বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সকালে তালা বিকালে ভাঙলেন ডাকসু ভিপি নূর

অর্থ কেলেঙ্কারি ফোনালাপের অডিও ভাইরাল, পদত্যাগ দাবি । নূর বললেন বিষয়টি ব্যবসায়িক, দুর্নীতি নয়

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

সকালে তালা বিকালে ভাঙলেন ডাকসু ভিপি নূর

ডাকসু ভিপি নূরের কক্ষে গতকাল তালা লাগিয়ে দেওয়া হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হকের সঙ্গে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীর ১৩ কোটি টাকার একটি কাজের গ্যারান্টি সম্পর্কিত আর্থিক লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁস হওয়া নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই ফোনালাপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে গতকাল ভিপি নূরের ডাকসু ভবনের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে ডাকসু ভিপির কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে দিয়েছে একটি সংগঠন। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে মানববন্ধনে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভিপি নূরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ডাকসু থেকে বহিষ্কারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এদিকে ডাকসু ভিপি নুরুল হক এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই ফোনালাপ ফাঁস করা হয়েছে। এতে ঘুষ, দুর্নীতি বা তদবিরের কোনো বিষয় নেই। আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একটি ফোনালাপের অংশবিশেষ সাজিয়ে-গুছিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে বিকালে কার্যালয়ের তালা ভেঙে রুমের ভিতরে ঢোকেন ভিপি নূর ও তার সংগঠন ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ’র অন্যান্য নেতা। গত মঙ্গলবার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ভিপি নুরুল হকের অডিও নিয়ে সংবাদ প্রচারিত হয়।  জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদে ডাকসুর ভিপি নুরুল হকের একটি ফোনালাপ ফাঁস নিয়ে সংবাদ প্রচারিত হয়। ফাঁসকৃত ওই ফোনালাপের প্রথম অংশে তাকে জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে একটি নির্মাণ কাজের ব্যাংক গ্যারান্টির বিষয়ে কথা বলতে শোনা যায়। দ্বিতীয় অংশে একজন প্রবাসী বাংলাদেশি কর্তৃক তাকে অর্থ সাহায্যের প্রস্তাব দিতে শোনা যায়।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূরের পদত্যাগ দাবিতে মানববন্ধন করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশ। গতকাল দুপুরে ডাকসু ভবনের সামনে অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে নূরের কুশপুত্তলিকা দাহ এবং ডাকসু ভবনে তার কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন মঞ্চের নেতা-কর্মীরা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ডাকসুর ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। তাই আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নূরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ডাকসু থেকে বহিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় ভিসিকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে জানান তারা। মানববন্ধন থেকে নূরের পদত্যাগ দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন বক্তারা।

মঙ্গলবার রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ডাকসুর ভিপি নূরের ফাঁসকৃত ফোনালাপ নিয়ে সংবাদ প্রচারিত হয়। ওই ফোনালাপে ডাকসু ভিপিকে জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে কোনো প্রকল্পের ব্যাংক গ্যারান্টির বিষয়ে কথাবার্তা বলতে শোনা যায়। ফাঁসকৃত অডিওটির দ্বিতীয় অংশে প্রবাসী এক বাংলাদেশিকে নূরকে অর্থ সাহায্যের প্রস্তাব দিতে শোনা যায়। এতে ওই ব্যক্তি নূরকে তার ইমেইল অ্যাড্রেস ও ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর পাঠাতে বলেছেন।

এ বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে মঙ্গলবার রাতে নিজের  ফেসবুক পেজে লাইভে আসেন ভিপি নূর। এ সময় তিনি বলেন, আমার একটি ফোনালাপ ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমার পুরোপুরি কথা না শুনিয়ে কিছু অংশ কেটে প্রচার করেছে, যা সাংবাদিকদের নৈতিকতার সঙ্গে যায় না। ভিপি নূর বলেন, এতে ঘুষ, দুর্নীতি বা তদবিরের কোনো বিষয় নেই। আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একটি ফোনালাপের অংশবিশেষ সাজিয়ে-গুছিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা সরকারের নগ্ন চেহারা জনগণের সামনে তুলে ধরছি। তাই আমার ফোনালাপ ফাঁস করে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করা হয়েছে। এ সময় তিনি সংশ্লিষ্ট টেলিভিশন চ্যানেলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

ফেসবুক লাইভে ভিপি নুরুল হক বলেন, আমার আন্টির কনস্ট্রাকশনের ব্যবসা আছে। তার একটি কাজের ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল। এর দুই দিন আগে কাউকে দিয়ে ব্যাংক গ্যারান্টি করিয়ে রাখতে তিনি আমাকে ফোন করেন। তখন আমি আমার এক পরিচিতকে ফোন দিয়ে বললাম যে, তিনি ১৩ কোটি টাকার এই কাজটির ব্যাংক গ্যারান্টি করতে পারবেন কিনা, এই ছিল প্রথম বিষয়টি। আমার আন্টির সঙ্গে আমার অনেক কথা হয়েছে, সেগুলো সাজিয়ে-গুছিয়ে প্রপাগান্ডা চালানো হয়েছে। যেটা আমাদের একান্তই পারিবারিক বিষয়, ব্যবসায়িক বিষয়। এতে ঘুষ, দুর্নীতি বা তদবিরের কোনো বিষয় নেই।

ফোনালাপের দ্বিতীয় অংশের বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, একজন লোক আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, তিনি আমাদের হেল্প করবেন। আমি ডাকসুর ভিপি, সাধারণ ছাত্র পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক, আমার নম্বর অনেকের কাছে আছে। এখন ছাত্রলীগের কেউ বা অন্য কেউ যদি আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফোন দিয়ে সাহায্য করার বা পাঁচ কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলে, বলতে পারে। কিন্তু সেখানে আমার কী রিপ্লাই তা দেখতে হবে। ঠিক একইভাবে একজন লোক আমাকে ফোন করে পরিচয় দিয়ে বলে, তিনি আমাদের শুভাকাক্সক্ষী, তিনি আমাদের সাহায্য করতে চান। আমি তাকে বলেছি, আপনি অপরিচিত লোক, আমি আপনার কাছ থেকে সাহায্য নেব না। পরে কোনো দিন লাগলে আপনাকে জানাব। আমি তাকে স্বাভাবিক সৌজন্য দেখিয়েছি। ওই ব্যক্তি আমার কাছে নম্বর, ইমেইল চেয়েছেন। আমি কী রিপ্লাই দিয়েছি, তা কিন্তু এতে নেই। এটার একটা খি ত অংশ নিউজে দেখানো হয়েছে।  

তালা ভেঙে রুমে ঢুকলেন নূর

এদিকে কার্যালয়ে তালা ঝুলানোর পর ভিপি নূর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রাব্বানীর কাছে তালা খুলে দেওয়ার বিষয়ে জানান। এ সময় তাকে ডাকসুর অন্যান্য নেতা এবং কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন প্রক্টর। তবে নূর অভিযোগ করেন, এ ব্যাপারে প্রক্টর তাকে পর্যাপ্ত সাহায্য করেননি। এমনকি তিনি ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইতুল ইসলামকে ফোন দিয়ে পাননি বলে জানান।

তবে এ বিষয়ে প্রক্টর বলেন, আমার সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে আমি তাকে ডাকসুর নেতৃবৃন্দ ও কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলি। কিন্তু সে তার কোনোটাই করেনি। তার অভ্যাসই হলো অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো। সে আমাদের ছাত্র, এ নিয়ে আর বলতে চাই না।

এদিকে বিকালে কার্যালয়ের তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন ভিপি নূর ও তার সংগঠন ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ’র অন্য নেতারা।

সর্বশেষ খবর