শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে বীণা সিক্রি

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে লাভবান হয়েছে জনগণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে লাভবান হয়েছে জনগণ

বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধন খুব মজবুত। এই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে দুই দেশের জনগণই লাভবান হয়েছে। সম্প্রতি কয়েক বছরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রচেষ্টায় তা আরও বেগবান হয়েছে। সম্পর্কের উন্নয়নে এশিয়ার অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিস্ময়ে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ এবং ভারত। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ১৭ নভেম্বর সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার হয়। সম্প্রতি কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব সংলাপে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন তিনি। এ সময় একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে কথা বলেছেন।

তিস্তা চুক্তির বিষয়ে বীণা সিক্রি বলেন, তিস্তা চুক্তির খসড়া চলছে। ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দুই দেশের উচিত অতি দ্রুত বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। কারণ ধীরে ধীরে তিস্তায় পানি প্রবাহের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তাপমাত্রা বাড়ছে, বরফ গলছে, পানি প্রবাহ কমছে। প্রযুক্তিগত বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা খুব জরুরি। তিনি বলেন,  বর্ষা মৌসুমে ৯০ শতাংশ পানি আসছে আর গ্রীষ্মে আসছে ১০ শতাংশ। এটা প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক ইস্যু। এর সমাধান হবে। পানি বাংলাদেশে আসবেই। কিন্তু আলোচনা করতে হবে শুষ্ক মৌসুমে কীভাবে এই পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। দুই দেশের পানি বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানীদের নিয়ে এ কাজ এগিয়ে নিতে হবে। ‘রিভার হাইড্রোলজিক্যাল সার্ভে’ এক্ষেত্রে খুব সহায়ক হবে। 

ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বলেন, গঙ্গা চুক্তির ক্ষেত্রে আগের সব তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এই নদীর ক্ষেত্রেও এরকম তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন। বন্ধুত্বপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে এই পানি চুক্তি নিশ্চয় সম্পন্ন হবে। মানুষকে এ বিষয়ে জানাতে হবে, একাত্ম করতে হবে। তাহলে সবার কাছে তথ্য থাকবে। ভুল বোঝাবুঝির কোনো সুযোগ থাকবে না। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) বাংলাদেশে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এনআরসি বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত এসেছে তা সরকারের নয়, ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের। পানি চুক্তি যেমন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তেমন অবৈধ অধিবাসীও ভারতের জনগণের কাছে স্পর্শকাতর বিষয়। সুপ্রিম কোর্টের তালিকায় অবৈধ বসবাসকারী হিসেবে কিছু মানুষের নাম এসেছে। তারা আপিল করেছে। এটা প্রক্রিয়াধীন। এই বসবাসকারী মানুষ কোন দেশের এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় আমি যাচ্ছি না। কিন্তু সরকার তাদের দেশ থেকে বের করে দেবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত আসেনি। তারা সেখানে বাস করছে, কাজ করছে। হয়তো তাদের ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া যেতে পারে। এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সেই সিদ্ধান্ত আদালতের। এটা বিজেপি এবং আসাম সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল। এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক ইস্যু। কিন্তু কেউ বলেনি নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারলে তাদের বের করে দেওয়া হবে। আমার মনে হয় না এটা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে। 

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে বীণা সিক্রি বলেন, বাংলাদেশে এখন স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠিত হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিস্ময়কর। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেশে সমৃদ্ধি আনে। এতে মধ্যবিত্ত শ্রেণি শক্তিশালী হয়। বাংলাদেশে এখন কোনো অস্থিরতা, সহিংসতা নেই। ২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছিল। গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নির্দিষ্ট হওয়াও আবশ্যক। রাজনৈতিক দলের দাবি-দাওয়া ভিন্ন বিষয়। নির্বাচন সংঘটিত না হলে সংবিধান লঙ্ঘন হয়। এতে দেশে অস্থিরতা তৈরি হয়। বিএনপি ২০১৯ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে এবং ফলাফল মেনেও নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছেন। বাংলাদেশ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ দমনে সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ-ভারতে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তিনি বলেন, কক্সবাজারে কয়েক বছর আগে এসেছিলাম। তখন এত হোটেল, জাঁকজমকপূর্ণ ট্যুরিজম স্পট ছিল না। ভারত থেকে মানুষ কক্সবাজারে বেড়াতে আসতে পারে। কলকাতা-কক্সবাজার সরাসরি ফ্লাইটও চালু করা যেতে পারে।

রোহিঙ্গা সংকটে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে বীণা সিক্রি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। মিলিয়ন সংখ্যক মানুষ ক্যাম্পে থাকছে। মাদক চোরাচালান হচ্ছে, উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে বলতে শুরু করেছেন। নিরাপত্তা বাড়াতে ভারত সহায়তা করতে পারে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরে যেতেই হবে তাদের নিজের দেশে। প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করতে হবে। এ কাজে ভিত্তি হচ্ছে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যকার চুক্তি। এই প্রত্যাবর্তন দ্রুত শুরু না হলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। সমস্যা নিরসনে সব দেশের সরকারকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে ভারত কীভাবে দেখে জানতে চাইলে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বলেন, আমরা বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে সবচেয়ে বেশি জোর দিই। আঞ্চলিক সম্পর্কের পাশাপাশি রয়েছে বিমসটেক সম্পর্ক। একটা বিষয় বলা প্রয়োজন চীন দক্ষিণ এশিয়ার দেশ নয়, উত্তর এশিয়ার। তাই প্রথমে আমরা সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক দেখব। চীনের সঙ্গে ভারতেরও ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আমরা সতর্ক কোনো দেশ যেন কারও ক্ষতি না করে। সবার উন্নয়ন হোক- এটাই প্রত্যাশা।

সর্বশেষ খবর