বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

জিপিতেই সর্বনাশ, হেনস্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার গুলিস্তান থেকে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় যাওয়া এস এস পরিবহন ও ডিএম পরিবহন প্রতিদিন চাঁদা দিচ্ছে ৬৯০ টাকা। গেট পাসের (জিপি) নামে এই চাঁদা তোলার জন্য শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিক সমিতির নির্ধারিত লোকও রয়েছে। চাঁদার টাকা না দিলে যাত্রী তোলা যায় না নির্ধারিত স্ট্যান্ড থেকে। চালক-হেলপারদের নানাভাবে হেনস্তা করা হয় বলেও অভিযোগ। গালাগাল করার পাশাপাশি কখনো কখনো করা হয় মারধর। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্লাহর মতে, সড়কে চাঁদাবাজি বলতে কোম্পানির নামে যে জিপি আদায় করা হয় তা মারাত্মক। এতেই হচ্ছে সর্বনাশ। আমরা নানাভাবে এটা বন্ধের চেষ্টা করছি।

সূত্র জানায়, গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া থেকে ঢাকা-মাওয়া সড়কে ইলিশ, গ্রেট বিক্রমপুরসহ আরও বেশ কয়েকটা পরিবহন যাতায়াত করে। ঢাকা-বালিগাঁও সড়কে যাতায়াত করে গাংচিল পরিবহন, এই রোডেও গাড়ি প্রতি চাঁদা দিতে হয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। ফুলবাড়িয়া থেকে ধামরাই, দোহার রোডে চলাচলকারী বাসগুলোকেও প্রায় একই ধরনের চাঁদা দিতে হয়। এ ছাড়া ফুলবাড়িয়ায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের সামনে থেকে ঢাকা-নরসিংদী, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-মুন্সীগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির বাস যাতায়াত করে। এখানে গাড়ি প্রতি চাঁদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসএস পরিবহনের নামে চলাচলকারী একটি বাসের মালিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এত টাকা চাঁদা দিয়ে পরিবহন ব্যবসা চালানো কষ্ট হচ্ছে। যে টাকা চাঁদা দেই, কোনো কোনো দিন, সেই টাকা আমরাও পাই না। মালিক সমিতির নামে তোলা টাকা কোথায় যায়, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থানে পুলিশকে টাকা দিতে হয় বলে আমাদের জানানো হয়। তবে প্রকৃত পক্ষে এই টাকা কোথায় যায়, সেটা সমিতির কর্মকর্তারাই ভালো জানেন। এই রোডে যাতায়াতকারী পরিবহন চালক-হেলপারদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রতিটি বাসকে গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া স্ট্যান্ডে চাঁদা দিতে হয় ৪৭০ টাকা। এর মধ্যে ১০০ টাকা নেওয়া হয় সিটি করপোরেশনের নামে। বাকি ৩৭০ টাকা নেয় মালিক সমিতি। তবে সিটি করপোরেশনের এই টাকার কোনো রশিদ দেওয়া হয় না বলেই জানিয়েছেন একাধিক চালক। বাকি ৩৭০ টাকা মালিক সমিতি কোন খাতে খরচ করে তা নিয়ে প্রশ্ন শ্রমিকদের। গুলিস্তান ছাড়া রাজধানীর নয়াবাজারে গাড়ি প্রতি ৬০ টাকা, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলার নিমতলায় ৫০ টাকা, একই উপজেলার মালখানগরে ২০ টাকা, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বেতকা চৌরাস্তায় ২০ টাকা এবং টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কালিবাড়ী স্ট্যান্ডে ৭০ টাকা দিতে হয় প্রতিটি গাড়িকে। সূত্র মতে, এক মাস আগে এই রোডে গাড়িপ্রতি দৈনিক চাঁদা দিতে হতো এক হাজার ৬১০ টাকা। এর মধ্যে গুলিস্তানে ৫৫০ টাকা, সিরাজদীখানের কুচিয়ামারা ২০ টাকা, নিমতলা, ৬৫০ টাকা, সিরাজদীখান বাজার ৬০ টাকা, ইছাপুরা বাজার ৫০ টাকা, মালখানগর ৫০ টাকা, টঙ্গিবাড়ীর বেতকা চৌরাস্তা ৮০ টাকা, টঙ্গিবাড়ী বাজার ৫০ টাকা এবং কালিবাড়ী স্ট্যান্ডে ১০০টা চাঁদা নেওয়া হতো। হঠাৎ করে কেন চাঁদা কমেছে তা জানে না, পরিবহন শ্রমিকরাও।

সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য লীগের সদস্য সচিব ইসমাইল হোসেন বাচ্চু বলেছেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি লোক দেখানো চিঠি ও বক্তব্য দিয়ে জিপি বন্ধের কথা বললেও তাদের নেতৃত্বেই সড়ক ও টার্মিনালে চাঁদাবাজি হচ্ছে। তাদের লোকেরাই চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর