শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিএনপিতে আবারও গ্রেফতার আতঙ্ক

মাহমুদ আজহার

আবার গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর আবার ঘরছাড়া বিএনপির মধ্যসারির নেতারা। অনেকেই ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনও বন্ধ রেখেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আগ মুহূর্তে এই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে। সম্প্রতি রাজধানীতে হাই কোর্টের সামনে বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনার পর আসামি হওয়ার শঙ্কায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা। গ্রেফতার আতঙ্কে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও গতকাল নেতা-কর্মীদের আনাগোনা কমে যায়। দিনভর পুলিশ বেষ্টনীতে ছিল নয়াপল্টন অফিস। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নয়াপল্টন অফিসের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের অফিস স্টাফ মঞ্জু এবং কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের স্টাফ ফারুককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জানা যায়, ওইদিনের সংঘর্ষের ঘটনায় ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। আসামির তালিকায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আগাম জামিন নিয়েছেন। গ্রেফতার হওয়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন ও জাতীয়তাবাদী হকার্স দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেনকেও জামিনে মুক্তি দেয় আদালত। তবে ওই ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলে সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও ছাত্রদল নেতা ডাকসুতে ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান। উলফাতকে ঘটনার দিন রাতেই দেশের বাইরে যাওয়ার সময় বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়। মোস্তাফিজকে আটক করা হয় গতকাল দুপুরে হাই কোর্ট এলাকা থেকে।

এদিকে সম্প্রতি বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসকে বরিশালে এক কর্মসূচি থেকে ফেরার পর গ্রেফতার করে পুলিশ। বিএনপির আরেক সহ-সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে গেলে জামিন নামঞ্জুর করে জেল-হাজতে পাঠানো হয়।

পুলিশের শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, হাই কোর্টে সংঘর্ষ ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলার বাদী শাহবাগ থানার এসআই মতিউর রহমান। ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি এখন তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। 

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই মামলায় দি ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার কারামুক্তির দাবিতে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করলেও এতদিন কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যায়নি বিএনপি। সম্প্রতি দলের ভিতরে ও বাইরে থেকে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির দাবি উঠছে। জানা যায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও বিষয়টি উপলব্ধি করে আন্দোলনের হোমওয়ার্ক শুরু করেছেন। এরই মধ্যে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মতামত নিতে সিনিয়র নেতারা হঠাৎ মাঠ সফর করেন। তৃণমূল সফরে যাওয়া বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মাঠের নেতা-কর্মীরা এমনো বলেছেন, কেন্দ্র যদি কর্মসূচি না দেয় তাহলে তাদের পদত্যাগের দাবিতেও তৃণমূলে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। সব সিনিয়র নেতার পদত্যাগ চাইবেন তারা। এ নিয়ে সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটিতেও বিশদ আলোচনা হয়। সূত্র জানায়, বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে রাজপথে কঠোর আন্দোলনের ছক তৈরি করছেন নীতিনির্ধারকরা। এরই অংশ হিসেবে পুলিশের অনুমতি ছাড়াই ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউনের চিন্তা ছিল বিএনপির। বিষয়টি ইতিমধ্যে জানাজানি হয়ে যাওয়ায় বিএনপি আপাতত সেই চিন্তা থেকে সরে আসছে। হাই কোর্টের সামনে অবস্থান কর্মসূচিও ছিল তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে। সেখানে পুলিশের অবস্থান নিয়েও বিএনপি এখন বিশ্লেষণ করছে।

এদিকে সম্প্রতি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘মিছিল-সমাবেশ করতে আর কখনো বিএনপি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি চাইবে না। আমরা আমাদের যখন খুশি তখন সমাবেশ করব। এটা আমাদের অধিকার, সংবিধান অনুযায়ী অধিকার। তাই সবাইকে দল-মত নির্বিশেষে সামনের দিনগুলোতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে।’ এর পরপরই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে বলেন, অনুমতি ছাড়া বিএনপির সভা-সমাবেশ করার সক্ষমতা নেই। সেই ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সহস্রাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে ঢাকার রাজপথে অবস্থান নেয় বিএনপি। বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতা জানান, এখন থেকে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের জন্য পুলিশের আর কোনো অনুমতি না নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে তাদের বিষয়টি অবহিত করা হবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে রাজপথে সভা-সমাবেশ করা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু সরকার তাতে ভয় পেয়ে অনুমতি দিতে চায় না। সর্বশেষ আমাদের সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে মাত্র দুই ঘণ্টা আগে। তাই নেতা-কর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন, সাংবিধানিক অধিকার পালনে পুলিশের অনুমতি লাগবে কেন?

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর