বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দাম কমেনি পিয়াজের, আরও ৩২ ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দাম কমেনি পিয়াজের। শীর্ষ আরও ৩২ জন পিয়াজ আমদানিকারককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এই জিজ্ঞাসাবাদে পিয়াজ ব্যবসায়ীদের কাছে আমদানি ও পাইকারি বাজারে সরবরাহের তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়েছে। পিয়াজের মজুদ না রাখতে ওই ৩২ আমদানিকারককে কড়া নির্দেশনাও দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা। সংস্থাটির অনুরোধে কয়েকজন ব্যবসায়ী তাৎক্ষণিকভাবে পিয়াজ আমদানির নতুন এলসি খুলেছেন। আগামী পাঁচ দিনে  পিয়াজের দাম সহনীয় হয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছে শুল্ক গোয়েন্দারা। গতকাল রাজধানীর কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর কার্যালয়ে দিনভর ৩২ পিয়াজ আমদানিকারককে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য তুলে ধরেছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. মো. সহিদুল ইসলাম। এর আগে ৪৫ জন শীর্ষ পিয়াজ আমদানিকারকের তালিকা করে সোমবার ১১ জন আমদানিকারককে জিজ্ঞাসাবাদ করে শুল্ক গোয়েন্দা। দুই ব্যবসায়ী হাজির না হওয়ায় সব মিলিয়ে সংস্থাটি দুই দিনে ৪৩ জন ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর মহাপরিচালক ড. মো. সহিদুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে বলেন, আমদানির পর পিয়াজ কোথায় কোথায় গেছে তার তথ্য পাওয়া গেছে। কোনো অসাধু ব্যবসায়ী বাজার কারসাজিতে ভূমিকা রাখলে তাদের চিহ্নিত করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, তারা মজুদ না করলেও আড়তদাররা দামে কারসাজি করতে পারে। তিনি বলেন, বড় পিয়াজ আমদানিকারকরা যেসব পিয়াজ আমদানি করেছেন, সেগুলো কাদের কাছে কী দামে বিক্রি করেছেন, কোথায় বিক্রি করেছেন, তাদের নাম-ঠিকানাসহ সেসব তথ্য আমরা সংগ্রহ করেছি। আগামীতে প্রয়োজন হলে, আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের ডাকা হবে। আমরা ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করছি আরও পিয়াজ আমদানি করার। যাতে পিয়াজের বাজার দ্রুত সহনশীল হয়। আজ ৭৮০ টন পিয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। এ ছাড়া কয়েকটি জাহাজ পথে রয়েছে। এটা ৪২ টাকা দামে টিসিবিকে দেওয়া হবে। টেকনাফ দিয়েও অনেক পিয়াজ আসছে। আশা করি, কয়েক দিনের মধ্যেই বাজার সহনশীল হয়ে আসবে। ড. মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, কোথায় কোথায় পিয়াজ গেছে সে তথ্য আমরা পেয়েছি। সব বড় ব্যবসায়ীর তথ্য আমরা আস্তে আস্তে একত্রিত করব। কাজটি একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে। এটা দ্রুত করে দেখা হবে। আমরা কয়েকজনকে ডেকেছি। প্রয়োজন হলে অন্যদের ডাকা হবে। তিনি বলেন, আমরা বাজার সহনশীল করতে চেষ্টা করছি। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মজুদের তথ্য বের করা। যার কাছে মজুদ আছে সে যদি জানে তাহলে বাজারে ছেড়ে দেবে, বাজার সহনশীল হবে। তিনি বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো কারও কাছে যেন পিয়াজ মজুদ না থাকে। যে পিয়াজ আমদানি হবে দিনে দিনে তা যেন বাজারে চলে যায়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দামে পিয়াজ আমদানি হয়েছে। প্রথম অবস্থায় দাম একটু কম ছিল, পরে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানিতে দাম একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা দেখব, যে দামে কিনেছে মোটামুটি সহনশীল একটি দামে বিক্রি করেছে কিনা। জিজ্ঞাসাবাদে সিন্ডিকেটের কোনো তথ্য পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, আমরা সিন্ডিকেট বলতে চাই না। কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যদি থাকে, যারা বাজার কারসাজিতে ভূমিকা রাখে, আমরা তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেব। এর আগে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে খুলনার হামিদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এ হামিদ বলেন, গত তিন মাসে পিয়াজ আমদানি ও বিক্রির যাবতীয় তথ্য আমরা দিয়েছি। আমাদের কাছে কোনো পিয়াজ মজুদ নেই। আমরা ৭৪ টাকায় কিনে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। এসব পিয়াজ দুই-তিন হাত হয়ে দাম বাড়তে পারে। শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ১০ আমদানিকারক গত আগস্ট থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫৯ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৪ হাজার ৩১ টন পিয়াজ আমদানি করে। সবচেয়ে বেশি আমদানি করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের টিএম এন্টারপ্রাইজ। এ আমদানিকারক এ সময় ৩৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা মূল্যে নয় হাজার ২০ টন পিয়াজ আমদানি করেছে। গত আগস্ট থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত সাড়ে তিন মাসের বেশি সময়ে ১ হাজার টনের বেশি পিয়াজ আমদানি করেছে ৪৫ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। তারা প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচে ১ লাখ ৪ হাজার ৫৫৮ টন অর্থাৎ ১০ কোটি ৪৫ লাখ ৫৮ হাজার কেজি পিয়াজ আমদানি হয়েছে। প্রতি কেজি পিয়াজ আমদানিতে তাদের খরচ হয়েছে গড়ে ৩৮ টাকা ২৬ পয়সা। সূত্র আরও জানায়, চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৩৪১ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দেশের আটটি স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে পিয়াজ আমদানি করে এক লাখ ৬৭ হাজার ৮০৬ টন। এতে খরচ হয় ৬৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পিয়াজ আসে ৫১ হাজার ৬৪৯ টন। ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ৪৬ হাজার ৩৭০ টন, টেকনাফ দিয়ে ৩৪ হাজার ৮৬১ টন, হিলি দিয়ে ২৪ হাজার ৩০৮ টন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসে ছয় হাজার ৬৯৩ টন, বাংলাবান্ধা দিয়ে ১৭১ টন ও ঢাকা কাস্টম হাউস দিয়ে আসে ২৭ টন পিয়াজ।

সর্বশেষ খবর