মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রতারণায় মধ্যপ্রাচ্যে নারীর স্বপ্নভঙ্গ

মুহাম্মদ সেলিম, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরে

প্রতারণায় মধ্যপ্রাচ্যে নারীর স্বপ্নভঙ্গ

পুরান ঢাকার মেয়ে তাহমিনা (ছদ্মনাম)। একসময় মডেলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একবুক আশা নিয়ে জীবিকার তাগিদে মাস তিনেক আগে পূর্বপরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে যান সংযুক্ত আরব আমিরাতে। যাওয়ার আগে তাকে ধনাঢ্য আরব শেখের বাসায় কাজ দেওয়ার কথা বলা হলেও আমিরাতে নিয়ে যাওয়ার পর ২০ হাজার দিরহামে বিক্রি করে দেওয়া হয় এক দালালের কাছে। ওই দালাল পরে তাকে বিক্রি করে দেন একটি ড্যান্স বারে। তাহমিনা বর্তমানে দুবাই রাজ্যের ‘বার দুবাই’ এলাকায় একটি ড্যান্স বারে ‘ডিজে’ হিসেবে আছেন। শুধু তাহমিনা নন, এভাবে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে আরব আমিরাতে আসা অনেক নারীরই স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে প্রতারক চক্রের কবলে পড়ে।

জানা যায়, লোভনীয় চাকরি দেওয়ার কথা বলে বাংলাদেশি নারীদের সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিয়ে যাওয়া হয় ফাঁদে ফেলে। কোনো নারী যাওয়ার জন্য রাজি হলে ভিসাসহ বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরি করেন দালাল চক্রের সদস্যরা। এরপর ওই নারীদের পরিবারের সদস্য পরিচয় দিয়ে ‘ভিজিট’ ভিসায় নিয়ে যাওয়া হয় আমিরাতে। ওইখানে যাওয়ার পর প্রকাশ হতে থাকে দালাল চক্রের আসল মুখোশ। তারা নারীদের শুরুতে টাকার লোভ দেখিয়ে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হওয়ার প্রস্তাব দেন। যদি কেউ দালাল চক্রের প্রস্তাবে রাজি না হন, তার ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী নারীদের বিক্রি করে দেওয়া হয় আমিরাতের স্থানীয় দালালদের কাছে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক নারীকে বিক্রি করা হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার দিরহাম। পরে স্থানীয় দালালরা বাংলাদেশি নারীদের বিক্রি কিংবা ভাড়ায় দেন বিভিন্ন বার, ড্যান্স বার কিংবা হোটেলে। এখানে নারীদের ওপর প্রতিনিয়ত চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে কর্মরত এক প্রবাসী টেলিভিশন সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অসংখ্য নারী চাকরির খোঁজে আমিরাতে আসেন। এখানে আসার আগে তাদের ভালো বেতনের লোভনীয় চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে এসে ঠিক উল্টোটা হয়। তিন মাসের ভিজিট ভিসায় এসে অহরহ প্রতারিত হচ্ছেন নারী। ভাষা ও নানান জটিলতার কারণে অনেকে এ অত্যাচার ও প্রতারণার বিষয়ে মুখ খুলতে পারেন না।’ প্রতারণার শিকার তাহমিনা বলেন, ‘পরিবারের অর্থনৈতিক দুরবস্থা দেখে কাজের জন্য এখানে এসেছি। কিন্তু দালাল চক্র প্রতারণা করে জীবনটাই ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এখন অপেক্ষায় আছি, কখন তারা করুণা করে আমাকে দেশে পাঠাবে- এ আশায়।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর