মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

জাল সনদের কারখানা ঢামেক নার্সিং কলেজ

টাকায় মেলে জন্ম-মৃত্যু, ইনজুরির সনদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জন্ম হয়নি, কিন্তু সনদ পাওয়া যাবে। কোনো মানুষের মৃত্যুর সনদ প্রয়োজন? সেটিও মিলে যাবে। আর ইনজুরি সনদ তো কোনো ব্যাপারই না। টাকা দিলে এমন জন্ম, মৃত্যু বা ইনজুরির সনদ হাতেই পেয়ে যাবেন। আর জন্ম, মৃত্যু ও ইনজুরির সনদ যেখান থেকে দেওয়া হয়, ঠিক একই ভবন থেকে না পেলেও পাশের ভবনেই মিলছে এসব সনদ। এসব সনদ অবিকল আসল সনদের মতোই। তদন্ত না করা পর্যন্ত কেউ এসব সনদ দেখে বলতে পারবে না যে, এগুলো আসল না নকল।

দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর ধরে এভাবেই সনদ দেওয়া হচ্ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পাশের ভবন থেকে। ঢামেক হাসপাতালের নার্সিং কলেজের ভিতরের গ্যারেজে গড়ে তোলা হয়েছিল জাল সনদের আস্তানা। কিন্তু খবরটি দেরিতে হলেও র‌্যাবের কাছে পৌঁছে যায়। র‌্যাব সেখানে অভিযান চালিয়ে জাল সনদের কারখানার সন্ধান পায়। জাল সনদ, স্ট্যাম্পসহ নানা সরঞ্জাম উদ্ধার করে সেখান থেকে। গ্রেফতার করা হয় হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় মো. আরিফকে। গতকাল দুপুরে র‌্যাব-১০ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।

র‌্যাব-১০-এর কর্মকর্তারা বলেন, অল্প সময়ের মধ্যেই অর্থের বিনিময়ে চক্রটি জাল সনদ তৈরি ও সরবরাহ করত। ঢামেক হাসপাতালের শুধু ওয়ার্ডবয় নয়, এ চক্রে আরও অনেকে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

র‌্যাব-১০-এর অভিযানের নেতৃত্ব দানকারী মেজর মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে মূলত জালিয়াত চক্রটির কাছে বিভিন্ন জাল সনদ ও ইনজুরি সার্টিফিকেটের চাহিদা যায়। তারা মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যেই জাল সনদ সরবরাহ করে। ছুটি, মেডিকেল লিভ কিংবা পুলিশি মামলায় ইনজুরি রিপোর্টের জন্য ভুয়া সনদ সরবরাহ করে আসছিল চক্রটি। সরবরাহ করা ভুয়া ও জাল সনদের বিপরীতে গুরুত্ব অনুযায়ী চক্রটি হাতিয়ে নিত মোটা অঙ্কের টাকা। পুলিশের যে কোনো মামলায় প্রতিবেদনের জন্য অনেক ক্ষেত্রে ইনজুরি সনদ দরকার হয়, যা সাধারণত একটা অফিশিয়াল সিস্টেমের মধ্যে হাসপাতাল থেকে পেতে হয় এবং তা সময়সাপেক্ষ। এ সুযোগটি নিয়ে দালাল চক্রটি অল্প সময়ের ব্যবধানে জালিয়াত চক্রের কাছ থেকে মেডিকেল লিভের জন্য মেডিকেল সনদ, ইনজুরি সনদ সরবরাহ করত। এ ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরও তারা জাল করত। মেজর জাহাঙ্গীর বলেন, মেডিকেল কলেজের মাধ্যমে যে কোনো প্রয়োজনে মেডিকেল সনদ নিতে গেলে সত্যতা থাকতে হয়, সময়ও লাগে। কিন্তু এ চক্রটি কেউ মারধরের শিকার হয়নি, ইনজুরি হয়নি কিন্তু তার ইনজুরি সনদ দরকার, তাদের জাল ইনজুরি সনদ সরবরাহ করে আসছে, যার ওপর ভিত্তি করে অনেকে ভুতুড়ে মামলাও দায়ের করছেন। দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি এ জালিয়াতি করে আসছে। ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কেউ এ চক্রের সঙ্গে জড়িত কি না; কারণ ইনজুরি সনদসহ মেডিকেল সনদ-সংক্রান্ত যে কোনো ডকুমেন্ট পেতে হলে রেজিস্টার বুক ও সিরিয়াল মেইনটেন করতে হয়- এমন প্রশ্নে মেজর জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কেউ জড়িত কি না তা তদন্তসাপেক্ষ। তবে আটক মো. আরিফ ঢামেক হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত বলে আমরা জানতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে এ ব্যাপারে তিনি (ওয়ার্ডবয়) জবানবন্দি দিয়েছেন এবং সত্যতা স্বীকার করেছেন। তাদের বিরুদ্ধেও তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মেডিকেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর