শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আইন বাস্তবায়নের আগেই শিথিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন সড়ক আইন-২০১৮ বাস্তবায়নের আগেই শিথিল হয়ে যাচ্ছে অঘোষিতভাবে। পরিবহন ধর্মঘটের চাপে পড়ে এ আইন যে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিথিল হয়ে যাচ্ছে তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে মন্ত্রীর কথায়। সড়কে পরিবহন শ্রমিকদের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, আইন প্রয়োগে কোনো বাড়াবাড়ি করা হবে না। আইনের কোনো অসঙ্গতি থাকলে তা আবারও বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। সাধারণ মানুষ ও যাত্রীরা মনে করছেন, পরিবহন মালিকদের কাছে শুধু জনগণই নয়, সরকারও জিম্মি। তাই এই আইন কার্যকরে শৈথিল্য বা বিলম্ব করা হচ্ছে। জানা যায়, নতুন আইন বাস্তবায়নে ঢাকার ট্রাফিক পুলিশের তত্ত্বাবধানে গতকাল থেকেই শুরু হয়েছে ‘ট্রাফিক পক্ষ’, যা চলবে আগামী ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আগে ট্রাফিক সপ্তাহ বা পক্ষে সবাইকে সচেতন করার পাশাপাশি আইন মানতে বাধ্য করা হলেও এবার তা নেই। গতকাল ঢাকার একাধিক সার্জেন্ট জানান, আজ থেকে ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু। মূলত নতুন আইনের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে। তবে এখনো নতুন আইনে জরিমানা ও মামলা দেওয়া শুরু হয়নি। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট চলছে, তাই বিষয়টা বিবেচনাধীন আছে। কারণ এ বিষয়ে ওপরের কোনো নির্দেশনা নেই। বুধবার রাতে ধানমন্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে ধর্মঘট আহ্বানকারীদের সঙ্গে প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পরিবহন শ্রমিক-মালিক উভয়ই এই আইনের সংশোধন করার জন্য আমাদের কাছে বলেছেন। নতুন আইনের ১৬টি ধারার মধ্যে ৯টি ধারায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আপত্তি আছে। সেগুলো ভেবে দেখা হচ্ছে। নতুন আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নিজেদের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে দীর্ঘদিনের একটা অসঙ্গতি ছিল। তাই এখন চালকরা যে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে চালাচ্ছেন, আগামী সাত মাস তারা সেভাবেই গাড়ি চালাতে পারবেন। অর্থাৎ হালকা যান চলাচলের লাইসেন্স নিয়ে যারা ভারী যান চালাচ্ছেন, তাদের লাইসেন্স হালনাগাদ করতে আগামী জুন মাস পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা পার্কিংয়ের জায়গা নির্ধারণ করে দিতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন হাইওয়েতে ট্রাক বে করে দিতে, চালকদের জন্য বিশ্রামের জায়গা করে দিতে। সেগুলো না হওয়ার বিষয়টি তারা তুলে ধরেছেন। এসব অসঙ্গতি সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর কাছে সুপারিশসহ পাঠানো হবে। অবশ্য ৯ দফা ছাড়াও আরও কিছু দাবি ছিল। যে দাবিগুলো সঙ্গত মনে করা হয়েছে, সে ব্যাপারে কথা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকার গাড়ির ফিটনেস, কাগজপত্র হালনাগাদ সময়মতো করতে না পারায় যে জরিমানা হয়েছে, তাও মওকুফের দাবি জানিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসব ব্যাপারে যোগাযোগমন্ত্রী মেনে নেবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। গাড়ির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ নিয়েও কথা হয়েছে। সেগুলোর ব্যাপারেও ৩০ জুনের মধ্যে বিআরটিএর চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করা হবে। নতুন আইনে যেসব ধারায় আপত্তি রয়েছে, সেসব বিষয় সুপারিশসহ সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেছেন, বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা আইনের বিধিমালাও প্রণয়ন করছি। বিধিমালা প্রণয়ন হলেই সব সমস্যার সমাধান হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আইনটাই সব কিছু নয়, বিধি তৈরি হচ্ছে, প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিধি পেলে আর কোনো সঙ্কট থাকবে না। জেব্রাক্রসিং, সাইন অ্যান্ড সিগনাল এগুলো বিধিতে আছে বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সর্বশেষ খবর