শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

পিয়াজকাণ্ডে সাড়ে চার হাজার প্রতিষ্ঠানকে শাস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পিয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানোয় ৪ হাজার ৭০৮টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজার পরিদর্শন করে এসব দ- দেওয়া হয়েছে। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে আমদানি বাড়ায় পিয়াজের দাম ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। লবণ বিক্রি হচ্ছে প্যাকেটের গায়ে লেখা মূল্যেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পিয়াজের দাম বাড়ার পর পরই সারা দেশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিম,  ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরসহ স্থানীয় প্রশাসন ও মোবাইল টিমগুলো মাঠে নামে। স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আরও কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে যেগুলো ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের তথ্যে আসেনি। সব তথ্য সংযুক্ত করলে দন্ড প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে বলে জানান কর্মকর্তারা। এর আগে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছিলেন, সিন্ডিকেট করে অস্বাভাবিকভাবে পিয়াজের দাম বৃদ্ধি ও মজুদের কারণে প্রায় আড়াই হাজার ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পিয়াজের রপ্তানি মূল্য বাড়িয়ে দেয় ভারত। এরপর থেকেই পণ্যটির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় ওঠে। ২৯ সেপ্টেম্বর পার্শ্ববর্তী দেশটি পণ্যটি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকায় উঠে দাম। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে পিয়াজের দাম। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর ১৩০ টাকা কেজির পিয়াজ এক লাফে ৭০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় উন্নীত হয়। ভারতের রপ্তানি বন্ধ ও বুলবুলের সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পণ্যটির সরবরাহ কমিয়ে দেয়। ফলে পাইকারি বাজারে দেখা দেয় সংকট। আর এতেই পিয়াজের দাম বেড়ে ২৫০ টাকায় ওঠে। কোথাও কোথাও ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে বলেও খবর পাওয়া যায়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ৪৬৬টি বাজার পরিদর্শন করে পিয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়ায় ১ হাজার ১১৩টি প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনা হয়। গত অক্টোবর মাসে শাস্তির আওতায় আনা হয় ২ হাজার ৪৫৬টি প্রতিষ্ঠানকে। চলতি মাসের ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ৫১টি বাজারে অভিযান চালিয়ে ১ হাজার ১৩৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বিমানের পিয়াজ ৪৫ টাকা কেজি : জরুরি ভিত্তিতে পিয়াজ আমদানির ঘোষণা দেওয়ার পর বুধবার থেকে বিমানযোগে পিয়াজ আসতে শুরু করেছে। বুধবার সন্ধ্যায় পাকিস্তান থেকে একটি ফ্লাইট ও মধ্যরাতে মিসর থেকে আরেকটি ফ্লাইট পিয়াজ নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বিমানবন্দরে পিয়াজের বিমান আসার পর পরই দ্রুততার সঙ্গে পণ্য খালাস করা হয়। এসব পিয়াজ ভর্তুকি মূল্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে রাজধানী ঢাকার ৫০টি পয়েন্টে এবং সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বকসী জানান, ঢাকায় আগে ৩৫টি পয়েন্টে ট্রাকসেলে পিয়াজ বিক্রি হতো। বিমানের পিয়াজ আসায় রাজধানীতে অতিরিক্ত ১৫টি পয়েন্টে বিক্রি হবে টিসিবির পিয়াজ। এ ছাড়া সারা দেশে যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানেই যাবে টিসিবির পিয়াজ।

 

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, গতকাল থেকেই ৪৫ টাকা কেজি দরে টিসিবির পিয়াজ বিক্রি শুরু হয়েছে শহরের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে। জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা জানান, প্রাথমিকভাবে ৩ টন পিয়াজ বরাদ্দ হয়েছে। বরাদ্দ অনুসারে ভর্তুকি মূল্যে পিয়াজের বিক্রি কার্যক্রম বাড়ানো হবে।

 

আমদানি হচ্ছে ৫৮ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পিয়াজ : বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) আকতার হাসান জানান, তাদের গ্রুপ মিসর ও তুরস্ক থেকে বাল্ক ও কনটেইনারের মাধ্যমে সমুদ্রপথে ১১টি এলসির মাধ্যমে ৫৮ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পিয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলেছে। সমুদ্রপথে আসতে দেরি হওয়ায় এবং দ্রুত চাহিদা মেটাতে বিমানে করে ১ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন পিয়াজ আমদানির এলসি খোলা হয়। এরই মধ্যে গত ২০ নভেম্বর রাত থেকে আকাশ পথে এস আলম গ্রুপের পিয়াজ আসতে শুরু করেছে। গতকাল মধ্যরাতে বিসমিল্লাহ এয়ারলাইন্সের (৭৪৭) কার্গো বিমানে ১০৫ মে. টন পিয়াজ আসার কথা রয়েছে বলে জানান এস আলম গ্রুপের ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, মোট ১০টি কার্গো বিমানের বুকিং নিশ্চিত করা হয়েছে, যেগুলোতে প্রতিদিন ১০৫ থেকে ১১০ মে. টন করে পিয়াজ আনা হবে। এগুলো বাজারে টিসিবি নির্ধারিত মূল্যে ছাড়া হবে।

পিয়াজের দাম কমছে ধীরে, লবণ স্বাভাবিক : পিয়াজের আমদানি বাড়ায় পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। তবে দাম কমার এই প্রক্রিয়াটি চলছে ধীরগতিতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি পিয়াজ পুরোদমে বাজারে আসতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তখন পণ্যটির দাম কমে ১০০ টাকার নিচে চলে আসতে পারে। গতকাল রাজধানীতে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে পিয়াজ।  চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পণ্যটির দাম ছিল ১০০ থেকে ১৩০ টাকা। খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকায়। এদিকে গুজব ছড়িয়ে কৃত্রিমভাবে লবণের সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর পর সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতার পর এখন পণ্যটির বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন দোকানে প্যাকেটের গায়ে লেখা মূল্যে লবণ বিক্রি হয়েছে। সরবরাহও ছিল প্রচুর। পণ্যটি নিয়ে ক্রেতা ও দোকানি কারও কাছে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ খবর