বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

জানুয়ারিতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান

ক্যাসিনোকান্ডের ধারাবাহিকতায় চলবে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি বন্ধের সর্বাত্মক লড়াই

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান। ক্যাসিনো ও টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে চলমান শুদ্ধি অভিযানের পর প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে সরকার।

শুদ্ধি অভিযানের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দুদকের জালে ধরা পড়েছেন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার তিন শতাধিক ব্যক্তি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিতে সম্পৃক্তদের ব্যাপারে নেওয়া হচ্ছে খোঁজখবর। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।

সরকারের শীর্ষস্থানীয় সূত্রগুলো বলছেন, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে সরকারি কেনাকাটা ও সেবা প্রদানে অনিয়ম-দুর্নীতি মাত্রা ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি আর্থিক খাতে লুটপাটের অভিযোগ উঠছে ক্রমাগতই। এসব দুর্নীতির লাগাম টানতেই প্রধানমন্ত্রীর এ অবস্থান। ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে নানা নির্দেশনা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক এ অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সহায়তায় মূল দায়িত্ব পালন করবে দুর্নীতি দমন কমিশন। সূত্র জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতায় প্রশাসনেও শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। চলছে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করার কাজ। এরই মধ্যে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু সংস্থাও অনুসন্ধান শুরু করে। দুর্নীতিসহ রাজনৈতিক সুপারিশে চাকরি পাওয়া থেকে শুরু করে পদপদবি বাগিয়ে নেওয়ার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অন্তত একজন সচিবের দুর্নীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। রূপপুর বালিশকান্ডে র তদন্ত চলাকালে সচিবের বিভিন্ন অপকর্ম সামনে এসেছে। এ ছাড়া ঢাকার দুই অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তা ও ঢাকার কাছাকাছি তিনটি জেলার প্রশাসনে থাকা কর্মকর্তাদের তথ্যও এসেছে তদন্তে। মাঠপর্যায় থেকেও এসেছে তথ্য।

শুধু মন্ত্রণালয় থেকে কর্মকর্তাদের বিষয়েই নয়, ইতিমধ্যেই সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে  দুর্নীতিপ্রবণ ২৮টি সরকারি দফতরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এসব দফতরের দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদও প্রতিষ্ঠানটির গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধানকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশের পর নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি), ঢাকা সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর, সরকারি আবাসন পরিদফতর, সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (ওসিজিএ), বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিমান, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট, আয়কর বিভাগ, গণপূর্ত অধিদফতর, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি), ঢাকা ওয়াসা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, বাংলাদেশ রেলওয়ে, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, সাবরেজিস্ট্রি অফিস, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, দেশের সব স্থলবন্দর, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পরিবেশ অধিদফতর ইত্যাদি। অন্যদিকে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বড় বড় প্রকল্পে কমিশন বা পার্সেন্টেজ বাণিজ্য চলে। কমিশন বাণিজ্য মূলত ঘুষের বাণিজ্য। এ ঘুষ বন্ধ করতে সরকার তৎপর। ঘুষ দেওয়া ও নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা অনেকের নাম পাচ্ছি। এই ঘুষের পেছনে কী আছে আমরা তা দেখছি। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী বা সরকারি কর্মচারী- আমাদের মুখ্য বিষয় নয়। আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় দুর্নীতিসংক্রান্ত ঘটনা। দুদক কখনো কোনো নাম দেখে না। দেখে অপরাধ।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের যে উদ্যোগ তাকে জনগণের প্রত্যাশা অনুসারে পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চাই। সে সক্ষমতা দুদকের আছে। আমরা একে সফল পরিণতি দিতে পারব।’

ক্যাসিনো ও টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে ১৬ মামলা : আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য, ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয় গত সেপ্টেম্বরে। এসব অভিযোগের শীর্ষে থাকাদের বেশির ভাগই এখন আইনের আওতায়, বাকিরা পলাতক। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) নেতৃত্বে চলে এ অভিযান। পরে দীর্ঘ তালিকা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদকও। এরই মধ্যে তদন্ত শেষে ১৬টি মামলা করেছে দুদক। বাকি অভিযোগগুলোর তদন্ত শেষে ডিসেম্বরেই আরও মামলা করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন দুদক কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ খবর