বুধবার, ১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
নতুন বছরে দুই দলের যত চ্যালেঞ্জ

ভোট তৃণমূল পুনর্গঠন মুজিববর্ষ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

ভোট তৃণমূল পুনর্গঠন মুজিববর্ষ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে আওয়ামী লীগ

আগামী ৩ জানুয়ারি যৌথসভার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী সংসদ। ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী জয়ী করতে মাঠে থাকতে হবে নেতা-কর্মীকে। এ বছরের ১৭ মার্চ শুরু হয়ে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বজনীন করে মুজিববর্ষ পালন করাই আওয়ামী লীগের অন্যতম লক্ষ্য। একই সঙ্গে মেয়াদ উত্তীর্ণ অনেক জেলা-মহানগর ও উপজেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূলকে পুনর্গঠনে ব্যস্ত সময় পার করতে হবে দলটিকে। এ বছরই চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন। এ ছাড়াও স্থানীয় সরকারের বেশ কিছু নির্বাচন আওয়ামী লীগের সামনে। গত বছরের ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন হয়। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে টানা নবমবারের মতো সভানেত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাধারণ সম্পাদক পদে দ্বিতীয় মেয়াদে এসেছেন ওবায়দুল কাদের। ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মধ্যে ৭৪ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ৩ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবে নতুন কমিটি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন বছরের শুরু থেকেই নতুন কমিটিকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। ঢাকার দুই সিটিতে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বজনীন করে ‘মুজিববর্ষ পালন’ করতে হবে। দলের অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করা, জেলা-উপজেলায় বিতর্কমুক্ত নেতৃত্ব গঠন, তৃণমূল পর্যায়ে সৃষ্ট এমপিবলয় ভাঙা অন্যতম চ্যালেঞ্জ। ঢাকার পর চট্টগ্রাম সিটিতে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করা। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী জোটের আন্দোলন মোকাবিলাসহ শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিটি ভোটের চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমাদের জন্য নতুন বছর শুরু হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে করতে চাই। এ ছাড়াও আমাদের দলের সভানেত্রীর অনেক ভিশন ও মিশন আছে সেগুলো বাস্তবায়ন করে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিতে দল হিসেবে সরকারকে সহায়তা করতে চাই।’  দলীয় সূত্রমতে, চলতি বছরের শুরুতেই ভোট নিয়ে কাজ করবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের বেশ কিছু কাজ বিগত বছরেই শেষ করে রেখেছে দলটি। ইতিমধ্যে দুই সিটিতে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। উত্তরের মেয়র পদে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলামকে পুনরায় দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আর দক্ষিণে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনের পরিবর্তে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে নৌকার প্রার্থী করা হয়েছে। একই সঙ্গে কাউন্সিলর পদেও দল সমর্থিত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে দলটি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির অংশগ্রহণের এই নির্বাচনকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে আওয়ামী লীগ। ইভিএমের এই ভোটে জিততেই মেয়র পদে ‘ক্লিন ইমেজের’ প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এখন ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার প্রস্তুতি চলছে দলের অভ্যন্তরে। ঘরোয়া বৈঠক, কর্মিসভার আয়োজন করা হচ্ছে। নগর আওয়ামী লীগের থানা ওয়ার্ডে দেওয়া হচ্ছে দিকনির্দেশনা। দলীয় মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী ইশতেহার যেন সাধারণ মানুষকে আকর্ষণ করতে পারে সে বিষয়টিও তদারকি করা হবে দল থেকে। সূত্রমতে, সারা দেশে আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার আগে এর মধ্যে মাত্র একটি জেলার সম্মেলন হয়েছিল। তবে, সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর গত তিন মাসে আরও ২৯টি জেলার সম্মেলন হয়েছে। বাকিগুলো এ বছরেই করার মিশন আছে আওয়ামী লীগের। সে কাজেও ব্যস্ত সময় পার করতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্তদের। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নতুন বছরে ভোট দিয়ে শুরু হবে পথচলা। মুজিববর্ষ পালনে সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করতে চাই। একই সঙ্গে আমাদের মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংগঠন গোছানোর কাজ চলমান প্রক্রিয়া। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত ও দায়িত্ব বণ্টন হওয়ার পরেই আমরা আবার তৃণমূল গোছানোর কাজে নেমে পড়ব। মুজিববর্ষে আমরা জাতির পিতা কীভাবে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন সেগুলো তৃণমূলে তুলে ধরব।’  বঙ্গবন্ধুর জন্মগ্রহণের শততম বছর পূর্ণ হবে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শেখ রেহানাসহ ১০২ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৬১ সদস্যের একটি বাস্তবায়ন কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আগামী ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস থেকে জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনে ক্ষণগণনা শুরু হবে।

সর্বশেষ খবর