মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
এই সময়ের রাজনীতি

অগোছালো দলের কারণে বিএনপির আন্দোলনে ভয়

মাহমুদ আজহার

অগোছালো দলের কারণে বিএনপির আন্দোলনে ভয়

অগোছালো দল নিয়ে আপাতত ‘শক্ত’ আন্দোলনে যাচ্ছে না বিএনপি। তাই সর্বোচ্চ আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নাকচ হয়ে যাওয়ার পরও ‘ধীরে চলো নীতি’ গ্রহণ করেছে দলটি। মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে এখনই সব শক্তি ‘ক্ষয়’ না করার পক্ষে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এ কারণে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দাবির মুখেও বিএনপি আপাতত সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ আর মানববন্ধনেই পথ চলতে চায় দলটি। সামনে আরও কিছু দিন দল গোছানোর কাজে ব্যস্ত থাকবে দলটি। পাশাপাশি রাজপথের ‘নরম’ কর্মসূচিও চলবে। বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, বিএনপির আন্দোলনের মূল হাতিয়ার যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো ঝুলে আছে। ঢাকা মহানগর বিএনপিও প্রস্তুত নয়। এই চার সংগঠন রাজপথে না থাকলে আন্দোলনে গতি আসবে না। দ্রুততার সঙ্গে অঙ্গ সংগঠনগুলোর কমিটি দিতে হবে। বিএনপির সাংগঠনিক ৮১টি জেলার মধ্যে প্রায় ৪০টির আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে। নির্ধারিত তিন মাসের সময়সীমার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি অধিকাংশ জেলার। এর মধ্যে বিএনপির সব সাংগঠনিক জেলাও গুছিয়ে ফেলতে হবে। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কমিটি হওয়ার পর ধাপে ধাপে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ানো হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আইনি লড়াইয়ে বেগম জিয়ার মুক্তির সম্ভাবনাও কম। গণতন্ত্রের নেত্রীর মুক্তি দাবিতে সারা দেশে আমাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সামনে আরও কিছু কর্মসূচি দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে আমরা বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে দুর্বার আন্দোলনের দিকে যাব। আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা গণতন্ত্রের নেত্রীকে মুক্ত করব।’

জানা যায়, বেগম জিয়ার জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার দিন রাতে সর্বশেষ বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আপাতত ‘শক্ত’ কোনো কর্মসূচিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সর্বশেষ আইনি লড়াই চালানোর পাশাপাশি রাজপথে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ কর্মসূচিতেই থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে এর মধ্যে দলকে গোছানোরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। নতুন বছরের প্রথম দিকে আরও কিছু দিন ‘ধীর’ গতিতে চলবে বিএনপি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দল গোছানো একটি চলমান প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরও দু-একটি অঙ্গ সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি শিগগিরই হবে বলে আশা করছি। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আমাদের কর্মসূচি চলছে। এরপর আরও কর্মসূচি আসবে। ধীরে ধীরে আমরা রাজপথের শক্ত কর্মসূচির দিকে যাব।’ জানা যায়, বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচিতে ধীরে চলা নীতিতে ক্ষুব্ধ মাঠের নেতা-কর্মীরা। তারা বলছেন, দেশে বর্তমানে ফ্যাসিবাদের শাসন চলছে। গণতন্ত্রের আড়ালে এরশাদকে হার মানিয়ে সর্বোচ্চ স্বৈরশাসন চলছে। গণতন্ত্রের নেত্রী জেলে। আইনের শাসন নেই। সরকার সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়ে একদলীয় শাসন চালাচ্ছে। এ অবস্থায় বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। জানা যায়, কেন্দ্রের চলমান কর্মকান্ডে র ওপর চরম ক্ষুব্ধ বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। বেগম খালেদা জিয়ার জন্য রাজপথের ‘শক্ত’ কর্মসূচি না থাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়ছে তৃণমূল। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বদলও চাচ্ছেন তারা। ৫০২ সদস্যের ‘ঢাউস’ নির্বাহী কমিটির ভূমিকা নিয়েও  তারা প্রশ্ন তুলেছেন। আবার নির্বাহী কমিটির সদস্যরা বলছেন, কেন্দ্র তাদের কোনো দায়িত্ব দিচ্ছে না। গুটিকয়েক নেতাই দলীয় কর্মকান্ডে  ব্যস্ত। তারাও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ডাকার পক্ষে। বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাদেরও গা-ছাড়া ভাব। কেউই জেলে যেতে চান না। বিশেষ করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল ব্যস্ত নিজেদের কমিটি নিয়ে। অন্য অঙ্গ সংগঠনগুলোও ধুঁকছে। স্বেচ্ছায় কারাবরণের ডাক দেওয়া নেতাদেরও খবর নেই। বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে বিএনপির সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দলের ভিতর থেকে খোদ নেতা-কর্মীরাই।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। রজনীগন্ধা ফুল নিয়ে বা রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলন কখনই সফল হবে না। আমাদের ‘ডু অর ডাই’ কর্মসূচিতে যেতে হবে। আর যোগ্য লোকদের হাতেই নেতৃত্ব থাকতে হবে। দিনে বিএনপি রাতে আওয়ামী লীগ করলে এদেশের গণতন্ত্রের নেত্রীর মুক্তি মিলবে না। আপস নয় সংগ্রামই আমাদের বেছে নিতে হবে।’ চট্টগ্রাম বিভাগের বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) মুক্তির জন্য আমাদের সামনে শুধু আন্দোলনের পথই খোলা আছে। আন্দোলন ছাড়া এই ফ্যাসিবাদ সরকারের কারাগার থেকে তিনি কখনই মুক্তি পাবেন না। তাই সিনিয়র নেতৃত্বকেও এ বিষয়টি ভাবতে হবে।

বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতা জানান, মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচির পর রাজপথের শক্ত কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে আইনি লড়াইও চলবে। নেতারা বলছেন, বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য যা করার তা রাজপথেই করতে হবে। কেবল আদালতের দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। সেখানে সরকার প্রভাব বিস্তার করছে। তবে সিনিয়র নেতারাও আক্ষেপ করে বলছেন, আগে মামলা হলে প্রথম আসামি হতো ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা। এখন মামলার প্রথম আসামি হয় বিএনপি চেয়ারপারসন ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল এখন ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে। এদের কমিটি না হলে আন্দোলনেও গতি আসবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর