বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভায় শেখ হাসিনা

সন্ত্রাসের গডমাদার খালেদা জেলে রাজার হালে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সন্ত্রাসের গডমাদার খালেদা জেলে রাজার হালে

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাসের গডমাদার হচ্ছে খালেদা জিয়া। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। এর চেয়ে বড় সন্ত্রাস আর কী হতে পারে? তিনি বলেন, খালেদা জিয়া জেলে আছেন। তিনি সেখানে বেশ ভালো আছেন। তাঁর হুইল চেয়ারে বসা নতুন কিছু নয়। আমাদের ভিতরে কোনো প্রতিহিংসাপরায়ণতা নেই।

গতকাল বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে পুরনো উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া যখন ’৯১ সালে সরকারে আসে, তখন আমেরিকায় তার নিক্যাপ রিপ্লেস করে অপারেশন হয়। পরবর্তীতে আবার সৌদি আরবে করে।  সে তো বিদেশে গিয়ে হুইল চেয়ারেই শপিং করত। ফালু ঠেলত আর সে শপিং করত। সে যখন হজ করে সেখানেও ফালু হুইল চেয়ার ঠেলে, সে হজ করে। হুইল চেয়ারে বসা, সেটা তো নতুন কিছু না। সেটা তো বহুযুগ ধরে আমরা দেখে আসছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলে খালেদা জিয়া রাজার হালে আছে। পৃথিবীর কোনো দেশে এই দৃষ্টান্ত কেউ দেখাতে পারবে যে, কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামির সেবার জন্য কাজের বুয়া যায়। সেটাও কিন্তু সে পাচ্ছে। মানুষ এমনিতেই কাজের বুয়া পায় না, আর খালেদা জিয়ার জন্য জেলে স্বেচ্ছায় একজন কারাবরণ করছেন, খালেদা জিয়ার সেবা করার জন্য। এতটুকু সুবিধা পর্যন্ত তাকে দেওয়া হচ্ছে, এটা হলো বাস্তবতা। আমাদের মধ্যে ও রকম কোনো প্রতিহিংসাপরায়ণতা নাই। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সন্ত্রাসের গডমাদার আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, সন্ত্রাসের গডমাদারই হচ্ছে খালেদা জিয়া। সে এই বাংলা ভাই সৃষ্টি থেকে শুরু করে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা, ঠান্ডা মাথায় হরতাল-অবরোধ ডেকে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এতিমের নামে টাকা এসেছে, সে টাকা সে চুরি করেছে। আর সে মামলা দিয়েছে তারই প্রিয় ব্যক্তিরা, যারা ক্ষমতায় ছিল। তার বিরুদ্ধে গ্যাটকোর কেস, তার বিরুদ্ধে নাইকোর কেস।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া পরিবারটাই খুনি পরিবার। ভোট চুরি, মানুষ হত্যা, আগুন দিয়ে পোড়ানো, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ মানুষ হত্যা অর্থাৎ জিয়া যেমন খুনি ছিল, খালেদা জিয়াও আরেক খুনি, তার ছেলেও খুনি। এ পরিবারটাই খুনির পরিবার। তারা মানুষ খুন, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ করা ছাড়া আর কিছুই জানে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার জন্য অনেকের মায়াকান্না দেখি। খালেদা জিয়া যে মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করল, এটা তারা ভুলে যায় কেন? মানুষকে কীভাবে তারা অত্যাচার করেছে সেটা ভুলে যায় কেন? তার হুকুমে কত মায়ের কোল খালি হয়েছে, কত বোন বিধবা হয়েছে, কত বোন আগুনে পুড়ে বিকৃত চেহারা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, আইনজীবী কেউ তো বাদ যায়নি। সেই বীভৎস অবস্থাটা নিয়ে মানুষ বেঁচে আছে। তারপর এই দরদটা যারা দেখায়, তাদের আবার আগুনে পোড়া মানুষের চেহারাটা একটু দেখে আসা উচিত।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই দেশের মানুষের উন্নতি হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এর আগে অনেকে অনেক কিছুই বলতে পারে। এটা হয়েছে, ওটা হয়েছে। ও এনজিও করেছে তার জন্য দেশ উন্নতি হয়েছে। কিন্তু উন্নতি যদি হতো তাহলে দারিদ্র্যের হার কমেনি কেন? প্রবৃদ্ধির হার বাড়েনি কেন? মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়নি কেন? একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে, তখন হয়েছে। আজকে আমরা ৮ দশমিক ১৩ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছি। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামেগঞ্জে মা-বোন থেকে শুরু করে প্রত্যেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জড়িত থাকার অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ যখনই সুষ্ঠুভাবে চলতে শুরু করেছে তখনই এলো ১৫ আগস্ট। আর ১৫ আগস্টে যে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন সেটা খুনি রশীদ ও ফারুকের বক্তব্যেই প্রমাণিত।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন, যে নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা বলতে চায় বিএনপি। এটা তারা ভুলে যায় যে এক-একটা সিটের পেছনে তারা দু-তিনজনকে মনোনয়ন দিয়েছিল। যে যখন যার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে। এক ভাগ দিতে হয়েছে লন্ডনে আর দুই ভাগ দিতে হয়েছে বাংলাদেশে। গুলশানের অফিসকেও সন্তুষ্ট করতে হয়েছে, পুরানা পল্টনের অফিসকেও। মনে হয় এটাকে একটা বাণিজ্য হিসেবে নিয়েছিল তারা। আসলে আন্তর্জাতিকভাবে যে সার্ভেটা হয়েছিল তাতে সবাই দেখতে পেয়েছিল যে বিএনপি সিট পাবে না, সেজন্য নির্বাচনটাকে তারা ব্যবসা-বাণিজ্য হিসেবে নিয়ে নেয়। সেখানে সিট না পেয়ে অন্যদের দোষারোপ দেওয়ার কোনো মানে হয় না।

আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আসার পরই দেশের উন্নতি হচ্ছে। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশের উন্নতি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে এতগুলো টেলিভিশন, সেটা কে দিয়েছে? এতে বেসরকারি খাত উš§ুক্ত হয়েছে। সেটা কে করেছে? এগুলো আমাদের সরকার করেছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন তো করেনি। আমি যখনই প্রধানমন্ত্রী হয়েছি তখনই বেসরকারি টেলিভিশন উš§ুক্ত করে দিয়েছি। এটা শুধু টেলিভিশন না, এর মাধ্যমে কত লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। আর টক শোতে গিয়ে টকমিষ্টি কথা বলার কত মানুষ পাচ্ছে।

মন্ত্রীদের প্রতি ক্ষোভ, অভিযান অব্যাহত রাখার আহ্বান : জাতীয় কমিটির নেতাদের অনেকে মন্ত্রীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সবকিছু যদি প্রধানমন্ত্রীকেই দেখতে হয় তাহলে মন্ত্রীদের রেখে লাখ কী? মন্ত্রীরা এলাকায় গিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন না। অভিযান অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, এই প্রক্রিয়া তৃণমূল পর্যায়ে পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে।

জাতীয় কমিটির এ সভায় আবুল মাল আবদুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফরউল্যাহ, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, ওবায়দুল কাদের, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বি এম মোজাম্মেল হক, এনামুল হক শামীম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, এস এম কামাল হোসেন, আজমত উল্লা খান, ইকবাল হোসেন অপু, গোলাম রব্বানী চিনু, রেমন্ড আরেং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব পাস হয়।

সর্বশেষ খবর