ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব বলেছেন, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে কোনো ক্ষতি হলে তবে সবার প্রথমে আমার হবে। আমার মুখ্যমন্ত্রিত্ব চলে যাবে। গত শনিবার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। তার অভিমত, এনআরসি হলে ভারতবাসীর লাভ হবে।
এনআরসি নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে প্রথমেই প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে বিপ্লব দেব জানান, ‘এনআরসি এবং নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ভালো করে পড়ে-বুঝে তারপর বক্তব্য রাখা উচিত। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি পড়াশোনা করে কিছু বলেন বলে তো আমার মনে হয় না। উনি হুজুগে কথা বলেন। আমিও তো কোনো একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। যদি নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল বা এনআরসিতে ক্ষতি হতো তবে আমিও তো চলে যাব। এ সময় বিপ্লব বলেন, ‘আমার পরিবারের লোক, আমার পিতাও তো বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। ওনারও সিটিজেনশিপ কার্ড আছে। তারপর আমার জন্ম হয়েছে ত্রিপুরাতে। তাই এনআরসির ফলে যদি কোনো ক্ষতি হয়, সেক্ষেত্রে সবার আগে তো আমার মুখ্যমন্ত্রিত্ব চলে যাবে। আমি কি বেকুব নাকি, যে মুখ্যমন্ত্রিত্ব চলে যাবে, আর আমি এনআরসি করব?’ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান- এই তিন দেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, খিস্ট্রান, পার্সি, জৈন সম্প্রদায়ের মানুষ নির্যাতিত হয়ে ভারতে চলে আসতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু যারা ওই দেশের সংখ্যাগুরু, যাদের সেই দেশে মানবাধিকার রয়েছে-তারা রাতের অন্ধকারে এখানে চলে আসবেন। এটা হতে পারে না।’ অতি সম্প্রতি ভারতের আসাম রাজ্যে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তালিকা থেকে বাদ পড়েছে প্রায় ১৯ লাখ মানুষের নাম। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ইতিমধ্যে গোটা দেশে এই এনআরসি চালুর দাবি জানিয়েছে বিজেপি। গত সপ্তাহেই রাজ্যসভার অধিবেশনে উপস্থিত থেকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা দিয়েছিলেন- ‘গোটা ভারতেই জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) চালু করা হবে, সেক্ষেত্রে আসামও বাদ যাবে না।’ তবে ধর্মের ভিত্তিতে তা করা হবে না বলেও জানান তিনি। একই সঙ্গে তিনি এও জানান বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আগত সেখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান, শিখ ও পার্সি ধর্মের মানুষকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। যদিও বিষয়টি নিয়ে দেশবাসীর মধ্যেই ভিন্ন অভিমত রয়েছে। এরপরই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর এ মন্তব্য।