শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

রুদ্ধ আইনি পথ, নেই আন্দোলনেও

খালেদার জামিন নাকচে শক্ত কর্মসূচি না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল, নির্বাহী কমিটির বিশেষ সভা শিগগিরই

মাহমুদ আজহার

রুদ্ধ আইনি পথ, নেই আন্দোলনেও

দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ায় বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মী হতাশ। আইনি লড়াইয়ের আশাও দেখছেন না তারা। দলটিই বলছে, এখন তাদের সামনে শুধু রাজপথে আন্দোলনের পথ খোলা। তবে এ মুহূর্তে বিএনপির রাজপথে কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যাওয়ারও পরিকল্পনা নেই। ধীরে ধীরে কঠোর কর্মসূচিতে যাবে দলটি। ‘স্লো’ গতিতে চলার অংশ হিসেবে আপাতত সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ আর মানববন্ধনেই পথ চলতে চায় দলটি। আগামীকাল রবিবার ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। এ দিকে আগামী দিনে করণীয় নির্ধারণে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ‘বিশেষ সভা’ ডাকার চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নতুন বছরের শুরুতেই এ কর্মসূচি ডাকা হতে পারে বলে জানা গেছে।

বিএনপির তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেন্দ্রের কর্মকান্ডে র ওপর ক্ষুব্ধ বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। বেগম খালেদা জিয়ার জন্য একদিনেরও একটি রাজপথের ‘শক্ত’ কর্মসূচি না থাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ তৃণমূল। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বদলও চাচ্ছেন তারা। ৫০৩ সদস্যের ‘ঢাউস’ নির্বাহী কমিটি আজ কোথায় সেই প্রশ্নও তাদের। আবার নির্বাহী কমিটির সদস্যরা বলছেন, কেন্দ্র তাদের কোনো দায়িত্ব দিচ্ছে না। নির্দিষ্ট গুটি কয়েক নেতাই দলীয় কর্মকান্ডে  ব্যস্ত। তারাও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ডাকার পক্ষে। এদিকে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাদেরও গা ছাড়া ভাব। কেউই জেলে যেতে চান না। বিশেষ করে আন্দোলনের মূল হাতিয়ার বলে খ্যাত যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল ব্যস্ত নিজেদের কমিটি নিয়ে। অন্য অঙ্গ সংগঠনগুলোও ধুঁকছে। স্বেচ্ছায় কারাবণের ডাক দেওয়া নেতাদেরও খবর নেই। বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে বিএনপির সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দলের ভিতরের নেতা-কর্মীরাই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ওপর সরকারের প্রভাবের কারণে ন্যায় বিচার পাওয়াই কঠিন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আপিল বিভাগের আদেশে আমরা স্তম্ভিত। এ কারণে আইনি লড়াইয়ে বেগম জিয়ার মুক্তির সম্ভাবনাও কম। আমরা রবিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছি। সামনে আরও বড় কর্মসূচি দেওয়ার ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করছি। প্রয়োজনে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা গণতন্ত্রের নেত্রীকে মুক্ত করব।’ খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখনো আইনি পথ সম্পূর্ণ রুদ্ধ হয়ে যায়নি। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা এখনো হাই কোর্টে পেইন্ডিং আছে। আমরা মামলার মেরিট নিয়েও লড়াই চালিয়ে যেতে পারি। আবার সর্বোচ্চ আদালত অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের কথা বলেছে। অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট নিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ অনেকেই বিদেশ যান। সেই যুক্তিতেও আমরা ম্যাডামের জন্য নতুন করে জামিন চাইতে পারি। তারপরও আমি বলব, এই মামলা রাজনৈতিক। তাই সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা জরুরি। এ জন্যই আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আমাদের রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতা জানান, বিএনপি ধাপে ধাপে ‘কঠোর’ কর্মসূচির দিকে যাবে। প্রয়োজনে খালেদা জিয়ার মুক্তিতে সরকার পতনের ‘একদফা’ আন্দোলনেও যেতে চান তারা। মহান বিজয় দিবসের পর রাজপথের শক্ত কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে পাশাপাশি শেষ ধাপ পর্যন্ত আইনি লড়াইও চলবে। নেতারা বলছেন, বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য যা করার তা রাজপথেই করতে হবে। আদালতের দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। সেখানে সরকার প্রভাব বিস্তার করছে। এ দিকে ‘শক্ত’ কর্মসূচি দিতে তৃণমূলের চাপ আছে। বিএনপির সিনিয়র নেতারাও এর পক্ষে। কিন্তু আন্দোলনের মূল হাতিয়ার যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল ব্যস্ত নিজেদের কমিটি নিয়ে। শিগগিরই এসবের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হলে রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচিও সফল হবে না। দীর্ঘদিন ধরে আংশিক কমিটি ঝুলিয়ে রাখারও কোনো কারণ নেই। দলের দায়িত্বশীল নেতাদের বিষয়টি সুরাহা করা উচিত বলেও মনে করেন তারা। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দল গোছানো একটি চলমান প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরও দুই একটি অঙ্গ সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি শিগগিরই হবে বলে আশা করছি। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচি আছে। এরপর আমরা ধীরে ধীরে রাজপথের শক্ত কর্মসূচির দিকে যাব।’ বেগম জিয়ার আইনজীবী ও দলটির আরেক ভাইস  চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সরকারের হস্তক্ষেপের কারণেই বেগম খালেদা জিয়া জামিন পাচ্ছেন না। তারপরও আমরা হাল ছাড়ছি না। আইনের এখনো বহুপথ খোলা রয়েছে। আমরা শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।’ গত বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেয়। এই মামলায় তার সাত বছরের সাজা হয়েছে। এ ছাড়া আরও একটি মামলা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তার ১০ বছরের সাজা হয়েছে। এ দুটি মামলা ছাড়া বিএনপির  চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে হওয়া অপর ৩৫টি মামলায় ইতিমধ্যে জামিন হয়েছে। বিএনপি নেতাদের আশা ছিল, চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন পেলে অন্য মামলাটিতে খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। জামিন আটকে যাওয়ায় এবং আদালত খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ  দেওয়ায় শিগগির দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির সম্ভাবনা দেখছেন না তারা।

নির্বাহী কমিটির বিশেষ সভা ডাকার চিন্তা : এ মুহূর্তে বিএনপির করণীয় নির্ধারণে তৃণমূল নেতাদের মতামত নিতে চায় বিএনপি। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একটি বিশেষ সভা ডাকারও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবে দলটি। তৃণমূল থেকেও এ দাবি উঠেছে। কারণ দীর্ঘ দিন ধরে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম-মহাসচিবসহ সম্পাদকম লীর সমন্বিত কোনো সভা হয়নি। শুধু যৌথ নেতৃত্বে নামে স্থায়ী কমিটির সপ্তাহে একদিন সভা করছে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে নতুন বছরের প্রথম দিকেই যে কোনো সময় নির্বাহী কমিটির সভা ডাকার চিন্তা করছেন নেতারা। সেটি সম্ভব না হলে চলতি মাসেই ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দেবেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। সেখান থেকে কঠোর কর্মসূচির বার্তা ও আগামী দিনে দলের কর্মকান্ডে র চিত্র উঠে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট নেতারা মনে করছেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির একটি বিশেষ সভা করা যায় কিনা তা বিবেচনা আমরা করছি। সেই সিদ্ধান্ত আমাদের রয়েছে।

সর্বশেষ খবর