শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
এই সময়ের রাজনীতি

দল ও সরকার আলাদা করা নিয়ে বিভ্রান্তি আওয়ামী লীগে

রফিকুল ইসলাম রনি

দল ও সরকার আলাদা করা নিয়ে বিভ্রান্তি আওয়ামী লীগে

দল ও সরকার আলাদা করা নিয়ে শীতল যুদ্ধ চলছে আওয়ামী লীগে। একটি পক্ষ এবারের সম্মেলনের ভিতর দিয়েই দলকে সরকার থেকে আলাদা করার পক্ষে। আরেক পক্ষ চাইছে দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সরকারে থাকতে। আওয়ামী লীগের সম্মেলনের শেষ মুহূর্তে বিভিন্ন কৌশলে দুই পক্ষই মাঠে আছে। এতে নেতা-কর্মীরা অনেকটা বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত সম্মেলনে কী হবে তার সবকিছু নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর।

সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে নেতাদের মধ্যে একটা শীতল যুদ্ধ চলছে। বিশেষ করে সরকার ও দলকে আলাদা করা নিয়ে দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে। যারা মন্ত্রিসভায় নেই অথবা এমপিও হতে পারেননি তারা চান এখন থেকেই দল ও সরকারকে আলাদা করতে হবে। আবার যারা মন্ত্রিসভা ও দলে আছেন তাদের একটি বড় অংশ চান দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সরকারে থাকা প্রয়োজন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, দলের একটা ইশতেহার, ভিশন-মিশন বাস্তবায়নের জন্য সরকারে থাকা প্রয়োজন। এ ছাড়া উন্নত বিশ্বেও এমন নজির খুব কম। ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি ও চীনে কমিউনিস্ট পার্টিতে এমন নজির নেই। সে কারণে সরকার ও দল আলাদা করার সময় এখনো আসেনি।

আবার যারা সরকারে নেই, তারা চান দলকে আরও সুসংগঠিত করতে এক ব্যক্তির এক পদ থাকা প্রয়োজন। এতে স্ব স্ব কাজে বেশি মনোযোগী হওয়া যায়। ফলে সব ক্ষেত্রেই গতি বাড়বে। জবাবদিহিতাও নিশ্চিত থাকবে। এক্ষেত্রে তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দলকে সংগঠিত করার জন্য মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার উদাহরণ টেনে আনছেন।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী শুক্রবার ও শনিবার অনুষ্ঠেয় দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে দলের নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখতে এবং নতুন করে পদে আসতে চলছে নানা রকম তৎপরতা। যারা দল ও সরকারে ভালো অবস্থানে রয়েছেন তারাও এখন নানা সমীকরণ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে সরকার ও দলকে আলাদা করা নিয়ে চলছে ঠান্ডা লড়াই। কেন্দ্রীয় কমিটির সব নেতাই এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। তারা ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী ও উত্তরার পাঁচতারকা হোটেলসহ বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করছেন।

এবার জাতীয় সম্মেলনে দল ও সরকারকে আলাদা করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এবার একই ব্যক্তি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন না। যারা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করবেন, তারা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারবেন না। যে কোনো একটিকে বেছে নিতে হবে।’

মন্ত্রিসভায় থাকা একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বিষয়টি এখনো আওয়ামী লীগের দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়নি। যেহেতু সরকার আওয়ামী লীগের, সে কারণে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা মন্ত্রিসভায় থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দল ও সরকারকে আলাদা করার বিষয়ে দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি। আমি মনে করি, দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরই সরকারে থাকা উচিত। তাহলে সরকারের ইশতেহার ও জনগণের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী কাজ করতে পারবে। এতে সরকার ও দল দুটোই শক্তিশালী হবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশই সরকার ও দল আলাদা করতে পারেনি। তারপরও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১০ বছরে মন্ত্রিসভায় অনেকটাই সরকার ও দলকে আলাদা করেছেন। ২০০৯ সাল ও ২০১৪ সালে যে পরিমাণে কেন্দ্রীয় নেতা মন্ত্রিসভায় ছিলেন, এখন সেটা নেই। তাই বলা যায়, আমরা তুলনামূলকভাবে সরকার ও দল আলাদা করেছি।’     

দলের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, টানা পৌনে ১১ বছর ক্ষমতায় থাকায় অনেক এলাকায় উপদলীয় কোন্দল-রেষারেষিতে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। দল সরকারের সঙ্গে মিশে গেছে। ফলে দিবসভিত্তিক কর্মসূচির বাইরে সাংগঠনিক তৎপরতা কম। বর্তমান মেয়াদে আওয়ামী লীগকে বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলা করতে না হলেও মাত্র দুটো জেলার সম্মেলন করতে সক্ষম হন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। গত ১২ নভেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ২৩ দিনে ২৮ জেলায় সম্মেলন করা হয়েছে।  বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির ৭৭ নেতার মধ্যে ১৪ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন। এবার সম্মেলনের মাধ্যমে সরকার ও দলকে আলাদা করা হলে আগামী বছরের প্রথম দিকেই মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের রদবদল হওয়ার জোর সম্ভাবনা আছে। যারা দলে সুযোগ পাবেন না তাদের মন্ত্রিসভায় নেওয়া হতে পারে। আবার মন্ত্রিসভার কাউকে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আনা হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর