সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভিপি নূরের ওপর আবার হামলা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

আবারও হামলার শিকার হয়েছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর ও তার সংগঠন ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ’-এর নেতারা। গতকাল ডাকসু ভবনে ভিপির কক্ষে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের হামলার শিকার হন তারা।

এতে ‘সাধারণ ছাত্র পরিষদ’-এর আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হোসেন, রাশেদ হাসান, মশিউর রহমানসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন  সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১২টায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। তারা মিছিল করে ডাকসু ভবনের দিকে আসে। এ সময় ডাকসু ভবনের সামনে ভিপি নুরুল ও তার সহযোগীদের সঙ্গে তাদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। তারপর ভিপি ও অন্যরা ভিপির কক্ষে চলে যান। এর মধ্যেই সেখানে আসেন ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন এবং তাদের অনুসারীরা। দুটি সংগঠনের কর্মীরা তখন ডাকসু ভবনের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এ সময় নূরের নির্দেশে ভবনের কর্মীরা মূল গেটে তালা লাগিয়ে দেন। পরে গেট খুলে ডাকসু ভবনের নূরের কক্ষে ঢোকেন সনজিত, সাদ্দাম, ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কর্মীরা। এ সময় নূরের কক্ষে ঢাকার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন। কক্ষে ঢুকে ‘নূর কেন বহিরাগত নিয়ে ডাকসুতে এসেছেন’ তা জানতে চান সাদ্দাম হোসেন। নিরাপত্তার জন্য তাদের এনেছেন বলে উত্তর দেন ভিপি নূর। এর মধ্যেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নূরের সহযোগীদের মারধর শুরু করেন। পরে দুই নেতা বের হয়ে যাওয়ার পর কক্ষের দরজা বন্ধ করে মারধর করতে থাকেন। আত্মরক্ষার জন্য কক্ষের ভিতরেই অবস্থান করতে থাকেন নূর ও তার সহযোগীরা। পরে প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর এসে তাদের উদ্ধার করে সেখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে যান। মারধরের সময় তুহিন ফারাবী ও এ টি এম সোহেল নামের দুজনকে ডাকসু ভবনের ছাদ থেকে নিচে ফেলা হয়। এর মধ্যে তুহিন ফারাবীর অবস্থা সংকটাপন্ন। বিকালে হামলার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মিছিল করে সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ ও প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা-কর্মীরা। পরে সন্ধ্যায় ঢামেক হাসপাতালের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানান। দায়িত্বে ব্যর্থতার দায়ে প্রক্টরের পদত্যাগও দাবি করেন তিনি। হামলার প্রতিবাদে আজ সারা দেশে দুুপুর ১২টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।

নূরকে দেখতে হাসপাতালে নানক : ডাকসু ভবনে হামলায় আহত ভিপি নুরুল হক নূরকে হাসপাতালে দেখে এসে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। গত রাতে নানকসহ আওয়ামী লীগের নেতারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন । রাত ৮টার দিকে নূরকে দেখতে ঢাকা মেডিকেলে যান আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নানক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তাদের সঙ্গে ছিলেন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। নানকরা হাসপাতালে ঢোকার সময় পরিষদের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায়। নানকদের পথ আটকে বিচারের দাবি জানান তারা।

 নাছিম বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা নূরসহ আহতদের দেখতে এসেছি।  তোমাদের ওপর এই অমানবিকভাবে কারা হামলা চালিয়েছে, তাদের  খোঁজ নিয়ে চিহ্নিত করা হবে।

সেখান থেকে বেরিয়ে নানক সাংবাদিকদের বলেন,  শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা এখানে এসেছি। আমরা শুনেছিলাম, তবে ঘটনাটা এত বর্বর ও পৈশাচিক হয়েছে, সেটা আমরা বুঝতে পারিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা, শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত করা সরকার গ্রহণ করবে না। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কোনো ব্যাপার না। শিক্ষার পরিবেশ রক্ষার চুয়োজনে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

হামলার নিন্দা: ডাকসু ভিপির ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। পৃথক বিবৃতিতে তারা নুরের উপর হামলার সাথে জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান। গতকাল বিকালে নূরকে দেখতে আসেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর