বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার পলাতক চার আসামির সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকার পাঁচ নম্বর অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. কায়সারুল ইসলাম এ আদেশ দেন। এর আগে আসামিরা পলাতাক থাকায় তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি মর্মে পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে এবং আসামিদের হুলিয়া ও ক্রোকি পরোয়ানা ইস্যুর আবেদন করে। পলাতক চার আসামি হলেন- বুয়েট ছাত্র এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মের্শেদ উজ জামান জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ) এবং মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল)। পুলিশের পক্ষ থেকে পলাতাক চার আসামির বিষয়ে আদালতে পাঠানো পৃথক প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা পাওয়ার পরে তাদের গ্রেফতার করার জন্য প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু আসামিরা গ্রেফতার এড়ানোর জন্য পলাতাক থাকায় তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ কারণে আসামিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তাই আসামিদের বিরুদ্ধে হুলিয়া ও ক্রোকি পরোয়ানা ইস্যুর জন্য প্রার্থনা করছি। মামলা সূত্রে জানা গেছে, বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে গত ৬ অক্টোবর রাতে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। পর দিন আবরারের বাবা ১৯ শিক্ষার্থীকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা করেন। পরে ঘটনার তদন্ত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ছাত্রলীগের ২৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ১৮ নভেম্বর মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) গ্রহণ করে পলাতক চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। একই সঙ্গে আসামিদের গ্রেফতার করা গেল কি না সে বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়। পরে গতকাল শুনানি শেষে আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে ক্রোকের আদেশ তামিলের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এ মামলায় ২১ আসামি বর্তমানে কারাগারে আছেন।
বুয়েটে র্যাগিং আর রাজনীতি করলে চিরতরে বহিষ্কার : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) র্যাগিংয়ের কারণে কোনো শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার করা হবে। একই সঙ্গে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন। এ ছাড়া বুয়েটে কেউ সাংগঠনিক রাজনীতিতে জড়িত হলে তাকেও স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদফতরের পরিচালক মিজানুর রহমানের স্বাক্ষরে সোমবার রাতে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবিষ্যতে র্যাগিং এবং সাংগঠনিক রাজনীতির বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িতদের অভিযোগগুলো মূল্যায়ন ও শাস্তি নির্ধারণ বিষয়ে গঠিত কমিটির রিপোর্টের আলোকে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িত থাকলে, রাজনৈতিক পদে থাকলে, রাজনীতি করতে কাউকে উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করলে অপরাধ সাপেক্ষে শাস্তি সতর্কতা, জরিমানা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে কোনো মেয়াদে বহিষ্কার। র্যাগিংয়ের কারণে কোনো শিক্ষার্থী গুরুতর শারীরিক ক্ষতি বা মানসিক ভারসাম্যহীনতার শিকার হলে অভিযুক্তকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে। মৌখিক বা শারীরিক লাঞ্ছনা এবং সাময়িক মানসিক ক্ষতিসহ এ-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি হচ্ছে সতর্কতা, জরিমানা, হল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার বা একাডেমিক কার্যক্রম থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিরত রাখা। এ ধরনের অপরাধীকে শিক্ষাজীবনে ফিরতে হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাউন্সেলিং করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। এ ঘটনার পর থেকে বুয়েটে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। আবরার হত্যার বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের একপর্যায়ে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরতে প্রশাসনকে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি পূরণের শর্ত দেন। এ দাবি পূরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তিনটি দাবি মেনে নিল বুয়েট প্রশাসন।আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরীক্ষায় বসার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, আমাদের দাবির একটি ছোট অংশ এখনো বাকি আছে। একটি হলের র্যাগিংয়ের তদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। এ ছাড়াও সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি করলে শাস্তি দেওয়ার বিধানের দাবি করেছিলাম। বিজ্ঞপ্তিতে রাজনীতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়নি। এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত জানাব। এ বিষয়ে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, বিজ্ঞপ্তিতে আসলে সাংগঠনিক রাজনীতির কথাই বোঝানো হয়েছে। তারা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সেটি পরিষ্কার হতে পারে। আর তাদের সব দাবিই যেহেতু মানা হয়েছে। তাই পরীক্ষায় না ফেরার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।