সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কেউই চায় না চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ

বিরাজ করছে ক্ষোভ-অসন্তোষ, পদ ছাড়তে চান না বিদায়ী সচিবরা

নিজামুল হক বিপুল

কেউই চায় না চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ

সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। মুষ্টিমেয় কর্মকর্তা নানান কৌশলে এ পদ আঁকড়ে থাকতে মরিয়া। ফলে যোগ্য, দক্ষ ও মেধাবী অপেক্ষমাণ কর্মকর্তারা সুযোগই পাচ্ছেন না পদোন্নতির। এতে প্রশাসনের কাজে গতি কমে যাচ্ছে। হতাশা, ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের মাঝে। সরকারের সাবেক একাধিক আমলা মনে করেন, যথেচ্ছভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার ফলে সরকারের ক্ষতি হচ্ছে। কাজে আগ্রহ-উৎসাহ হারাচ্ছেন প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খানের মতে, ‘মনে হয় সচিব পদগুলো দায়িত্বের চেয়ে অন্য কোনো কারণে লোভনীয় হয়ে গেছে। তাই কেউ এই পদ ছেড়ে যেতে চান না।’

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ১০ শতাংশ কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারে সরকার। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কোনো কর্মকর্তাকে চুুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় যখন তার বিকল্প কোনো কর্মকর্তা পাওয়া যায় না। বিশেষ করে টেকনিক্যাল পদগুলোতে, যেমন অডিটর জেনারেল, বিজ্ঞানী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরÑ এ ধরনের পদগুলোতে। এ  ছাড়া সরকার যদি মনে করে কোনো কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেবে, সে ক্ষেত্রে দিতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপক হারে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বিদায়ী সচিবরা। চলতি বছর এবং আগামী বছরের প্রথম দুই মাসে অন্তত ২৯ জন সচিবের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। যাদের এখন অবসর পূর্বকালীন ছুটি বা পিআরএল-এ যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার কথা। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে এখন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তদবির করছেন। কোনো কোনো সচিব একেবারে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে প্রশাসনের নিয়মিত কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিসিএস প্রশাসনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তারাই এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে। বেশ কয়েকজন সাবেক সচিব ও বর্তমান সচিব এবং প্রশাসনের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বহুবার রেজুলেশন গ্রহণ করে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে লিখিতভাবে দাবি জানানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভায় সিদ্ধান্ত হয় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিরুদ্ধে। সেই সিদ্ধান্তের কথা সরকারপ্রধানসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জনানো হয়। কিন্তু দুই বছর পেরিয়ে গেলেও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। বরং ইদানীং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রতি বিদায়ী সচিব বা সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের আগ্রহ যেন বেড়েই চলেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া এবং যারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন তাদের আবারও একই পদে থাকার যে প্রবণতা দিন দিন যেভাবে বেড়ে চলছে তাতে প্রশাসনে এক ধরনের হতাশা, ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাদের কারণে সচিব পদে যাওয়ার যোগ্য কর্মকর্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। কাজের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সচিব না হয়েই অনেকে অবসরে চলে যাচ্ছেন। তাদের মতে, এতে সরকারের লাভ হচ্ছে না, উল্টো ক্ষতি হচ্ছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি সব সময় বলে এসেছি, এখানে কারও প্রয়োজনীয়তা যদি অপরিহার্য মনে করে সরকার তাহলে সেক্ষেত্রে শুধু ওই কর্মকর্তাকেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, প্রত্যেক কর্মকর্তারই স্বপ্ন থাকে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে অর্থাৎ সচিব পদে চাকরি করার। এদের মধ্যে যারা যোগ্য, দক্ষ, মেধাবী, তাদের যোগ্যতাকে সরকারের কাজে লাগানো উচিত। তবে কাউকে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। এতে ওই কর্মকর্তা দেশের প্রতি তার অবদান রাখার সুযোগ থেকে যেমন বঞ্চিত হন, পাশাপাশি সরকার এবং দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং একজন যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তার সরকার এবং দেশের প্রতি অবদান রাখার যে সুযোগ আছে সেই সুযোগ তাকে দিতে হবে। তিনি মনে করেন, এটা যদি না করা হয় তাহলে এসব কর্মকর্তা তাদের প্রাপ্য পদ থেকে বঞ্চিত হয়েই অবসর গ্রহণ করবেন। এতে করে নিচের দিকের কর্মকর্তাদের মধ্যেও ক্ষোভ-অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। ফলে প্রশাসনের কাজের উৎসাহ এবং গতি কমে যায়। সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিরুদ্ধে বহুবার সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ আর বন্ধ হচ্ছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর