বুধবার, ১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
নতুন বছরে দুই দলের যত চ্যালেঞ্জ

দল গোছানো খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ভোটের অধিকারে গুরুত্ব বিএনপির

মাহমুদ আজহার

দল গোছানো খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ভোটের অধিকারে গুরুত্ব বিএনপির

নতুন বছরেও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে দীর্ঘ এক যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। এরই মধ্যে দলের প্রধান খালেদা জিয়া দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে অন্তরীণ। তিনি এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দ প্রাপ্ত হয়ে লন্ডনে অবস্থান করছেন। এ অবস্থায় দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলন জোরদার করাই বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপি নেতারা বলছেন, জনগণের ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হওয়ারও বিকল্প নেই। জানা যায়, লন্ডন থেকে তারেক রহমান দল গোছানোর কাজ করছেন। বিএনপির ৮১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৪০টিতে আহ্বায়ক কমিটিও দিয়েছেন। ছাত্রদলসহ কয়েকটি অঙ্গ সহযোগী সংগঠনেও নতুন নেতৃত্ব নিয়ে এসেছেন। দল পুরোপুরি গোছানোও সম্ভব হয়নি। কিন্তু যতটুকুই গোছানো হয়েছে তাতেও বিএনপি কার্যকর বা শক্তিশালী হতে পারেনি। বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে গত দুই বছর ধরে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথেও ‘নরম’ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গেল বছরটি ছিল গণতন্ত্র হত্যার বছর। মানুষের অধিকারকে কেড়ে নেওয়ার বছর। ফ্যাসিবাদের জয়ের বছর। আসছে নতুন বছরে আমরা সবসময়ই নতুন করে ভাবতে চাই। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে চাই। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চাই। বেগম জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে চাই। এ জন্য সব দলমতনির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, বিএনপির সামনে প্রধানত দুটি চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো- খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনা। দ্বিতীয়টি হলো- আন্দোলনের মাধ্যমে ভোটারবিহীন সরকারকে অপসারণ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিএনপির সামনে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে অন্যমত প্রধান হলো, দলের ভিতরে ঐক্য ও পরস্পরের প্রতি আস্থা বিশ্বাস। সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে দুই শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতিতে সামনে দলের ভিতরে-বাইরে ঐক্য ধরে রাখাও বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। মূল দল ও অঙ্গ-সংগঠনগুলো পুরোপুরি গোছানোও জরুরি। বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথের আন্দোলন কর্মসূচি জোরদার করা। জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করা। আসন্ন সিটি করপোরেশন ভোটসহ সামনের স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে দলকে জয়ী করাও বিএনপির সামনে চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। এ প্রসঙ্গে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, শুধু বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে নয় জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিএনপিকে আন্দোলনে যেতে হবে। এখন যে জুটমিলের শ্রমিকরা অনশন করছেন বিএনপির উচিত হবে তাদের সঙ্গে একদিন অনশন করা। দ্বিতীয়ত দলে শিগগিরই একটি কাউন্সিল ডেকে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসা। অপেক্ষাকৃত তরুণ ও রাজপথের সাহসীদের দিয়ে স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে বিএনপির সর্বস্তরের কমিটি করা উচিত। আরেকটি হলো, বিএনপি নেতাদের দম্ভ-অহমিকা ছেড়ে সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া। সব সময়ই দেশের জনগণের পাশে থাকা। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ভিতরে সিনিয়র নেতৃত্বে চরম মতবিরোধ চলছে। বিশেষ করে লন্ডনের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সঙ্গে ঢাকার সিনিয়র নেতাদের অনেকেই একমত হতে পারছেন না। তারপরও তা সবাইকে মেনে নিতে হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, বিএনপিতে এখন একক সিদ্ধান্তই অনেকাংশে গুরুত্ব পাচ্ছে। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পাশ কাটিয়েই অনেক সিদ্ধান্ত হচ্ছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্তই জানে না স্থায়ী কমিটি। কেউ কেউ রাজনীতি ছেড়ে অবসরের চিন্তাভাবনাও করছেন।

‘গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার’ আশায় বিএনপি : আওয়ামী লীগের শাসনে দেশে ‘গণতন্ত্র নেই’ দাবি করে নতুন বছরে অধিকার ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা বিএনপির। ইংরেজি নতুন বছর ২০২০ সাল উপলক্ষে গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই প্রত্যাশা করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, গণবিরোধী শক্তি জনগণের সব অধিকারকে বন্দী করে রেখেছে। এমতাবস্থায় সব গণতান্ত্রিক শক্তির মিলিত সংগ্রামে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। খালেদা জিয়ার ?মুক্তি ও হৃত গণতন্ত্রকে উদ্ধার করার সংগ্রামে সবাইকে নতুনভাবে ব্রতী হতে হবে। আমাদের কর্মে নতুন বছরটি যাতে সাফল্য ও সমৃদ্ধির বছরে পরিণত হয় সেই লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে। বিবৃতিতে বিএনপি পুরনো বছরের ব্যর্থতা, গ্লানি, হতাশাকে  ঝেড়ে ফেলে নব উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করা হয়।

সর্বশেষ খবর