা দিতে উৎসাহী হবেন না। এ ক্ষেত্রে অর্থ পাচার রোধে সতর্ক হতে হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিপিডির বিশেষ ফেলো বলেন, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অর্থ পাচারের পরিমাণ আমাদের দেশের মোট আহরিত রাজস্বের ৩৬ শতাংশ। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে এটা অন্যতম বাধা। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলে দেশের সামাজিক ব্যবস্থা ও পরিবেশগত ভারসাম্য ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। আবার বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ হয়ে গেলে সামাজিক উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই বৈদেশিক অনুদান ও ঋণ সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য নীতিগত পুনর্বিবেচনা করার সময় এসেছে।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিশ্বের স্বল্পোন্নত ৪৭টি দেশ বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভর করে। তারা সবাই বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভর। কিন্তু ক্রমান্বয়ে সাহায্যের পরিমাণ ও গুণগত দিক দুটোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, বৈদেশিক অনুদাননির্ভরতা কমলেও বৈদেশিক অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়নি। তবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ায় আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী দেশগুলো আর্থিক সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দিয়েছে। অনুদানের তুলনায় বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের পরিমাণ এখন বেশি; যা উন্নয়নশীল দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

সর্বশেষ খবর