মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আইন সংশোধনেই কমবে ভূমি জরিপের মামলাজট

আইনজ্ঞদের অভিমত

আরাফাত মুন্না

ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের মামলার জট কমাতে বিচারকদের আর্থিক অধিক্ষেত্র বৃদ্ধি করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন আইনজ্ঞরা। তারা বলেন, ট্রাইব্যুনালগুলোতে যে বিপুল পরিমাণ মামলা রয়েছে, তা একজন বিচারকের পক্ষে নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয়। এ জন্য এখতিয়ারভুক্ত আদালত বাড়াতে হবে। বিচারকদের অধিক্ষেত্র বৃদ্ধি করার জন্য প্রচলিত আইন সংশোধন হলেই কেবল ভূমি জরিপ-সংক্রান্ত বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনে ভূমি জরিপের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে আইন সংশোধন হচ্ছে, এমন খবর প্রকাশের পর আইনজ্ঞরা এ প্রতিক্রিয়া জানান।

জানা গেছে, ভূমি জরিপ-সংক্রান্ত আইন (স্টেট একুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্ট-১৯৫১) সংশোধনের জন্য একটি খসড়া চূড়ান্ত করেছে আইন মন্ত্রণালয়। খসড়া অনুযায়ী, এসব ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলাগুলো বিচারের এখতিয়ার দেওয়া হবে সারা দেশের দেওয়ানি আদালতগুলোকে। এতে ট্রাইব্যুনালের একজন যুগ্ম জেলা জজের পরিবর্তে সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজরাও মামলার শুনানি গ্রহণ করতে পারবেন।

আইন সংশোধনের এ উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমানে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালগুলোতে একজন যুগ্ম জেলা জজ বিচারকাজ পরিচালনা করে থাকেন। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল হওয়ায় নির্দিষ্ট বিচারক ছাড়া অন্য কেউ মামলা পরিচালনা করতে পারেন না। তাই বিপুলসংখ্যক মামলা একটি ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন থাকায় এক একটি মামলা শুনানির তারিখ ধার্য করতে হচ্ছে ছয় মাস থেকে এক বছর পরপর। তিনি বলেন, এ কারণে বিচারকদের অধিক্ষেত্র বৃদ্ধি করে আইন সংশোধনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এটা প্রশংসার দাবি রাখে। বিচারপ্রার্থীরা যদি ট্রাইব্যুনালের পাশাপাশি অন্য আদালতেও যাওয়ার সুযোগ পান, তাহলে তাদের দুর্ভোগ অনেকটাই কমে আসবে। মামলাগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান বলেন, ভূমি জরিপের জটিলতা-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে বিচারকদের আর্থিক অধিক্ষেত্র বৃদ্ধি করে আইন সংশোধনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাকে স্বাগত জানাই। তিনি বলেন, এত দিন এসব মামলা নিষ্পত্তির জন্য মানুষ নির্দিষ্ট একটি ট্রাইব্যুনালে যেত, ফলে ট্রাইব্যুনালগুলোতেও মামলার চাপ বাড়তে থাকে। কোনো কোনো ট্রাইব্যুনালে ৩০ থেকে ৪০ হাজার পর্যন্ত মামলা রয়েছে। এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত বাড়ানোই এ সমস্যার একমাত্র সমাধান বলে মনে করেন তিনি। জানা গেছে, ২০০৪ সালে স্টেট একুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্ট-১৯৫১ সংশোধন করে ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাল ও ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান সংযোজন করা হয়। আইন অনুযায়ী ভূমি জরিপ রেকর্ডে ভুলত্রুটি হলে জমির মালিক প্রতিকার পেতে এই ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারেন। ভূমি জরিপের গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এক বছর পর্যন্ত সময়ে এই মামলা করা যায়। উপযুক্ত কারণ দর্শানো সাপেক্ষে অতিরিক্ত আরও এক বছর সময় নিতে পারেন জমির মালিকরা। ভূমি জরিপের ভুলত্রুটির ব্যাপারে প্রতিকার পেতে ২০০৪ সালে আইন সংশোধন করে ১২টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ায়। এখন ট্রাইব্যুনাল ৪৫টি। সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী (৩০ জুন পর্যন্ত), দেশের ৪৫টি ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনালে তিন লাখ ৩ হাজার ৩৫টি ভূমি জরিপে ভুল-সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ৫৬ হাজার ১৪৫টি মামলা ঝুলে আছে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে। আর উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে ১৬৮টি মামলা। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৮৮ হাজার ৫০৯টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪০ হাজার ১৩৫টি, রাজশাহী বিভাগে ১০ হাজার ৯১১টি, খুলনা বিভাগে ৪৯ হাজার ২টি, বরিশাল বিভাগে ১৫ হাজার ৪৪টি, সিলেট বিভাগে ১৫ হাজার ৪০৬টি, রংপুর বিভাগে ১১ হাজার ৫৪০টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৭২ হাজার ৪৮৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। জেলা হিসেবে কিশোরগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ভূমি জরিপের মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ জেলায় ৪৩ হাজার ৩১টি মামলা রয়েছে। অন্যদিকে সবচেয়ে কম ৪৮০টি মামলা রয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর