সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিকল্প নেই শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের

সন্তু লারমা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন ছাড়া সমস্যার সমাধানে আর কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা। তিনি বলেন, এক পক্ষ চুক্তি বাস্তবায়ন চায়, অন্য পক্ষ চুক্তি পদদলিত করতে উদ্যত। জুম্ম জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের আর পেছনে যাওয়ার কোনো পথ নেই। জুম্ম জনগণ সমঅধিকার ও সমমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চায়। তারা আজ গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে তাদের করণীয় কী হতে পারে। গতকাল রাজধানীর হোটেল সুন্দরবনে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২২তম বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। এতে বক্তব্য দেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল এবং জনসংহতি সমিতির শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক উ উইন মং জলি। এ সময় মঞ্চে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সন্তু লারমার কাছে জানতে চাওয়া হয়, পার্বত্য জনগণ কেন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। জবাবে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের মধ্যেও যেমন বিভক্তি ছিল, তেমনি পার্বত্য জনগণের মধ্যেও ছিল। এরপরও পার্বত্য জুম্ম জনগণ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রে পার্বত্য অঞ্চলের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র-এনআইডি না নেওয়া প্রসঙ্গে সন্তু লারমা বলেন, এটা ব্যক্তি ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। পার্বত্য অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের বিরোধিতা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ চাই। তবে এ বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আছে। সন্তু লারমা লিখিত বক্তব্যে বলেন, জুম্ম জনগণ ২২ বছর ধরে চুক্তি বাস্তবায়নের অপেক্ষা করেছে। জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে মোট ২৬ বার আনুষ্ঠানিক বৈঠকের সমাপ্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার একটা রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পাঁচ দফা দাবির ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ ১১ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার পরও চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নে এগিয়ে না আসায় পার্বত্যবাসীর মধ্যে চরম হতাশা, অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

সন্তু লারমা আরও বলেন, প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর নাকের ডগায় লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি চলছে। অন্যদিকে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারী সাজিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতির সদস্য ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে একের পর এক সাজানো মামলা দায়ের করে নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তিন পার্বত্য জেলায় শতাধিক মামলায় জনসংহতি সমিতির সদস্যদের মিথ্যা আসামি করা হয়েছে। জনসংহতি সমিতিকে একটি সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জনসংহতি সমিতির সভাপতি বলেন, জনসংহতি সমিতির কাঠামো তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। উপনিবেশিক কায়দায় আজ জুম্ম জনগণ শাসিত, শোষিত, বঞ্চিত ও নিপীড়িত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান আঞ্চলিক পরিষদ আইন ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনকে লঙ্ঘন করেই পার্বত্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে গত ১৬-১৭ অক্টোবর রাঙামাটিতে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, হানাহানি, চাঁদাবাজি ও অস্ত্রবাজির একতরফা অভিযোগ এনে পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘সামনে ভয়ঙ্কর দিন’ আসার হুমকি ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর