বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডাকসু নিষ্ঠুরতার ভিডিও ফুটেজের সন্ধানে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে হামলার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজের সন্ধানে মাঠে নেমেছে পুলিশ। তবে ডাকসুর সেই সিসিটিভি ফুটেজের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, ডাকসুতে হামলার ঘটনায় সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা বালক উচ্চবিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে গতকাল সকালে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের হামলার ঘটনায় করা মামলা ডিবির কাছে হস্তান্তর করে শাহবাগ থানা পুলিশ। ডাকসুতে হামলায় নিষ্ঠুরতার ভিডিও ফুটেজটি কে বা কারা সরিয়েছে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও এর কোনো উত্তর নেই। ভিপি নুরুল হক ও তার সহযোগীদের ওপর হামলার পুরো ঘটনার ভিডিওচিত্র ওই ফুটেজে ছিল বলে জানা গেছে। গতকাল সকালে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডাকসুতে হামলার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ খোঁজা হচ্ছে। সাক্ষ্য-প্রমাণ পেলেই মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে। ডাকসুর হামলা ঘটনায় যেহেতু মামলা হয়েছে আর সিসিটিভির যে ফুটেজে তথ্য-প্রমাণ আছে, তাই এটা খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাব। তবে মারমুখীভাবে থাকা আর মারপিটে অংশগ্রহণ করা আলাদা বিষয়। তদন্ত চলছে। তদন্তে যে-ই দোষী প্রমাণিত হবে আমরা ব্যবস্থা নেব।’ হামলার ঘটনায় রিমান্ডে থাকা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের তিন নেতাকে গতকাল জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মঙ্গলবার তাদের তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেয় আদালত। এরা হলেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, দফতর সম্পাদক মেহেদি হাসান এবং এই অংশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত। এর আগে হামলার দুই দিনের মাথায় সোমবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করে। পুলিশের মামলার পরই ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শাহবাগ থানায় একটি অভিযোগ দেন। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ ৩৭ জন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান জানান, ডাকসু ভিপির লিখিত অভিযোগটি তারা পেয়েছেন। মূল মামলার সঙ্গে সেটি যুক্ত করে গতকাল আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করা আইনজীবী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, মূল মামলার সঙ্গে যুক্ত হওয়া অভিযোগের অভিযুক্তরাও আসামি হিসেবে গণ্য হবেন। তাদের বিষয়েও পুলিশ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে। গতকাল দুপুর ২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান জানান, ডাকসুতে হামলাকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ডাকসু ভিপি আহত থাকায় তার মামলা করতে একটু দেরি হয়েছে। তার আগেই পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। আর পুলিশ মামলা করছে এ বিষয়টাও তাদের জানানো হয়নি। পুলিশ আসলে সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে ধোঁয়াশার সম্পর্ক রেখেছে। সঞ্জিত আর সাদ্দামকে রক্ষার জন্যই মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি-সেক্রেটারিকে মূল আসামি করে পুলিশ আগেই মামলা করেছে। হামলায় আহত তুহিন ফারাবীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে এসডিওতে নেওয়া হয়েছে। মাঝেমধ্যে জ্ঞান এলেও আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন সোহেল। এ ছাড়া নুর বমি করছেন। শরীরের বাঁ পাশে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। আরিফুল ইসলামও বমি করছেন এবং নাজমুল ইসলামের হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ফারুক হাসানের কানে আঘাত করা হয়েছে। কানে শুনতে পাচ্ছে না এখনো। নুরের ছোট ভাই আমিনুর জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন মাঝেমধ্যে। তিনিও রক্তবমি করছেন। সবার অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করা হয়েছে প্রক্টরের মদদে দাবি করে রাশেদ বলেন, ‘অনেক কাকুতি-মিনতি করার পরও তিনি আমাদের কথা শোনেননি। আমাদের গালিগালাজ করেছেন। এই হামলার সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সিসিটিভি ফুটেজ তার মদদেই গায়েব করা হয়েছে। সিটিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করলে হামলার মূল আসামিদের সম্পর্কে জানা যাবে।’ সোহেলের মাথায় মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে অস্ত্রোপচার করা হয়। সফলভাবেই তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেডিকেল বোর্ডের প্রধান। বোর্ডপ্রধান অধ্যাপক ডা. রাজিউল হক জানান, সোহেলের মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাতেই তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর তাকে পর্যবেক্ষণের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো আছে। হামলার ঘটনায় ডাকসু ভবনের তৃতীয় তলা থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র ও কোটা আন্দোলনের যুগ্ম-আহ্বায়ক এ পি এম সোহেলকে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়। এর পর থেকেই তাকে ঢামেক কেবিনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। ভিপি নুরুল হক ও তার সহযোগীদের ওপর হামলা হয় রবিবার দুপুরে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বেলা ১২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি শেষ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা যখন মধুর ক্যান্টিনে যাচ্ছিলেন, তখনই হামলার সূত্রপাত হয়।

ডাকসু সদস্যের নিন্দা : ভিপি নুরের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত সদস্য তানভীর হাসান সৈকত। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানান তিনি। বিজ্ঞপ্তিতে তিনি ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম, ডাকসুর স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরীকে নির্দোষ দাবি করেন। একই সঙ্গে মামলা থেকে তাদের নাম প্রত্যাহারের দাবি জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর