সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঢাকা সিটির ভোট ৩০ জানুয়ারি

মনোনয়নপত্র জমা ৩১ ডিসেম্বর, যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি, প্রত্যাহার ৯ জানুয়ারি, ভোট হবে ইভিএমে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুই মেয়র, বিএনপির উত্তরে তাবিথ দক্ষিণে ইশরাক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা সিটির ভোট ৩০ জানুয়ারি

আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন রেখে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এবার দুই সিটিতে সম্পূর্ণ ভোট গ্রহণ হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ জানুয়ারি। গতকাল নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন  প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি জানান, দুই সিটিতে ৩০ জানুয়ারি ভোট হবে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। দুই সিটিতে সম্পূর্ণ ভোটই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) গ্রহণ করা হবে। এই নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন।

জানা গেছে, দুই সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান দুই মেয়র। তারা হলেন উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন। আর বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন দক্ষিণ সিটিতে ইশরাক হোসেন এবং উত্তর সিটিতে তাবিথ আউয়াল। মেয়র পদে প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে ভোট করতে পারবেন, তবে সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ভোট হবে নির্দলীয় প্রতীকে।

আগামী বছর মে মাসের প্রথমার্ধের মধ্যে এই দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা ছিল ইসির। এ ছাড়া এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ভোটের তারিখ নির্ধারণে গতকাল দুপুর আড়াইটায় নির্বাচন ভবনে সভায় বসে নির্বাচন কমিশন। সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীরকে নিয়ে মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন সিইসি নূরুল হুদা।

তফসিল ঘোষণা করায় আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে (মঙ্গলবার) আগাম প্রচারণামূলক সব পোস্টার-বিলবোর্ড নিজ দায়িত্বে নামিয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে ইসি। এ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইসির দুই যুগ্ম-সচিবকে। উত্তরে দায়িত্ব পালন করবেন আবুল কাশেম, দক্ষিণের দায়িত্ব পেয়েছেন আবদুল বাতেন।

মেয়র পদে পুরনোদের ওপর আস্থা রাখছে আওয়ামী লীগ : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি ভোটে পুরনো দুই প্রার্থীতেই আস্থা রাখতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দুই মেয়রের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতেই তাদের ওপর আস্থা রাখা হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারণী ফোরামের বেশ কয়েকজন নেতা এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া কাউন্সিলর পদে আসছে অনেক নতুন মুখ। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনোকা-সহ নানা অভিযোগে বিতর্কিত হয়েছেন অনেকেই। সে কারণে অধিকাংশ ওয়ার্ডেই আসবে নতুন মুখ। দুই সিটিতে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মনোনয়নের আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। আগামী বুধবার থেকে শুক্রবার বিকাল ৫টার মধ্যে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এবার বিএনপি ভোটে অংশ নেবে এবং শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে। সে কারণে শক্তিশালী প্রার্থীকেই দলীয় মনোনয়ন দিতে চান দলের হাইকমান্ড। দক্ষিণে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক মেয়রের ছেলে এবং পুরান ঢাকার বাসিন্দা হওয়ায় সেই দিক বিবেচনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেবে। সে ক্ষেত্রে দক্ষিণের বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনেই আস্থা রাখতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দুজনই পুরান ঢাকার বাসিন্দা ও সাবেক দুই মেয়রের ছেলে হওয়ায় লড়াইটা জমজমাট হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে উত্তরের বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম উপনির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর তার দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রমাণে খুব কম সময় পেয়েছেন। সে কারণে দ্বিতীয় মেয়াদে আতিকুলেই আস্থা রাখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা মেয়র পদে দলীয় আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছি। দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে দুই সিটিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। যার জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে, দক্ষ সংগঠক, তাকেই বেছে নেব।’

বিএনপির প্রার্থী দক্ষিণে ইশরাক, উত্তরে তাবিথ : ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত বিএনপি। দুই সিটিতেই প্রার্থীও মোটামুটি নির্ধারণ করাই আছে দলটির। ইতিমধ্যে তারা কাজও শুরু করেছেন। তারা হলেন ঢাকা উত্তর সিটিতে তাবিথ আউয়াল। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ এর আগের নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন। সে নির্বাচনে জয়ী মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে অংশ নেননি তাবিথ। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে এবার বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পড়াশোনা শেষ করে আসার পর গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাবার আসন ঢাকা-৬ থেকে মনোনয়ন চেয়েও পাননি ইশরাক। চলতি বছর জানুয়ারিতে লন্ডন সফরকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ‘সবুজ সংকেত’ দেন। সেই থেকেই তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা যায়। দলীয় সিদ্ধান্তে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন না এলে ঢাকা সিটির উত্তরে তাবিথ আউয়াল আর দক্ষিণে ইশরাক হোসেনই হচ্ছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী।

সিটি নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক ও নিরপেক্ষ হবে : সিইসি

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন দেবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, ভোটাররা ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরবেন। এই নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে। দুই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় তিনি এসব কথা বলেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী থাকবে না। পুলিশ, বিজিবি থাকবে। তবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন পরিচালনার জন্য প্রতি কেন্দ্রে দুজন করে সেনা কর্মকর্তা থাকবেন। তিনি বলেন, বর্তমান মেয়ররা নির্বাচন করতে চাইলে তাদের পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। আর সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি নির্ধারণ করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা আদালতে গেলে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হবে কিনা- জানতে চাইলে সিইসি বলেন, সিটি করপোরেশনে কোন ব্যক্তি কখন নির্বাচিত হলো তা নিয়ে কিছু বলা নেই আইনে। নির্বাচনের মেয়াদের কথা আইনে বলা আছে। তাই আইনি জটিলতা হবে না। নতুন ভোটার হবে ৩১ জানুয়ারির পর। তাই নতুন ভোটাররাও কোনো আইনি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারবেন না।

এক প্রশ্নের জবাবে কে এম নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচন কমিশন কোন দিন একটি দলের জেতার জন্য কাজ করে? নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে। দলের সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য পদ পূরণের জন্য ২০২১ সাল পর্যন্ত সময় ঠিক করেছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে সিইসি বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী এটি আইনসিদ্ধ হয়নি। আমাদের আইন অনুযায়ী, দলগুলোকে ২০২০ সালের মধ্যে সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য পদ পূরণ করতে হবে। দল কীভাবে কী করছে, সেটা তাদের ব্যাপার। কোনো দল যদি শর্ত পূরণ করতে না পারে, তখন আমরা বিবেচনা করব। এ ব্যাপারে অগ্রিম কিছু বলা যাবে না।’

এক নজরে দুই সিটির তথ্য : উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪ ওয়ার্ডে ভোটার ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন। দক্ষিণ সিটির ৭৫টি ওয়ার্ডে ভোটার ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ জন। দুই সিটিতে সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্র আড়াই হাজারের বেশি, ভোটকক্ষ প্রায় ১৩ হাজার। প্রতি ভোট কেন্দ্রে একজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, প্রতি ভোটকক্ষে একজন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও দুজন পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকবেন। উত্তরে সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮। ভোট কেন্দ্র ১৩৪৯, ভোটকক্ষ ৭৫১৬। দক্ষিণে সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫। ভোট কেন্দ্র ১১২৪, ভোটকক্ষ ৫৯৯৮। পাঁচ বছর আগে ঢাকার দুই সিটির সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনও হয়েছিল ২৮ এপ্রিল। এবার চট্টগ্রাম সিটিতে ভোট হবে পরে। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল সেই নির্বাচনের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম সভা হয় ওই বছরের ১৪ মে, দক্ষিণ সিটিতে ১৭ মে ও চট্টগ্রাম সিটিতে প্রথম সভা হয় একই বছরের ৬ আগস্ট। সে হিসাবে ঢাকা উত্তরে বর্তমানে দায়িত্বশীলদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ১৩ মে, আর দক্ষিণে একই বছরের ১৬ মে পর্যন্ত। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের জুলাইয়ে।

জামানত ও ভোটার তালিকার সিডি : ভোটারসংখ্যা অনুযায়ী দক্ষিণের প্রত্যেক মেয়র প্রার্থীকে ১ লাখ টাকা জামানত রাখতে হবে। ২০ লাখের বেশি ভোটার হলে ১ লাখ টাকার জামানতের বিধান রয়েছে। এবার প্রার্থীদের ভোটার তালিকার সিডি কেনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতি ওয়ার্ডের সিডির জন্য প্রার্থীদের গুনতে হবে ৫০০ টাকা। অন্যদিকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলরদের তিনটি ওয়ার্ডের সিডি কিনতে হবে ১৫০০ টাকা দিয়ে। সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের জামানত ভোটার অনুপাতে ১০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীকে ১০ হাজার টাকার জামানতের বিধান রয়েছে।

স্বপদে থেকে ভোট নয় : দুই সিটির বর্তমান মেয়ররা ভোটে অংশ নিতে চাইলে তাদের পদত্যাগ করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। সিটি করপোরেশন আইনে বলা হয়েছে, মেয়র পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে এ ব্যক্তির নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে হলে তাকে পদত্যাগ করে প্রার্থী হতে হবে। কাউন্সিলর পদধারীরা লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত না হওয়ায় তারা পদত্যাগ না করে প্রার্থী হতে বাধা নেই। তবে প্যানেল মেয়র প্রার্থী হতে চাইলে তাকেও ছাড়তে হবে কাউন্সিলরের পদ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর