বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মানব উন্নয়ন সূচকে এক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও নেপালকে পেছনে ফেলে আরও এক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এ বছরের মানব উন্নয়ন সূচকে ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৫তম। বিভিন্ন দেশের ২০১৮ সালের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গড় আয়সহ বিভিন্ন সূচকের আলোকে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। গতকাল শেরেবাংলানগরে পরিকল্পনা কমিশনে ইউএনডিপি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ইউএনডিপি ঢাকা কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শামসুর রহমান প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। পরে প্রতিবেদনটির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সরকারের প্রণোদনার ভর্তুকি প্রকৃত লোকের কাছে না পৌঁছানোয় বৈষম্য বাড়ছে। এটি একটি সমস্যা। আমাদের মূল লক্ষ্য দেশজ উপায়ে উন্নয়ন সাধন করা। এতে আরও বক্তব্য দেন ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি, পিকেএসএফ সভাপতি কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, পিপিআরসির নির্বাহী পরিচালক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ইউএনডিপির অর্থনীতিবিদ শামসুর রহমান বলেন, প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আয় ও সম্পদের উৎস, বৈষম্য, লিঙ্গসমতা, দারিদ্র্য, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও আর্থিক প্রবাহ, যোগাযোগ, পরিবেশের ভারসাম্য ও জনমিতির তথ্য বিশ্লেষণ করে এই মানব উন্নয়ন সূচক তৈরি করে ইউএনডিপি। এসব মানদে  এবার বাংলাদেশের এইচডিআই স্কোর দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৬১৪, যা গতবার শূন্য দশমিক ৬০৮ ছিল। গতবারের মতো এবারও সূচকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে নরওয়ে। ইউরোপের এ দেশটির এইচডিআই স্কোর শূন্য দশমিক ৯৫৩ থেকে বেড়ে শূন্য দশমিক ৯৫৪ হয়েছে। এ সূচকে আসা ১৮৯টি দেশকে অতি উন্নত, উন্নত, মধ্যম ও নিম্ন মানব উন্নয়নের চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ রয়েছে মানব উন্নয়নের মধ্যম দেশের স্তরে।

বাংলাদেশ মানব উন্নয়নে প্রতিবেশী ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান (১৫২), নেপাল (১৪৭) ও মিয়ানমারের (১৪৫) চেয়ে এগিয়ে থাকলেও শ্রীলঙ্কা (৭১), মালদ্বীপ (১০৪), ভারত (১২৯) ও ভুটানের (১৩৪) চেয়ে পিছিয়ে আছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কা গতবারের তুলনায় চার, নেপাল তিন, মিয়ানমার তিন ও ভারত এক ধাপ এগিয়েছে। হোসেন জিল্লুর রহমান বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে বলেন, বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার কারণে বৈষম্য বাড়ছে। যেমন : ও লেভেল, এ লেভেল পাস করা তরুণ-তরুণীরা অন্যদের তুলনায় কিছুটা এগিয়ে থাকছে। ব্যাংক, পোশাক কারখানার মতো অর্থনৈতিক শক্তি কিছু লোকের হাতে রয়েছে। তারা নীতিনির্ধারণেও প্রভাব ফেলছেন। এ ছাড়া উন্নয়ন ব্যয়ে অসাধুতার কারণেও বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। এটা দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্বস্তিও তৈরি করছে। ফাহমিদা খাতুন বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য শিক্ষা ও শ্রমবাজারে ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। বৈষম্য কমাতে একদিকে যেমন সরকারি সেবা বাড়াতে হবে, আবার সরকারি বিনিয়োগও চাই। ড. কাজী খুলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, উচ্চতর প্রবৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও মানব উন্নয়নে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। উন্নয়নের কাঠামোগত কারণেই বৈষম্য বাড়ছে। তিনি বলেন, গর্ভাবস্থা থেকে শুরু করে পুরো জীবনচক্রের নিরাপত্তাকৌশল নির্ধারণ করা জরুরি।

সর্বশেষ খবর