মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
গাজীপুরে আগুন

কারখানা মালিকসহ ৫ জনের নামে মামলা ১০ লাশ হস্তান্তর

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

গাজীপুর সদর উপজেলার কেশরিতা এলাকায় রবিবার রাতে ফ্যান কারখানায় ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহত শ্রমিক গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মারতা গ্রামের রাশেদের বাবা মো. কামাল হোসেন বাদী হয়ে গতরাতে মামলাটি করেন। মামলায় কারখানার মালিক (এমডি) মো. জাহিদ হোসেন ঢালীকে প্রধান আসামি ও পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও দুজনকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে আগুনে নিহত ১০ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এসব লাশ হস্তান্তর করা হয়। এর আগে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।

যাদের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে তারা হলেন- গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নোয়াগাঁওয়ের লাল মিয়ার ছেলে পারভেজ, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার রাঘবপুরের সেলিম মিয়ার ছেলে তরিকুল ইসলাম, দিনাজপুরের কাহারুল উপজেলার বারপাটিয়া গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে লিমন ইসলাম, গাজীপুর সদর উপজেলার কালনী গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ ফয়সাল খান, কেশরিতা গ্রামের বীরবল চন্দ্র দাসের ছেলে উত্তম চন্দ্র দাস, শ্রীপুর উপজেলার মারতা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে শামীম ও কামাল হোসেনের ছেলে রাশেদ, রংপুরের হারাগাছ উপজেলার কাচুবকুলতলা গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে ফরিদুল ইসলাম, নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার চরকাশিনগরের মাজু মিয়ার ছেলে সজল মিয়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মোর্শেদ মিয়ার ছেলে ইউসুফ মিয়া। আগুনে পুড়ে যাওয়া লাশগুলোর অনেককে তৎক্ষণাৎ চেনা যাচ্ছিল না। ভবিষ্যতে নিয়ে যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে। এর আগে সকালে হাসপাতাল মর্গের সামনে স্বজনরা লাশের দাবি জানিয়ে পুলিশের কাছে তালিকা দেন। সকাল থেকেই হাসপাতাল মর্গের সামনে নিহতের স্বজনরা ভিড় জমান। অনেককে ছবি হাতে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহীনুর ইসলাম জানান, লাশের বিভিন্ন আলামত দেখে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পারসিয়া সুলতানা প্রিয়াংকার উপস্থিতিতে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দাফন ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য নিহতের প্রত্যেক পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার ও কারখানার তরফ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, কারখানার মালিক দেশে না থাকায় নিহতের পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আগে ঘোষিত শ্রম মন্ত্রণালয়ের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কেউ কথা বলেনি। এদিকে নিহত গাজীপুর সদর উপজেলার কেশরিতা গ্রামের উত্তম চন্দ্র দাসের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে অসুস্থ বাবা বীরবল চন্দ্র দাস, তার মা মিনা রানী দাস ও বোনের আহাজারিতে দর্শনার্থীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

একই অবস্থা সদর উপজেলার কালনী গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ ফয়সাল খান, নোয়াগাঁওয়ের লাল মিয়ার ছেলে পারভেজ, শ্রীপুর উপজেলার মারতা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে শামীম ও কামাল হোসেনের ছেলে রাশেদের বাড়িতেও। উল্লেখ্য, রবিবার সন্ধ্যা ৫টা ৫১ মিনিটে গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের কেশরিতা এলাকায় রোজা হাইটেকের লাক্সারি ফ্যান কারখানায় ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে দগ্ধ হয়ে ১০ শ্রমিক নিহত ও দুজন আহত হন।

সর্বশেষ খবর