সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ফজলে হাসান আবেদ চিরনিদ্রায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ফজলে হাসান আবেদ চিরনিদ্রায়

ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদকে ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানালেন সর্বস্তরের মানুষ। গতকাল ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে সকাল সাড়ে ১০টা  থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তার মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয়। এ সময় প্রিয় ‘আবেদ ভাই’র মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে কনকনে শীত উপেক্ষা করে মানুষের ঢল নামে। বেলা সাড়ে ১২টায় সেখানে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। আর্মি স্টেডিয়ামে আনার আগে সকাল ৭টায় মরদেহবাহী কফিন মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানান আত্মীয়স্বজন ও সহকর্মীরা। সকাল ১০টা ২৩ মিনিটে তার মরদেহবাহী গাড়িটি  আর্মি স্টেডিয়ামে পৌঁছায়। এর আগেই স্টেডিয়াম লোকেলোকারণ্য হয়ে যায়। শ্রদ্ধা জানাতে আসেন রাজনীতিক, অর্থনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী, বিভিন্ন সংগঠন থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ। শ্রদ্ধা জানানো শেষে শোকবইয়ে স্যার আবেদকে নিয়ে শোকগাথা লিখেন তারা।

প্রথমে স্যার আবেদের মরদেহে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তার সামরিক সচিবের একান্ত সচিব মেজর আশিকুর রহমান। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শ্রদ্ধা জানান তার উপ-সামরিক সচিব কর্নেল মো. সাইফ উল্লাহ। তারপর যথাক্রমে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাহাউদ্দিন নাছিমসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ও যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জ্যেষ্ঠ নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ১১টা ১৯ মিনিটে মরহুমের মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে এসে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘ফজলে হাসান আবেদ এমন একজন ব্যক্তি যিনি প্রতিটা বিষয়ের গভীরে গেছেন এবং ব্যাপ্তি সৃষ্টি করেছেন। এটা করতে গিয়ে তাকে অনেক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করতে হয়েছে এবং তার সব প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য সিস্টেমও তৈরি করে গেছেন। তার মৃত্যু এক বড় শূন্যতা তৈরি করবে।’ ড. ইউনূস পরে মরহুমের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান।

স্যার আবেদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ইমান আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী মো. শাহাবুদ্দিন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান ও মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগ নেতা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বিএনপি নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ম. তামিম, শিল্পী হাশেম খান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রধান শিপা হাফিজা, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, চ্যানেল আই পরিবারের পক্ষে পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, সংবাদ সম্পাদক আলতামাশ কবীর, নিউএজের প্রকাশক শহীদুল্লাহ খান বাদল, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পক্ষে লুভা নাহিদ চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারা যাকের ও জিয়াউদ্দিন তারিক আলী প্রমুখ।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত, স্পেনের রাষ্ট্রদূত, অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার মরহুমের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়া মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি, জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয়, ইউএসএইড, একশন এইড, বিকাশ, কারিতাস, কেয়ার, প্রশিকা, ওয়ার্ল্ড ভিশন, ইউসেপ বাংলাদেশ, উবিনীগ, নাগরিক উদ্যোগ, আশা, ভার্ক, অক্সফাম, প্রিপ ট্রাস্ট, দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, সেফার ওয়ার্ল্ড, ফেডারেশন অব এনজিওস ইন বাংলাদেশ, বাংলা একাডেমি, বেঙ্গল ইনস্টিটিউট, ব্র্যাকের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয় ফজলে হাসান আবেদের প্রতি। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দুপুর ১২টা ৪৬ মিনিটে ওই স্টেডিয়ামেই স্যার আবেদের নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজা নামাজে ইমামতি করেন গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা আহসানউল্লাহ। জানাজার আগে ফজলে হাসান আবেদের ছেলে শামেরান আবেদ বলেন, ‘সবাই আমার বাবার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নিয়ে আমাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ। বাবা সারাজীবন সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন। আপনারা তার জন্য দোয়া করবেন। জানাজার পর স্যার আবেদের মরদেহ বনানী কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরেকটি জানাজা শেষে দুপুর আড়াইটার দিকে তার দাফন সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশের উন্নয়নের পালাবদলের অন্যতম পথদ্রষ্টা ও দেশ-বিদেশে অসংখ্য সফল প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বদানকারী স্যার ফজলে হাসান আবেদ ৮৩ বছর বয়সে গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। মস্তিষ্কে টিউমারে আক্রান্ত হয়ে ২৮ নভেম্বর থেকে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর