বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

হঠাৎ বিএনপির বিক্ষোভে সড়ক রণক্ষেত্র

পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল-টিয়ার শেল, গাড়ি ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

হঠাৎ বিএনপির বিক্ষোভে সড়ক রণক্ষেত্র

হাই কোর্টের সামনে গতকাল বিএনপি কর্মীদের ভাঙচুর -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ রাজপথে অবস্থান নিল বিএনপি নেতা-কর্মীরা। গতকাল দুপুর ১টার দিকে হাই কোর্টের সামনের সড়কে প্রায় ১ ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান নেয় মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দলের ব্যানারে বিএনপির সহস্রাধিক নেতা-কর্মী। দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে অবস্থান নেওয়া বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এ সময় পুলিশের ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ার শেল ছুড়ে অবস্থানকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। মুহূর্তেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা। বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল মেরে টিয়ার শেলের জবাব দেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করে। সাধারণ পথচারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক আতঙ্ক। যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী যান চলাচল বন্ধ থাকার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। স্বাভাবিক হয় যান চলাচল। এ সময় কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয় বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়। পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি এইচ এম আজিমুল হক গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। ভিডিও ফুটেজ থেকে ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। দুপুর ১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের  নেতৃত্বে নেতা-কর্মীদের নিয়ে একটি মিছিল হাই কোর্টের দিকে অগ্রসর হয়। হাই কোর্টের সামনে প্রধান ফটকে অবস্থান নেয়। নেতা-কর্মীরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়াও পিয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দেয়। এ সময় তাদের হাই কোর্টের সামনে শুয়ে পড়তে দেখা যায়। ভিতরে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী ফোরামের নেতা-কর্মীরাও বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে স্লোগান নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে চায়। এ সময় নেতা-কর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এক ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। হাই কোর্টের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে আবদুল্লাহ আল নোমান ছাড়াও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ  মোহাম্মদ আবু জাফর, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, ডাকসু নির্বাচনে হেরে যাওয়া ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানসহ ছাত্রদল ও যুবদলের সহস্রাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েকটি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস ভাঙচুর হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে একটি বিএমডব্লিউ, চারটি সাদা ও ছাই রঙের প্রিমিউ প্রাইভেট কার, একটি নোয়া মাইক্রোবাস, একটি পিকআপ গাড়ি। এ ছাড়া কয়েকটি বাসেও ইট পাটকেল ছুড়ে মারে বিক্ষুব্ধরা। সব যানবাহনের সামনে ও পেছনের কাচ ভাঙচুর হয়েছে। রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় ইট ও পাথর। এ সময় সাধারণ পথচারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেককে দৌড়ে হাই কোর্টের ভিতরের পাশাপাশি নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতেও দেখা যায়। আর বিক্ষুব্ধ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করা হলে তারা কেউ কেউ হাই কোর্টের ভিতর প্রবেশ করে। আবার অনেকেই জাতীয় প্রেস ক্লাবে অবস্থান নেয়। 

 

এর আগে বেগম জিয়ার মুক্তিসহ কয়েকদফা দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দল সমাবেশ করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। আদালতে ব্যস্ততা থাকায় তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। সেখানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ, সহ প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।  সমাবেশ শেষে তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তে মিছিল নিয়ে বেরিয়ে আসেন আবদুল্লাহ আল নোমান ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।  মিছিলটি শুরু হয়ে হাই কোর্টের দিকে অগ্রসর হয়। এর কিছুক্ষণ পরই মিছিলটি হাই কোর্টের দ্বিতীয় গেটে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় হাই কোর্ট থেকেও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীসহ অনেকেই মিছিলে যোগ দেন। এ সময় পুলিশ একবার এসে ছত্রভঙ্গ করতে চেয়েও ফিরে যায়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী তারা অনেক দূরে অবস্থান নিয়ে তাদের সদস্য সংখ্যা বাড়ায়। এদিকে হাই কোর্ট থেকে মৎস্যভবন যেতে একপাশের সড়ক যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ছত্রভঙ্গ হওয়ার পর বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা হাই কোর্টের ভিতরে মিছিল করে। অবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেওয়া বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ নোমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কোনো অসাংবিধানিক কাজ করছি না। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার নেতা-কর্মী ঘর  ছেড়ে আজ রাজপথে নেমেছেন। রাজপথই আমাদের ঠিকানা। যতক্ষণ পারি ততক্ষণ অবস্থান করব। পুলিশ  যেন আমাদের উসকানি না দেয়। তার এই বক্তব্য শেষ হতে না হতেই টিয়ার শেল ছুড়তে শুরু করে পুলিশ। তখন বিএনপি নেতা-কর্মীরাও পাল্টা চড়াও হলে ব্যাপক সংঘর্ষ বেধে যায়। চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।  ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘বেআইনিভাবে বিএনপির নেতা-কর্মীরা হাই কোর্টের সামনের সড়ক অবরোধ করে  রেখেছিল। এটি ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। আমরা তাদের কয়েকবার বুঝিয়েছি সড়কটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য, কিন্তু তারা ছাড়েনি। একপর্যায়ে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে। পরে তারা গাড়ি ভাঙচুর করতে করতে চলে যায়। পরে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি ও সড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক করে দেই।’ গত রবিবার বিকালে নয়াপল্টনে দলের  কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘মিছিল-সমাবেশ করতে আর কখনও বিএনপি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি চাইবে না। আমরা আমাদের যখন খুশি তখন সমাবেশ করবো। এটা আমাদের অধিকার, সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। তাই সকলকে দল-মত নির্বিশেষে সামনের দিনগুলোতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। মির্জা ফখরুলের  সেই  ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মাথায় পূর্ব  কোনো ঘোষণা ছাড়াই সহস্রাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে ঢাকার রাজপথে অবস্থান নিল বিএনপি। দুদকের দুই মামলায় দি ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার কারামুক্তির দাবিতে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করলেও এতদিন কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যায়নি বিএনপি। সম্প্রতি দলের ভিতরে ও বাইরে থেকে কঠোর কর্মসূচির দাবি উঠছে।

সর্বশেষ খবর