শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

রোজগার্ডেন থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

জাহাঙ্গীর আলম

আবহমানকাল থেকে শোষিত-বঞ্চিত বাঙালি জাতির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক হয়ে আজ থেকে ৭০ বছর আগে এ অঞ্চলে অনন্য রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ জন্মলাভ করে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজগার্ডেনে দলটি প্রতিষ্ঠার সময় এর নাম ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ হলেও ’৫৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে একে অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল রূপ দেওয়া হয়। কালের পরিক্রমায় এই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বাংলা ও বাঙালি জাতির সব অর্জনের মূলে এই আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠা থেকে আমৃত্যু দলটির প্রাণভোমরা ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের প্রকাশ ও বিকাশ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে।

প্রতিষ্ঠার পর অনেক চড়াই-উতরাই পার করে আওয়ামী লীগ আজকের এ মহীরূহ অবস্থানে এসেছে। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় দলটি সবচেয়ে খারাপ সময় পার করেছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা  এবং ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের জাতীয় নির্বাচনের পর। এ ছাড়া ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তৎকালীন সামরিক সরকারের মদদপুষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দলীয় সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে দলটি আরেক দফা বিপর্যয়ে পড়ে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের অগ্রযাত্রা নতুন করে শুরু হয়।

মূলত ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারির কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রবাসে থেকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে দলের ’৭৫-পরবর্তী বিপর্যয় সামাল দেন। যে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা হয় বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, সেই বাংলাদেশ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে। রোজগার্ডেন থেকে আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত ৭০ বছরে দলটির হাজার নেতা-কর্মী স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে প্রাণ দিয়েছেন। সমকালীন ইতিহাসে এত ত্যাগ বিশ্বের আর কোনো রাজনৈতিক দলের নেই। এ কারণেই আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত কাউন্সিলে জীবনের শেষ রাজনৈতিক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম।’

৭০ বছরের আওয়ামী লীগে সভাপতি হিসেবে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তিনবার, মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ দুবার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুবার, এ এইচ এম কামারুজ্জামান একবার, আবদুল মালেক উকিল একবার এবং সর্বাধিক শেখ হাসিনা আটবার দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে শেখ হাসিনা টানা ৩৮ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শামসুল হক একবার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চারবার, তাজউদ্দীন আহমদ দুবার, জিল্লুর রহমান চারবার, আবদুর রাজ্জাক দুবার, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী একবার, আবদুল জলিল একবার, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দুবার এবং ওবায়দুল কাদের একবার দায়িত্ব পালন করেন।

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের ক্রমধারা : আজ শুক্রবার আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন যে দলটির অভ্যুদয় ঢাকার রোজগার্ডেনে, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এর ২১তম জাতীয় কাউন্সিল।

১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন ঢাকার কে এম দাশ লেনের কে এম বশির হুমায়ুনের বাসভবন ‘রোজগার্ডেনে’ (হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি বলে পরিচিত) মুসলিম লীগের খাজা নাজিমউদ্দিন ও অফিশিয়াল নেতৃত্বের বিরোধী গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল অংশটি গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করে। আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মী সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণ দেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। কর্মী সম্মেলনের প্রথম দিনেই একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দলÑ ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সম্মেলনে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং জেলে বন্দী শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্মসম্পাদক নির্বাচিত হন। কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন ইয়ার মোহাম্মদ খান। দলটির প্রথম কমিটি ছিল ৪০ সদস্যবিশিষ্ট। ১৯৫৩ সালের ৩, ৪ ও ৫ জুলাই ঢাকার মুকুল সিনেমা হলে আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিল হয়। এ কাউন্সিলে সভাপতি পদে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক পদে শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হন। একই বছরের ১৪ ও ১৫ নভেম্বর ময়মনসিংহে আওয়ামী?লীগের একটি কাউন্সিল?অনুষ্ঠিত হয়। এ কাউন্সিলে যুক্তফ্রন্টে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত ও ২১ দফা অনুমোদিত হয়। ১৯৫৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ অক্টোবর ঢাকার সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলে দ্বিতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ কাউন্সিলে পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন, জোটনিরপেক্ষ স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ এবং অবিলম্বে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নের ওপরে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। এ কাউন্সিলে আওয়ামী লীগকে একটি অসাম্প্রদায়িক দলে পরিণত করার লক্ষ্যে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ রাখা হয়। এ কাউন্সিলে সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক পদে শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালের ১৯ ও ২০ মে ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন হয়। কাউন্সিলে যথাসময়ে সাধারণ নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। ১৯৫৭ সালের ৭-৮ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের কাগমারীতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী ও ভাসানী অনুসারীদের মধ্যে মতপার্থক্য প্রকাশ্য বিরোধে পরিণত হয়। কাগমারী সম্মেলনের পর ’৫৭ সালের মার্চে মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান। অন্যদিকে ’৫৭ সালের ১৩ ও ১৪ জুন ঢাকার শাবিস্তান হলে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল আহ্বান করা হয়। এ কাউন্সিলে ভাসানীর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। দল থেকে পদত্যাগ করলেও কাউন্সিলে ভাসানীকেই সভাপতি করা হয়। এ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৬২ সালের ৪ অক্টোবর অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ‘ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’ বা এনডিএফ নামে একটি ঐক্যবদ্ধ জোট গড়ে তোলা হয়। সেনাশাসক আইয়ুব খান কনভেনশন মুসলিম লীগ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এ সময় জামায়াতে ইসলামী ও নিজামে ইসলাম পার্টি প্রভৃতি দলও পুনরুজ্জীবিত হয়। ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে সোহরাওয়ার্দীর আকস্মিক মৃত্যুর পর এনডিএফ কার্যকারিতা হারায়। ’৬৪ সালের ২৫ ও ২৬ জানুয়ারি দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা। এ সভায় দল পুনরুজ্জীবনের সিদ্ধান্ত হয়। পুনরুজ্জীবিত দলে মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ ও শেখ মুজিবুর রহমান যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। ’৬৪ সালের ৬, ৭ ও ৮ মার্চ ঢাকার হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। দলের সভাপতি মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশের সভাপতিত্বে কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান। এ কাউন্সিলে মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ ও শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ’৬৬ সালের ১৮, ১৯ ও ২০ মার্চ হোটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে পুস্তিকাকারে ছয় দফা বিতরণ করা হয়। কাউন্সিল ছয় দফা অনুমোদন করে। কাউন্সিলে মওলানা তর্কবাগীশ অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। ‘সভাপতির পদ পাওয়ার আশায়’ সালাম খান দলে থেকে যান এবং ছয় দফার পক্ষে বক্তৃতা দেন। পরে তিনি ছয় দফার বিরোধিতা করেন। এ কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সভাপতি হন শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তাজউদ্দীন আহমদ। অন্যদিকে ’৬৭ সালের ১৯ আগস্ট হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে পিডিএমে অংশগ্রহণ না করার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। ’৬৮ সালের ১৯ ও ২০ অক্টোবর হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি ও তাজউদ্দীন আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার আগে সর্বশেষ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ’৭০ সালের ৪ ও ৫ জুন। হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন তাজউদ্দীন আহমদ।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ’৭২ সালের ৭ ও ৮ এপ্রিল। কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্বাহী সংসদের অন্যান্য কর্মকর্তা ও সদস্য মনোনয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কাউন্সিলে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ১৬ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ কাউন্সিলের আগপর্যন্ত মেয়াদের জন্য ৪৪ সদস্যবিশিষ্ট সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা করেন। এতে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জিল্লুর রহমান। ’৭৪ সালের ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে সভাপতি ও জিল্লুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যগণ দলের কর্মকর্তা পদে থাকতে পারবেন না বলে বঙ্গবন্ধু সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

’৭৫-এ সপরিবারে জাতির পিতা ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর ’৭৬ সালের ২৮ জুলাই রাজনৈতিক দলবিধি জারি করা হয়। ৩০ জুলাই ঘরোয়া রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করার অনুমতি দেওয়া হলে ২৫ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতৃবৃন্দের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। বর্ধিত সভায় মহিউদ্দিন আহমদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাজেদা চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

’৭৭ সালের ৩ ও ৪ এপ্রিল হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণের কাউন্সিল প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান চৌধুরী দলের সভাপতি হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। কিন্তু দলের মূলধারার নেতা-কর্মীরা তার নেতৃত্ব মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলেন না। ৩ ও ৪ এপ্রিল হোটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলেও ঐকমত্যের ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। পরে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে আহ্বায়ক করে তাকে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ৪৪ সদস্যবিশিষ্ট সাংগঠনিক কমিটির নাম ঘোষণার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন ১৫ এপ্রিল সাংগঠনিক কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন। ’৭৮ সালের ৩, ৪ ও ৫ মার্চ তিন দিনব্যাপী আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে আবদুল মালেক উকিলকে সভাপতি ও আবদুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি করা হয়।

অন্যদিকে ’৭৮ সালে মিজান চৌধুরীর নেতৃত্বে পাল্টা আওয়ামী লীগ গঠনের চেষ্টা করা হয়। ৩, ৪ ও ৫ নভেম্বর মিজান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিভক্ত আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। একটি কমিটিও গঠন করা হয়। মিজান চৌধুরীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের অবৈধ কমিটি গঠনের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ’৭৮ সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে দলত্যাগীদের আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত ও ১১ দফা কর্মসূচি অনুমোদিত হয়।

’৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের তিন দিনব্যাপী দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে। আওয়ামী লীগের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এ কাউন্সিলে দলে নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ এবং দলকে অধিকতর শক্তিশালী ও সংহত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতে দলের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। আবদুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক পুনর্নির্বাচিত হন। ’৮৭ সালের ১, ২ ও ৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে সভানেত্রী ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কার্যনির্বাহী সংসদ গঠিত হয়। ’৯২ সালের ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে সভানেত্রী ও জিল্লুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ’৯৭ সালের ৬ ও ৭ মে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে সভানেত্রী ও জিল্লুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক পুনর্নির্বাচিত করা হয়। ২০০০ সালের ২৩ জুন পল্টন ময়দানে আওয়ামী লীগের বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের জন্য এক বছর সময় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়।

২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভানেত্রী পুনর্নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক হন মো. আবদুল জলিল। ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের অষ্টাদশ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে। এ কাউন্সিলে সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নির্বাচিত হন। ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের ১৯তম জাতীয় কাউন্সিলে সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পুনর্নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২০তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভানেত্রী ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আজ একই স্থানে হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সাফল্য : আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সাফল্য দলটির নেতৃত্বে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। এ ছাড়া দলটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের জন্মের পর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ভোট ও ভাতের অধিকারসহ সব প্রগতিশীল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এ দলের নেতৃত্বে আন্দোলনে সামরিক শাসক এইচ এম এরাশাদের পতন ঘটে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একদলীয় নির্বাচন প্রতিহতসহ দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সফলতা লাভ করে। অর্থনৈতিক সফলতার মধ্যে জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ১৫-এ উন্নীত হয় যা ২০০৬ সালে ছিল ৫ দশমিক ০৪। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৬ সালে ছিল তা ৫৪৩ ডলার। দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে ২০ ভাগে; যা ২০০৬ সালে ছিল ৪২ দশমিক ৫ ভাগ। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে হয়েছে ২২ হাজার ৫৬২ মেগাওয়াট। দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। ২০০৬ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট আর বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় ছিল মাত্র ৪৭ ভাগ মানুষ। এ ছাড়া স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগব্যবস্থাসহ নারীর উন্নয়নেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর